কচ্চতিভু বিতর্ক!!

 কচ্চতিভু বিতর্ক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভোটের দুয়ারে দাঁড়িয়ে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন একটি ঘটনা টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী।সহসা শিরোনামে নিয়ে এসেছেন কচ্চতিভূ দ্বীপ বিতর্ক।সেই কচ্চতিভু দ্বীপ,ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে ১.৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের যে ভূখণ্ডটি ১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কাকে অর্পণ করেছিল ভারত।সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।এই দ্বীপ হস্তান্তর প্রসঙ্গে তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিআই) একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে।প্রধানমন্ত্রী মোদি বিষয়টিকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে নতুন অস্ত্রে আক্রমণ শাণিয়েছেন।এক্স হ্যান্ডলে ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,এ থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেস কী নিষ্ঠুরভাবে কচ্চতিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়েছিল।দেশের সবাই এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো।কংগ্রেসকে বিশ্বাস করা যায় না।৭৫ বছর ধরে ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতা এভাবেই তারা নষ্ট করছে। এখনও করছে।

অথচ সত্য এই যে,১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে শ্রীলঙ্কার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক কচ্চতিভু দ্বীপের অধিকার চেয়ে আবেদন করেছিলেন।নেহরু-কন্যা বন্দরনায়েকের সেই আবেদন মেনে নেন। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির বিনিময়ে কচ্চতিভূ পায় শ্রীলঙ্কা। সেই ঘটনার একচল্লিশ বছর পরে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পরে শ্রীলঙ্কা চুক্তির প্রশংসা করেছিলেন মোদি।সেই সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির সময় তিনি বলেছিলেন,প্রতিবেশী দুই দেশের এই চুক্তি শুধু জমির পুনর্বিন্যাস নয়,এতে দুই দেশের হৃদয়েরও মিলন ঘটতে চলেছে। সেই চুক্তির বলে বন্ধুত্বের প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে মোদি সরকার ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে, বিনিময়ে গ্রহণ করে বাংলাদেশের মাত্র ৫৫টি ছিটমহল।
আদতে কচ্চতিভূ দ্বীপ প্রসঙ্গটি রাজনীতির বিতর্কে টেনে আনার পেছনে যে তামিলনাড়ুর বর্তমান রাজনৈতিক চলচিত্র কাজ করেছে,তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।তামিলনাডুতে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে বিজেপি যে কচ্চতিভূ হস্তান্তরকে বৃহৎ ক্যানভাসে মেলে ধরে যুগপৎ কংগ্রেস ও ডিএমকে-কে দেশদ্রোহী প্রতিপন্ন করতে চাইবে তা বলাই বাহুল্য।কর্ণাটক হাতছাড়া হওয়ার পর দাক্ষিণাত্যের বিশেষত তামিলনাড়ুকে অনেকদিন ধরেই পাখির চোখ করেছেন মোদি।৩৯ আসন বিশিষ্ট সে রাজ্যে বিজেপি এখন কার্যত একাকী।রাজ্যের শাসকদল ডিএমকে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান শক্তি।কংগ্রেস ডিএমকের জোটসঙ্গী।রাজ্য রাজনীতিতে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ এমজিআর প্রতিষ্ঠিত জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে একদা বিজেপির পাশে থাকলেও আজ নেই।খোলা চোখে দেখলে তামিলনাডুতে বিজেপির পক্ষে লোকসভায় বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই,বরং এই একক লড়াইয়ে ক্ষতির অবকাশ কম। অন্যদিকে,একাকী লড়াই করতে পারলে হিন্দুত্ববাদী অবস্থানটিকে অনেক জোরের সঙ্গে সামনে রাখা যায় এবং এতদ্বারা দ্রাবিড়ভূমির হৃদয়পুরে সেই অবস্থানের শক্তি ও সম্ভাবনা যাচাই করা যায়,যা পরবর্তী অধ্যায়ে রাজ্য রাজনীতিতে কাজে লাগবে। সঙ্ঘ পরিবার থেকে উঠে এসে অনেকদিন অবধি উত্তর ভারতের তথা হিন্দি বলয়ের দল হিসাবে পরিচিত বিজেপি গত তিন দশক ধরে সর্বভারতীয় হয়ে উঠার যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে,মোদির বিপুল নির্বাচনি সাফল্যের পরেও, সেই প্রকল্প বহুলাংশেই অসম্পূর্ণ। এখনও উত্তর (এবং পশ্চিম) ভারতই শাসকদলের প্রধান ঘাঁটি। এই সত্যও অনস্বীকার্য যে হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানের রাজনীতি এবং তার ধারক মানসিকতাটি পূর্ব এব দক্ষিণ ভারতেও ইতিমধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই দিগ্বিজয়ের পথে বড় রাজ্য হিসাবে তামিলনাডু এযাবৎ একটি বড় প্রতিরোধী শক্তি হিসাবে সক্রিয় এবং অনেকাংশে সফল।তার পেছনে দ্রাবিড় সমাজ-মানস সাংস্কৃতিক স্বাভিমান ও তার অনুসারী রাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মোদির সামনে এবার লক্ষ্য বৃহৎ, ৩০৩ থেকে ৩৭০ আসন শরিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে চারশো পার। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গান পাঞ্জাবে বিজেপি দুর্বল শক্তি। কর্ণাটকে বিজেপি পাঁচ বছর আগে ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি আসনে জিতেছিল।এবার কংগ্রেস-শাসিত সে রাজে
আসন সংখ্যা কমলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মহারাষ্ট্রে পাঁচ বছর আগের মতো ৪৮টির মধ্যে ৪১টি আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখ চাট্টিখানি কথা নয়।একইভাবে বিহারে ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসনে এনডিএ-র জয়ের রেকর্ড ধরে রাখাও কঠিন।অতঃকিম তামিলনাড়ু। নতুন অস্ত্র তাই কচ্চতিভু। সময়জ্ঞানে মোদি বাস্তবিকই অদ্বিতীয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.