ইঙ্গিতপূর্ণ নির্বাচন!!
ঘটনা এক :দিল্লীর তথা দেশের এলিট বিশ্ববিদ্যালয় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ নামে যা সমধিক পরিচিত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাম সমর্থিত প্যানেল সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।পরাজিত হয়েছে বিজেপি সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপির প্রার্থীরা।
ঘটনা দুই: ত্রিপুরার ঐতিহ্যমণ্ডিত বারের নির্বাচনেও জয়ী বাম কংগ্রেস সমর্থিত আইনজীবীরা।পরাজিত বিজেপি সমর্থিত আইনজীবীদের প্যানেল।আপাত দৃষ্টিতে সুদূর দিল্লীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবিভিপির পরাজয় কিংবা আগরতলা বারের নির্বাচনে বিজেপির আইনজীবীদের প্যানেল পরাজিত হবার বিষয়ে অনৈক বৈসাদৃশ্য থাকলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের শাসক দলের সমর্থিত প্যানেল পরাজিত হয়েছে।মিল এখানেই।
যে শাসকদলকে মনে হচ্ছে তারা বুঝি অপরাজেয়। তাহলে কি বলতে হচ্ছে মোদি ম্যাজিক ফিকে হচ্ছে।দেশের শাসক বিজেপিকে আজকের দিনে ভোটে লড়তে হবে মোদির মুখ হয়ে।মোদি মানেই বিজেপি,বিজেপি মানেই মোদি।অনেকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল যেন হয়ে গেছে বিজেপি। বিজেপি যেমন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে একেবারে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় তেমনি সব জায়গাতেই দল ব্র্যান্ড মোদিকে ব্যবহার করে।মোদি এখন বিজেপির কাছে লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে গেছে।সেই অবস্থায় দিল্লীর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবিভিপির পরাজয় অনেকটা বার্তাই বয়ে আনে।দিল্লীর জেএনইউ এদেশে অনেক কৃতী রাজনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে।বিশেষ করে বাম রাজনীতির আঁতুড়ঘর এই জেএনইউ।এক সময় এই জেএনইউ-কে ঘিরে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’এর নাড়া উঠেছিলো।কম হাঙ্গামা হয়নি এদেশে এনিয়ে।কিন্তু বিজেপি শাসনেও জেএনইউ-কে দমানো যাচ্ছে না।এত নেতৃত্ব, ক্ষমতার আস্ফালন, অর্থ, পেশিশক্তির ব্যবহার- জেএনইউ-কে দমানো যাচ্ছে না শাসকের পক্ষে।লোকসভা ভোটের মুখে জেএনইউর প্রভাব নি:সন্দেহে পড়বে বলে বিরোধীদের অভিমত।এই মুহূর্তে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে দিল্লী উত্তাল।এর উপর জেএনইউতে বিজেপিবিরোধী
শিবিরের জয় নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী বাম নেতৃত্ব।ইন্ডিয়া জোটও এ নিয়ে বেজায় উৎসাহিত।
অন্যদিকে,সদ্যসমাপ্ত ত্রিপুরার আগরতলায় আইনজীবীদের নির্বাচন নিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল।বিজেপির পক্ষে হাওয়া তুলতে ছুটে গিয়েছিলেন অনেক তাবড় নেতৃত্ব।তাও বিজেপিকে জেতানো গেল না।সভাপতি, সম্পাদক থেকে শুরু করে সদস্যদের প্যানেলে বাম কংগ্রেসের জোটের আইনজীবীরাই জয়ী হয়েছেন।অথচ এমনটা হবার কথা ছিল না।একগাদা আইনজীবীকে ধারে এনে বিজেপিতে জয়েন করানো হয়েছিল।কিন্তু তবুও ভারী ব্যবধানে বিজেপির প্যানেল হেরেছে।এটা কী প্রমাণ করে? আইনজীবীদের সাধারণত সুশীল সমাজ বলা হয়। যাদের চোখ কান সবসময় খোলা থাকে।সময়ের সাথে তারা চলেন। ফলে তারা সব বোঝেন। তাই আইনজীবীদের নির্বাচনে এত প্রচার, প্রসার সত্ত্বেও বাম কংগ্রেসের প্যানেল ভারী ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল।তাহলে কি ধারে নেওয়া যায় শাসকদলের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বুদ্ধিজীবীরা, সমাজের সুশীল সমাজ?না হলে বিজেপি এত বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়েও কেন আগরতলা বারের নির্বাচনে জয়ী হতে পারলো না? তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। সময়ই হয়তো এর জবাব দেবে। তাহলে কি এটা ধরে নিতে হয় যে, ধীরে ধীরে বিজেপির ধার এবং ভার কমছে দেশে?এই দুইটি ঘটনা আপাত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ২ টি ঘটনা মনে হলেও আগামীদিনে এই দুই ঘটনা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সময়ই এর জবাব দেবে- এটা আগাম হলফ করে বলে রাখা যায়।