মহারাষ্ট্রে তিন আসনেই কাঁটার টক্করে বিজেপি বনাম কংগ্রেস!!

 মহারাষ্ট্রে তিন আসনেই কাঁটার টক্করে বিজেপি বনাম কংগ্রেস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-চতুর্থ দফায় মহারাষ্ট্রের ভোটে মহাবিকাশ আঘাডির হয়ে তিন আসনে লড়ছে।তিন আসনেই কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি।গুজরাট সীমান্তে তপশিল উপজাতি সংরক্ষিত নান্দুরবার আসনটি বরাবর কংগ্রেসের ছিল, কিন্তু ২০০৯ এর পর আর জয়ের মুখ দেখেনি।অন্য আসন জালনা। ১৯৯৬ থেকে এই আসনে জিতে আসছে বিজেপি। পাঁচবারের সাংসদ রাওসাহেব দানবে এবার ষষ্ঠবার জয়ের জন্য লড়ছেন।তৃতীয় আসন পুনে।কংগ্রেসের সুরেশ কালমাদি এই আসন জিতেছিলেন ২০০৯ সালে। এরপর এই আসন টানা বিজেপির হাতেই।
নান্দুরবার কেন্দ্রে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদি আর শনিবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা প্রচার করে গেলেন।এই আসনে কংগ্রেসের হয়ে ভোট প্রচারে গ্রামে গ্রামে রয়েছে গুজরাট মধ্যপ্রদেশের উপজাতি নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন।সেই দলের লোক নান্দুরবারের শাহাদা তালুকের বাসিন্দা সন্তোষ পাওয়ারা নিজেও উপজাতি অংশের মানুষ।ভিল পরিবারের উপগোষ্ঠীর সদস্য সন্তোষ নানান ভাষার গীত রচনা করে থাকেন, যেগুলি গ্রামীণ মানুষের জন্য সচেতনতামূলক বলে মান্যতা পায়।এর হিন্দি সংকলন বই হিসাবে পাওয়া যায় এমাজনে।দুই-দুইবারের সাংসদ ডা. হিনা গাবিত এবারও বিজেপির প্রার্থী।তার বিপরীতে কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্ত্রী কেসি পণ্ডির ছেলে আইনজীবী গোওয়াল পদভিকে প্রার্থী করেছে। নির্বাচনের ময়দানে নবিশ গোওয়ালের সম্ভাবনা কতটা!
সন্তোষ জানালেন, কংগ্রেস তার নিজের মতো রাজনৈতিক প্রচার করছে। আর তারা পাহাড়, গ্রামের সমস্যা, মানুষের ক্ষোভ ছাড়াও বিজেপিকে কীভাবে হারানো যেতে পারে এই সম্পর্কে কংগ্রেসকে সতর্কতা, পরামর্শ দিয়ে আসছেন প্রথম থেকে।পাশাপাশি বিজেপিকে উপজাতিদের যারা ভোট দিয়ে আসছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন বিজেপি এলে ক্ষতি হবে। কীভাবে ক্ষতি, এই প্রসঙ্গে সন্তোষ পাওয়ারা বলেন, আমরা মণিপুরের কথা বলছি। মধ্যপ্রদেশে মাথায় পেচ্ছাবের ঘটনা, রাজস্থানে মটকা থেকে জল খাওয়ার অপরাধে এক ছাত্রকে পিটিয়ে মারার ঘটনাগুলি বলছি। পাওয়ারা জানান, নানান সংস্থা সংগঠন থেকে গ্রামে লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করা, সভা করার কাজগুলি চলছে নিজেদের উদ্যোগেই।তার দাবি, মনদানা এবং শাহাদা এই দুইটি পাহাড়ি এলাকায় এইবার বিজেপির প্রচার এখনও ঢুকতেই পারেনি।
এই দফায় কংগ্রেসের ভাগের আর এক আসন জালনাতে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপির বর্তমান প্রার্থী কেন্দ্রীয় রাজ্যমন্ত্রী দানবে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কল্যাণ কোলে প্রথমবার ময়দানে এসেছেন।এই লোকসভার অধীন ছয়টি বিধানসভার মধ্যে তিনটি বিজেপির, দুটি সিন্ধে শিবসেনার আর একটি কংগ্রেসের।এই সমীকরণে বিজেপির অবাধ জয়ের পথে কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে মারাঠা সংরক্ষণ আন্দোলন।