মানিক বনাম বিপ্লব দ্বৈরথ।।

 মানিক বনাম বিপ্লব দ্বৈরথ।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চলতি লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে গোটা দেশের সাথে এ নির্বাচনি প্রচার চলছে।লোকসভা নির্বাচনে এবার বিজেপি প্রার্থী এক সময়ের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।বিপ্লব দেব প্রার্থী হয়ে সেই পুরানো মেজাজে তার প্রচারপর্ব শুরু করেছেন। লোকসভা নির্বাচন বিজেপি শাসনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজ্যে।২০১৯ সালে এবং ২০২৪ সালে।

২০১৯ সালে পশ্চিম আসনে লড়েছিলেন প্রতিমা ভৌমিক। যিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তাকে টিকিট দেয়নি বিজেপি দল।অপরদিকে পূর্ব আসনেও লড়া তথা জয়ী হওয়া সাংসদ রেবতী ত্রিপুরাও এবার টিকিট পাননি।পরিবর্তে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের কন্যা ছত্তিশগড় নিবাসী কৃতি সিং দেববর্মণ প্রার্থী হয়েছেন পূর্ব আসনে।সম্পর্কে তিনি মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের বোন।
পশ্চিম আসনে প্রার্থী হয়েই বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব দেব অনেকটাই আক্রমণাত্মক সুর নিয়ে তার প্রচারপর্ব শুরু করেছেন।তার প্রচারপর্বে মূলত তিনি টার্গেট করেছেন কংগ্রেস-সিপিএম জোটকে।গত বিধানসভা নির্বাচনেও এ রাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএম জোট হয়েছিলো।সেই জোটও রাজ্যে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছিলো।সেবার বিজেপির প্রচারের বর্শাফলার মুখ ছিল বাম-কংগ্রেসের জোট নিয়েই।


লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব দেব মূলত তার আক্রমণ শানাচ্ছেন এই বলে যে, দীর্ঘদিন এই রাজ্যে বামেরা ক্ষমতায় ছিলো এবং তারা কংগ্রেসের দয়াতেই রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল।উল্টোদিকে বাম আমলে বহু কংগ্রেস নেতাকর্মী সমর্থককে খুন হতে হয়েছিলো।তাহলে কোন্ মুখে কংগ্রেস-বামেরা জোট করলো এবং কংগ্রেস কেন বামেদের ভোট দেবে?কিংবা বামেরা কেন কংগ্রেসকে ভোট দেবে? শুধু তাই নয়,তিনি ঝর্না দাস বৈদ্য, মানিক সরকারকেও একহাত নিয়ে বলছেন যে, তারা কোন্ মুখে কংগ্রেসের সাথে হাত মেলালেন?এবং তারা কি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? জানতে চেয়েছেন তিনি।কিন্তু এটা বলে রাখা দরকার, রাজনীতিতে শেষ শত্রু বলে কিছু নেই।রাজনীতিতে আজ শত্রু তো কাল বন্ধু।আবার এও রাজনীতিতে বেজায় প্রচলন যে, শত্রুর শত্রু বন্ধু অর্থাৎ মিত্র।আর এই ফর্মুলাতেই রাজ্যে বর্তমানে কং-সিপিএম একজোট হয়েছে।এমনকি গোটা দেশেও একজোট হয়েছে ইন্ডিয়া। যেমন আম আদমি পার্টির সাথে কংগ্রেসের জোট হয়েছে দিল্লীতে, গুজরাট, আসামে। কিন্তু পাঞ্জাবে জোট হয়নি। কেরলে যেমন কংগ্রেস- সিপিএমে জোট হয়নি। একইভাবে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনা একসময় বিজেপির সঙ্গে ছিল।এখন শিবসেনা কংগ্রেসের সাথে। যদিও শিবসেনার অপর একটি গোষ্ঠী বিজেপির সাথে রয়েছে এখনও।বিহারেও ‘পাল্টিবাজ’ খ্যাত নীতীশের হাত ধরেছে এখন বিজেপি। কিছুদিন আগেও যুযুধান শিবির ছিল দু’পক্ষ।দেশে আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যায় এরকম।


কংগ্রেস এবং সিপিএম উভয়েই দাবি করছে যে, তাদের মূল শত্রু বিজেপি। সুতরাং বিজেপিকে মাত দিতে গেলে তাদের জোট হতেই হবে।অন্যদিকে,প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব যতই অপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলুন না কেন,এখন এটা সর্বজনবিদিত যে, ক্ষমতার প্রশ্নে আদর্শ চুলোয় গেছে। নাহলে বিজেপির বিরুদ্ধেও ওয়াশিং মেশিনের এতো অভিযোগ ওঠবে কেন দেশজুড়ে সমস্ত অভিযুক্ত, দাগিদের বিজেপিতে অন্তর্ভুক্ত করানো হচ্ছে। এদের অনেকেই আবার টিকিটও বাগিয়ে নিচ্ছেন এবং তাদের সেই অভিযোগেরও বিষয় হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং রাজনীতিতে এখন আর আদর্শের কোনও স্থান নেই। সবই ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব দেব সিপিএম নেতা মানিক সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছেন যে, তিনি কি কংগ্রেস প্রার্থী আশিস সাহার হয়ে প্রচার করে তার দলের নেতাকর্মীদের হাত চিহ্নে ভোট দিতে বলবেন?যদিও মানিক সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বলেছেন, সময়ের তাগিদে এখন আর গোঁ ধরে বসে থাকলে হবে না।শত্রু বিজেপি।তাদেরকে উৎখাত করতে গেলে এক হতেই হবে। কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।এ অবস্থায় এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্ব বেশ জমে উঠেছে রাজ্যে।বিশেষ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যিনি পশ্চিম আসনের বিজেপি প্রার্থী, তিনি প্রতিদিন বেশ নতুন নতুন বিষয়কে প্রচারে নিয়ে আসছেন, যা রাজ্যের প্রচারে ইদানীংকালে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে বলা যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.