অবিশ্বাস্য প্রতিশ্রুতি!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে পঞ্চরাত্রি অতিবাহিত হলে ও ১৯৫২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত (জরুরি অবস্থার সূত্রে মাঝের কয়েক বছর বাদ দিলে)কার্যত নিরঙ্কুশভাবে দেশ শাসনকারী কংগ্রেস এখনও চূড়ান্তভাবে লোকসভা নির্বাচনি ইস্তাহার প্রকাশ করতে ব্যর্থ।মঙ্গলবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন,এদিন তাদের দলীয় কার্যকরী সমিতির বৈঠকে ইস্তাহারের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।দ্রুত তা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।খসড়া ইস্তাহারে কংগ্রেস যেসব প্রতিশ্রুতির ঢাক পিটিয়েছে,তাকে এক কথায় ‘অবিশ্বাস্য’ বলাই বিধেয়। এবার পঞ্চাশ পৃষ্ঠার এই ইস্তাহারকে কংগ্রেসের তরফে বলা হচ্ছে ‘ন্যায়পত্র’।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল ‘ন্যায়’ বা ‘ন্যূনতম আয় যোজনা’। ক্ষমতায় এলে গরিবতম পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা ছিল।তাতে যে লাভ হয়নি,লোকসভার সদস্য বিচারে পঞ্চাশের নিচে অবনমন তার তাজা দৃষ্টান্ত। তবে এবার আর একটি নয়, পাঁচটি ‘ন্যায়’ নিয়ে ভোটে নামছে কংগ্রেস।কিষান ন্যায়, যুবা ন্যায়, নারী ন্যায়, শ্রমিক ন্যায় এবং ভাগিদারী ন্যায় (তথা জাতগণনা)।বস্তুত, সংশিলষ্ট পাঁচ শ্রেণীর জন্য রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা থেকে এই পাঁচটি ন্যায় ঘোষণা করেছেন।মোদি গ্যারান্টি’র প্রতিস্পর্থী হিসাবে কংগ্রেসের এই পাঁচ ন্যায়-এর আওতায় পাঁচটি করে, মোট পঁচিশটি ‘গ্যারান্টি’ রয়েছে। যেমন যুবকদের জন্য ত্রিশ লক্ষ সরকারী পদ পূরণ, চাষিদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি ‘গ্যারান্টি’, অনগ্রসরদের জন্য আর্থ সামাজিক জাতগণনার ‘গ্যারান্টি’ ইত্যাদি।এই পঁচিশটি ‘গ্যারান্টি’ই লোকসভা ভোটে তাদের প্রধান অস্ত্র হতে চলেছে, দাবি করেছেন খাড়গে।
এহ বাহ্য প্রভু কহে আগে কহ আর।কংগ্রেসের নির্বাচনি ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতির তালিকায় আছে দেশ জুড়ে সরকারী কর্মচারীদের জন্য ‘এক পদ এক পেনশন নীতি’ প্রণয়ন,করকাঠামো পুনর্বিন্যাস করে জিএসটিতে আমূল সংস্কার, অর্থনীতির উন্নত ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সম্প্রীতি নিশ্চিত করা, সীমান্তে বিশেষ করে চিনের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা,সর্বোপরি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ রুখতে আইন সংশোধন।
বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে বেছে বেছে ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনেকদিনের অভিযোগ। এবার নির্বাচনি বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন,সিবিআই-ইডি-আয়কর দপ্তরের ভয় দেখিয়ে বিজেপি কর্পোরেট সংস্থার থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নাদায় করেছে। ইস্তাহারে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি থাকছে, আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে একগুচ্ছ নতন ধারা যোগ করে মোদি সরকার যেভাবে একতরফা বিরোধী নেতা থেকে শুরু করে শিল্পপতিদের জেলে ঢোকানোর ভয় দেখিয়ে চলেছে, তারা ক্ষমতায় এলে এই সব বিতর্কিত ধারা তুলে দেওয়া হবে।দল ক্ষমতায় এলে ঘৃণা-ভাষণ, জাতি-বিদ্বেষ সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে আনা হবে বিশেষ শাস্তিমূলক বিধান। প্রতিশ্রুতির তালিকায় আছে, ক্ষমতায় এলে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফেরত, লাদাখের জন্য বিশেষ মর্যাদা,অগ্নিবীর প্রকল্প বাতিল করা, সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ও তাদের মূল স্রোতে তুলে আনার জন্য সাচার কমিটির অধরা সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ কার্যকর করা এবং সমবায় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
এখানেই প্রশ্ন। কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে না বুঝেই কি ইস্তাহারে এমন অবিশ্বাস্য প্রতিশ্রুতির বন্যা?ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেল, কংগ্রেসের এখনও প্রার্থী তালিকাই চূড়ান্ত হলো না।ইন্ডিয়া জোটের সাবেক শরিকদের মধ্যে যে কতিপয় দল এখনও অবশিষ্ট আছে,তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতাও হলো না।দলের নেতা রাহুল গান্ধী ন্যায় যাত্রার সমাপ্তি সংবাদে দেশবাসী জানতে পারলেন, এতদিন ধরে তা চলছিল। মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে ন্যায় যাত্রার সমাপ্তি উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলির জনাকয়েক নেতার সঙ্গে ছবি তুলেই দাবি করেছেন যে, জোট সফল।প্রকৃতপক্ষে পরাজিতের আগেই পরাজয়ের এমন উদাহরণ কংগ্রেসের ইতিহাসে ইতিপূর্বে ঘটেনি।
কংগ্রেসের এমন সঙ্গীন দশার হেতু কী,তার কারণ অনুসন্ধান করতে হলে রাহুল গান্ধীর দিকে আঙুল তুলতেই হবে। গোটা দল তার মুখাপেক্ষী, অথচ একটি জাতীয় দলের নেতৃত্বের সংজ্ঞা তার কাছে এখনও স্পষ্ট নয়।সুতরাং এই কংগ্রেসের কাছে লম্বা-চওড়া প্রতিশ্রুতি কি আদৌ কোনও অর্থ বহন করে?