ভ্রষ্টাচারী কারে কয়!

 ভ্রষ্টাচারী কারে কয়!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচন প্রারম্ভের উনিশ দিন আগে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারকে উপলক্ষ করে নতুন উদ্যমে দিল্লীর রামলীলা ময়দানে ইন্ডিয়া মঞ্চের বিরোধী নেতারা একত্রিত হলেন।আবার একই দিনে মিরাট থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনি প্রচার হয়ে উঠল কার্যত রামলীলার জবাবি ভাষণের মঞ্চ। বিরোধীদের ঐক্যের ছবিটাকে কটাক্ষ করে সেখানে তিনি বলেছেন,যত ভ্রষ্টাচারী এককাট্টা হয়েছে।আরও বলেছেন,এবারের লোকসভা নির্বাচন দুর্নীতির পৃষ্টপোষকদের সঙ্গে দুর্নীর্তির শত্রুদের লড়াই।দাবি করেছেন,দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি লড়ছেন বলেই অনেক নেতার ঠাঁই হয়েছে গরাদের পিছনে।প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন,প্রতিটি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।যে যত বড় দুর্নীতিবাজ হোক না কেন,অ্যাকশন হবেই।যারা দেশকে লুট করেছে, তাদের সেটা দেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে।এটাই – মোদির গ্যারান্টি।


বিজেপির তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী -লোকসভা ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার উত্তরপ্রদেশের মিরাট থেকেই শুরু করবেন।কেন মিরাট, কারণটি বুঝতে খুব অসুবিধা হয় না।মিরাট- সহ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয় বলে চিহ্নিত বৃহত্তর অঞ্চলে গেরুয়া শিবির এখনও তুলনায় দুর্বল।আটের দশকে দূরদর্শনে প্রদর্শিত রামনন্দ সাগরের রামায়ণ সিরিয়ালে রামের চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে বিখ্যাত অরুণ গোভিলকে মিরাটে প্রার্থী করেছে বিজেপি।জাঠ বলয়ের যে সব এলাকায় কেন্দ্রবিরোধী কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল,মিরাট তার অন্যতম।জাঠ বলয়ের কৃষকদের মন পেতেই মিরাট জেলার নূরপুর গ্রামের সন্তান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে।এহ বাহ্য, জাঠ বলয়ের মন পেতে চরণ সিংয়ের পৌত্র জয়ন্ত চৌধুরী ও তার পিতা অজিত সিং প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় লোকদলকে ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে ভাঙিয়ে এনডিও শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে।
দল ভাঙানো রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য রণকৌশল।সেই ১৫৭৮ সালে লেখা ব্রিটিশ কবি জন লিলির অমোঘ পংক্তি অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার।অর্থাৎ প্রেমে আর রণে কিছুই অন্যায় নয়।নির্বাচন একার্থে যুদ্ধই, ফলে সেই যুদ্ধ-জয়ের নিমিত্তে কিছুই অন্যায্য নয়।কিন্তু খটকা হল ভ্রষ্টাচারী বা দুর্নীতিবাজ শব্দটি নিয়ে। কারা দুর্নীতিবাজ, আর কারা নিষ্কলুষ, অধুনা ভারতবর্ষে সবটাই রাজনীতির নিক্তিতে পরিমেয়।গতকাল পর্যন্ত যে ভ্রষ্টাচারী মানুষটি বিরোধী শিবিরে ছিলেন,জার্সি পাল্টে শাসক শিবিরে নাম লেখাতেই তিনি হলেন অপাপবিদ্ধ। সর্বশেষ সর্বশেষ দৃষ্টান্ত প্রফুল্ল প্যাটেল।এই পদ্ধতি প্রকৃতই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই,নাকি নিজেদের জয়ের প্রত্যয়ী করে তুলতে সিবিআই বা ইডির ভীতি প্রদর্শন করিয়ে বিরোধীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখার কৌশল, তা সময় বলবে।
গোটা বিরোধী শিবিরকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে কালিমালিপ্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী।এদিকে সাম্প্রতিক-অতীতের তথ্য বলছে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিরোধী শিবিরের পঞ্চাশ জনেরও বেশি নেতা সিবিআই ও ইডির মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন।সিবিআইয়ের ন’টি মামলায় অভিযুক্ত বল্লারীর খনি মাফিয়ার শিরোমণি হিসাবে পরিচিত, দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ খনি
কেলেঙ্কারির মাথা বলে যাকে চার্জশিটে অভিহিত করেছিল সিবিআই,সেই জনার্দন রেড্ডিকে দলে ফেরাতে বিজেপি দ্বিতীয় বার ভাবেনি।
ইউপিএ আমলের আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মহারাষ্ট্রে প্রাক্তন কংগ্রেসী মন্ত্রী অশোক চহ্বাণ থেকে শুরু করে কয়লা খনি বন্টন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ধনকুবের নবীন জিন্দাল এক দীর্ঘ তালিকা।নবীন এবার কুরুক্ষেত্রের পদ্মপ্রার্থী। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে কেন্দ্রটি
থেকেই দশ বছর তিনি কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন। এভাবেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান লিজ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
প্রফুল্ল প্যাটেল এনডিএ জোটে শামিল হতেই সিবিআইয়ের তরফে পেলেন ক্লিনচিট তকমা।প্রাক্তন এনসিপি নেতা ছগন ভুজওয়াল,আর্থিক দুর্নীতিতে ইডি যাকে গ্রেপ্তার করে গারদে ভরেছিল, তাকেও
এনডিএতে সাদরে বরণ করা হয়েছে।মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি কৃপা শঙ্কর সিং,বিজেপি একদা যাকে ডাকু কৃপা শঙ্কর বলে অভিহিত করেছিল,যে কৃপা শঙ্কর আরএসএস-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।এবং মুম্বাইয়ের ২৬/১১ জঙ্গি হামলায় জড়িত বলে কুৎসিত আক্রমণ করেছিলেন,তিনিও এবার উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের পদ্মপ্রার্থী।
এক্ষণে জরুরি প্রশ্ন,ভ্রষ্টাচারী কারে কয়!পূর্বজরা বলে গেছেন, অধিকন্তু ন দোষায়। অর্থাৎ, অতিরিক্ত হলেও ক্ষতি নেই, যদি তা সৎকার্য হয়। তবে এই উক্তির একটি বিরুদ্ধ প্রবচনও আছে- সর্বম অত্যন্তম গহির্তম।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.