বিদ্বেষ ভাষণ!!

 বিদ্বেষ ভাষণ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে এখন গণতন্ত্রের মহোৎসব চলছে।গণতন্ত্রের মহোৎসব মানে নির্বাচন।এই নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের সরকার গঠন করবে। দেশের নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত হবে সেই সরকার। নির্বাচিত হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।ফলে এই ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আগামী পাঁচ বছর ভারত নামক দেশটি কোন সরকারের হাতে থাকবে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের নেতৃত্ব কে দেবেন, কার বা কাদের হাতে দেশের সুরক্ষা সুনিশ্চিত থাকবে, দেশের উন্নয়ন থেকে শুরু করে ভাবী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কার বা কাদের হাতে উজ্জ্বল হবে, কারা ভারতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারবে – এই ধরনের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে এই নির্বাচনের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এই নির্বাচনের গুরুত্ব কতটা সেটা বোধ হয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশে এর আগে ১৭ বার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের মোট ১০২টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।আগামী ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় আরও ৮৯টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।এইভাবে সাত দফায় মোট ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।সেই লক্ষ্যে গত একমাস ধরে গোটা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ভোট প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।গণতন্ত্রে ভোটের প্রচার গণতন্ত্রেরই একটি অঙ্গ।এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি নানা ভাবে, নানা উপায়ে, নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে টানার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। যেন জনগণের ভোট তাদের পক্ষে আসে।এটি গণতন্ত্রের সুস্থ প্রতিযোগিতা।কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা এখন আর সুস্থ নেই।বরং অসুস্থ হয়ে রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।গণতন্ত্রের এই প্রতিযোগিতায় ঢুকে পড়েছে হিংসা, মারামারি, সন্ত্রাস, বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র আরও কত কী।যা প্রতি মুহূর্তে গণতন্ত্রের সুন্দর স্বরূপটিকে কলঙ্কিত ও কালিমালিপ্ত করে চলেছে। যার ফলে যে কোনও নির্বাচন এলেই সাধারণ মানুষ এখন ভয়ে গুটিয়ে থাকে। আতঙ্কের পরিবেশে দিন কাটায়। অথচ এমনটা হওয়ার মোটেও কথা ছিলো না।
শুধু হিংসা রক্তারক্তিই নয়। গণতন্ত্রের উৎসব প্রতিমুহূর্তে কলঙ্কিত হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের বিদ্বেষ ভাষণ, কুকথা ও হুমকি ধমকিতে। কে কতটা কুকথা বলতে পারলেন,কে কতটা বিদ্বেষমূলক ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি ও পরিবেশকে উত্তপ্ত করতে পারলেন, কে কতটা হুমকি দিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারলেন,কে কতটা প্রতিপক্ষকে কালিমালিপ্ত করতে পারলো, এখন এইসবেরই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে যত বেশি কুকথা বলতে পারদর্শী, তিনি ততবড় নেতা বা নেত্রী হিসেবে নিজেকে মনে করতে স্বস্তিবোধ করেন।
বর্তমান সময়ে রাজ্য রাজনীতিতেও কুকথায় পারদর্শী নেতা-নেত্রীর অভাব নেই। যে কোনও নির্বাচন এলেই এরা সভ্য মানুষের মুখোশটা খুলে আসল রূপে অবতীর্ণ হন।কুকথা,হুমকি ও বিতর্কিত ভাষণ দিয়ে গণতন্ত্রের সুস্থ পরিবেশটাকে অসুস্থ করে তুলেন।এরা নিজেদেরকে বিশাল কেউকেটা ভাবলেও, জনগণকে মনে করেন বোকা। আসলে জনগণযে বোকা নয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা পর্যন্ত তাদের নেই। এরা নিজেদের সবজান্তা মনে করেন। প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসে তাদের জুড়ি নেই। কিন্তু সময় এবং দিনকাল এখন আর আগের মতো নেই। সবকিছুই এখন পাল্টে গেছে, দ্রুত পাল্টাচ্ছে। জনগণ এখন খুবই সচেতন। ফলে বিদ্বেষ ভাষণ, কুকথা, হিংসার প্ররোচনায় নেতা-নেত্রীরা আত্মতৃপ্তি লাভ করলেও, গণতন্ত্রের আসল প্রহরী ‘জনগণ’ কিন্তু সব বুঝে। তাই সতর্ক হয়ে কথা বলাই কাম্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.