আন্দোলনের সূচনায় সংরক্ষণের দাবিতে অন্তরাবালী সরাঠি নামে যে গ্রামে অনশন শুরু করেছিলেন আন্দোলনের নেতা মনোজ জারাঙ্গে পাতিল, সেই গ্রামটি এই ভোট কেন্দ্রে রয়েছে।ফলে আন্দোলনের প্রথম আগুন মারাঠাওয়ারার বিড লোকসভা এলাকায় দাউ দাউ করলেও তার আঁতুর ঘর জালনা লোকসভা।জাতিগত সমীকরণে মারাঠাওয়ারার এই কেন্দ্রে ওবিসি ভোট ত্রিশ শতাংশ,মারাঠা উনিশ, মুসলিম আঠারো,বৌদ্ধ সতেরো, অন্যান্য ও দলিত মিলে ষোল শতাংশ।দুই প্রার্থীই মারাঠি।আবার মারাঠা সংরক্ষণের ইস্যুতে মারাঠা এবং ওবিসি ভোটে বিভাজন নিশ্চিত।আর এখানেই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ভাগ্য সমান্তরাল সুতোয় ঝুলছে।কংগ্রেসের তৃতীয় কেন্দ্র পুনায় লড়াই চমকপ্রদ এর মূল কারণ হলো বিজেপি কংগ্রেস দুই দলেরই প্রার্থী হয়েছেন নতুন মুখ। দুজনই যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং নিখুঁত ইমেজের রাজনীতিক। বিজেপির প্রার্থী মুরলিধর মহাল পুনে পুর নিগমের প্রাক্তন মেয়র। ফলে গোটা এলাকার সমস্যা, গলিঘুপচি সবই তার নখদর্পণে, সেই হিসাবে তিনি হেভিওয়েট। অপরদিকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীন কসবা পীঠ আসনের নবনির্বাচিত বিধায়ক রবীন্দ্র ধাঙ্গেকর। গোটা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের হাতে ধাঙ্গেকরের মতন তরুণ তুর্কি মুখ আর দ্বিতীয়টি নেই।২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ভোট ভাগ দেখা গেলে বিজেপির গিরিশ বাপট পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৩২ হাজার আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের মোহন যোশী পেয়েছিলেন তিন লক্ষ আট হাজার। গত মার্চে বাপটের মৃত্যুর পর এই লোকসভা সাংসদহীন। এই লোকসভায় ছয়টি বিধানসভা আসনের পাঁচটিতেই মহাযুতির বিধায়করা রয়েছেন। একটিতে কংগ্রেস, বিধায়ক ধাঙ্গেকর রবিবার লোকসভার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। কংগ্রেসের এই আসনে ভরসা একমাত্র এই প্রার্থী রাবীন্দ্র ধাঙ্গেকর। মাত্র তেরো মাস আগে তিনি বিধায়ক হয়েছেন কসবা পীঠ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। তার জয় শুধু কংগ্রেস বা বিজেপির জন্য নয়, মহারাষ্ট্র রাজনীতিতেই এক অভাবনীয় ঘটনা ছিল। যার ঘোর আজও কাটাতে পারছে না পুনের বিজেপি।ধাঙ্গেকরের মাত্র এগারো হাজার ভোটের ব্যবধানে বিধানসভার জয় প্রাপ্তির ম্যাজিকের কি লোকসভাতেও পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এই প্রশ্ন নগরীর বাসিন্দাদেরও। উল্লেখ্য, পুনা লোকসভা কেন্দ্রর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি কংগ্রেস ছাড়াও রয়েছেন আরও একজন, তিনি বঞ্চিত বহুজন আঘাডির বসন্ত মোরে। তিনিও নতুন মুখ এবং পুনা নিগমের প্রাক্তন কর্পোরেটর। এই কেন্দ্রে ২০১৯ নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী ৬৪ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। এই ভোটে মোরে যদি এই সংখ্যক ভোটও পান তা বাকি দুই প্রার্থীর দুইজনের জন্যই সমান উদ্বেগের বলে মনে করছেন পুনার ভোটাররা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.