সম্পর্কের ভিত!!

 সম্পর্কের ভিত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভূটানের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে মাত্র এ দিন দশেক আগেই এসেছিলেন ভারত সফরে। ১৪-১৫ মার্চ দিল্লী সহ দেশের বিভিন্ন শহর ঘুরে থিম্পু ফিরে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভূটান সফরে আমন্ত্রণ জানিয়ে গিয়েছিলেন ভূটানের প্রধানমন্ত্রী। কূটনৈতিক শিষ্ঠাচারের বিভিন্ন পর্বের মধ্যে এই ধরনের সফরে এসে রাষ্ট্রপ্রধানকে নিমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা অন্যতম একটি বিষয়।সেদিক থেকে মোদিকে ভূটান সফরে যাওয়ার জন্য তোবগের আমন্ত্রণ এবং আমন্ত্রণ স্বীকার করে মোদির ভূটান সফর করার ঘটনা মোদির আর ১০ টা বিদেশ সফরের থেকে আলাদা নয়।কিন্তু দেশে যখন লোকসভার নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোঘণা হয়ে গেছে।ইতিমধ্যে প্রথম দফার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেছে।গোটা দেশ ও রাজনৈতিক নেতারা যখন পুরোদমেই নির্বাচনি ব্যস্তততায়- আপাদমস্তক ডুবে আছেন-ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্রুত নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক ভূটান সফরের ঘটনা মোটেই এতটা সাদামাটা নিরীহ ব্যাপার নয়।বরং এই সফরের তাৎপর্য অন্য অনেক বিদেশ সফরের থেকে অনেক বেশি ও তাৎপর্যপূর্ণ।এটা হয়তো ঘটনা, মোদির শাসনকালে নেইবার হুড ফাস্ট’ অর্থাৎ প্রতিবেশীই প্রথম অগ্রাধিকার- এই নিয়ম বা সূত্র মেনে প্রতিবেশীদের প্রতি নজর,সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক,সহযোগিতা-সমঝোতা এবং সামগ্রিক সহাবস্থান মেনে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সামষ্টিক অগ্রগতি এবং শক্তিশালী করে তাদেরকে স্বনির্ভরতা আইনে এবং উন্নত জাতি হিসাবে বিকশিত হতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু নির্বাচণি ব্যস্ততা, ভোট প্রচার এবং সার্বিক দায়িত্ব ও কাজকর্মকে এক পাশে সরিয়ে পড়শি দেশের ডাকে সপ্তাহের মধ্যেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার এত তোড়জোড়,
নিঃসন্দেহে বেনজির ঘটনা। আসলে নির্বাচনের শত ব্যস্ততার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদির ২দিনের ভূটান সফরের প্রধান কারণ ছিল হিমালয়ের পাদদেশে আশ্রিত শান্ত- সৌম্য পাহাড়ি প্রতিবেশীকে এই বার্তাটুকু দেওয়া যে, ভারত শুধু ভূটানের প্রতিবেশীই নয়, ভারত ভূটানের আত্মার আত্মীয়।সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের আমন্ত্রণ পেতেই তড়িঘড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষার সফরের প্রস্তুতি নিতে এতটুকু কালক্ষেপ করেননি।লক্ষ্যণীয় হলো ভূটান সফরকালে মোদির বক্তব্য থেকে এই ভাবনাটি প্রকাশ্যে এসেছে। মোদি বলেছেন,ভূটানের জনগণ বিশ্বাস করে যে ভারত তাদের পরিবার।আমাদের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব অটুট। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা অটুটু এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের আস্থাও অটুটদুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন যাই হোক না কেন, মোদ্দা কথা হল,আঞ্চলিক ভারসাম্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করাই ছিল এবারের সফরের মূল উদ্দেশ্যে।কারণ ভারতের প্রতিবেশী হিসাবে শ্রীলঙ্কার মতোই ভূটানের পূর্বতন সরকারও ছিলো চিনা ঘনিষ্ট। যদিও সীমান্ত বিরোধের কারণে চিন- ভূটানের মধ্যে এখনো সরকারীভাবে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক কোনও সম্পর্ক নেই।কিছু ভুটানের পূর্বতন সরকার চিনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে দুদেশের সীমান্ত মিটিয়ে নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিল।যদিও ভূটানে নির্বাচনের কারণে সেই প্রক্রিয়া পুরোদস্তুর শেষ হয়নি।তবে ঘটনা চক্রে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চিন ঘনিষ্ট ভূটানের সরকার নির্বাচনে হেরে যায় এবং লক্ষ্যণীয়ভাবেই জানুয়ারী মাসে ভূটানে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই প্রথম বিদেশ সফরে ভুটানের নব নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ভারত সফরে আসেন।এই অবস্থায় চিন ও ভূটানের মধ্যে সীমান্ত বোঝাপড়া হয়ে গেলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।তাই ভূটানের নতুন সরকার চিনের দিকে ঝুঁকে পরার আগেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কটা আরও ঝালিয়ে নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তড়িঘড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনি ব্যস্ততার মধ্যেও ভুটান সফরের সিদ্ধান্ত নেন। মনে রাখতে হবে, ডোকলাম মালভূমির তিক্ত অভিজ্ঞতা ভারত- ভূটান সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সুরক্ষা জটিলতার প্রশ্নে আরও অনেক বেশি সচেতন ও সাবধানী হবে।তাই ভারত ভূটানের অতীতের ঘনিষ্ঠতা ও অন্যন্য বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সহযোগিতার নতুন মাত্রায় স্থায়ী বাস্তবতা দিতে এই সফরের কোনও জুড়ি মেলা ভার।রূপান্তরমুখী অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের নিবিড় প্রচেষ্টা যে অব্যাহত থাকবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূটান সফর সেই দিক থেকে স্মরণীয় এক শুভেচ্ছা বার্তা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.