গোটা রাজধানীই যেন পার্কিং জোন

 গোটা রাজধানীই যেন পার্কিং জোন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রামায়ণে কথিত আছে কুম্ভকর্ণ ছয় মাস ঘুমোনোর পর জেগে উঠতেন এবং পেট পুরে খেয়ে ভোজনেচ্ছা নিবৃত্ত হলে ঘুমিয়ে পড়তেন আবার । কুম্ভকর্ণের ন্যায় ঠিক তেমনি ভূমিকায় অবতীর্ণ ত্রিপুরা ট্রাফিক দপ্তর , মতামত বিভিন্ন মহলের । তার কারণ একটাই , দীর্ঘ অন্তরালের পর ভোজনিচ্ছা জাগ্রত হলে হঠাৎ হঠাৎ তৎপর হতে দেখা যায় ট্রাফিক দপ্তরকে । আর বাকি সময় বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে নাজেহাল হয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পথচলতি মানুষ ও রাস্তায় চলাচল করা যানবাহন । প্রসঙ্গত ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন । রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বেআইনী পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান । কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অবস্থা তথৈবচ । রাস্তার পাশে যত্রতত্র পার্কিংয়ে গোটা রাজধানী অবাধ পার্কিং জোন বলে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হতেই পারে । কিন্তু জানা দরকার প্রশাসনের তরফে রয়েছে কিছু পার্কিং এবং নো পার্কিং জোন । দেখা যাচ্ছে আগরতলাকে ট্রাফিক জ্যাম ও পার্কিংয়ের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি দিতে ২০১৯ – এ মাননীয় উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তৎকালীন জেলাশাসক এবং কালেক্টর সন্দীপ এন মাহাত্ম্যে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শহরে কিছু পথ পার্কিং জোন এবং নো পার্কিং জোন ভাগ করে দেন ।

যেমন নো পার্কিং জোন রয়েছে নেতাজী চৌমুহনী থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনী , পূর্ত দপ্তরের সামনে ছাড়া । আগরতলা হাসপাতাল থেকে আর এমএস চৌমুহনী , ওরিয়েন্ট চৌমুহনী থেকে সূর্য চৌমুহনী হয়ে খোসবাগান পুকুর , জ্যাকসন গেট থেকে কামান চৌমুহনী , কামান চৌমুহনী থেকে মোটর স্ট্যাণ্ড পার্কিং জোন পর্যন্ত , কামান চৌমুহনী থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনী , কামান চৌমুহনী থেকে মহারাজগঞ্জ বাজার গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার , এমবিবি ক্লাব থেকে নেতাজী চৌমুহনী , পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে প্যারাডাইস চৌমুহনী ইত্যাদি । এছাড়াও নো পার্কিংয়ের অন্তর্গত রয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রধান সড়ক । কিন্তু দিনের যে কোনও সময়ই নির্ধারিত নো পার্কিং জোনেই চোখে পড়ছে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো বাহন । জানতে অজান্তে যান চালকরা অবাধে করে চলেছে আইন লঙ্ঘন । বিশেষ করে বিভিন্ন বাজার এলাকাগুলিতে অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে দুর্বিষহ হচ্ছে পরিস্থিতি । বিশেষ করে মহারাজগঞ্জ বাজার ও বাজার অভিমুখ রাস্তাগুলোতে প্রতিনিয়ত দিনের বিভিন্ন সময় রাস্তা আটকে চলে মাল তোলা ও নামানোর কাজ ।

অবস্থা এমন জটিল হয়ে পড়ে যে কোনও সময় আকস্মিক কোনও দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ড ঘটলে জরুরি যান চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়বে । অভিযোগ উঠছে একাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও কতিপয় ট্রাফিক কর্মীদের মধ্যে এক গোপন আঁতাতের । বলা হচ্ছে কতিপয় ট্রাফিকের হাত গরম হচ্ছে বলেই তারা নিয়ে বসে আছেন ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা । একই চিত্র দেখা যায় , পুরাতন আরএমএস থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনীগামী রাস্তায় । অপ্রশস্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এমনিতেই যান চলাচলের ব্যস্ততার কারণে থাকে জ্যাম আবদ্ধ। এর উপর রাস্তার দুপাশে নো পার্কিং জোনে অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে অবস্থা হয়ে উঠে আরও জটিল । তার উপর পথচারীদের চলার জন্য বানানো ফুটপাথে কিছু দোকানি গাড়ি পার্কিং করে আবদ্ধ করে রাখার ফলে পথচারিদের চলাচল করতে হয় মূল সড়ক ধরে । যার ফলে বেড়ে যায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা । এলাকাবাসীর মতে পার্কিংয়ের ফলে অসম্ভব হয়ে পড়ে বাড়ি থেকে বেরোনোও । এরকম একই ঘটনার সাক্ষী গোটা শহরের প্রতিটি মূল সড়ক । দপ্তরের ব্যবস্থা নেওয়ার অনীহা এবং যানবাহন চালকদের পার্কিং ও নো পার্কিং জোন সম্পর্কে অজ্ঞানতায় আরও জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি । দপ্তর সূত্রে খবর শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে এ ব্যাপারে । তবে বলা বাহুল্য নো পার্কিং নিয়ে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় ট্রাফিক পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যে রকম তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা কোনও এক কারণে অদৃশ্য রাজধানীতে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.