বিহার: দৈন্যদশা ঘুচবে কি?

 বিহার: দৈন্যদশা ঘুচবে কি?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে জাতপাত সমীক্ষার দাবি তুলেছেন রাহুল গান্ধী। তার মতে,জাতপাত সমীক্ষা হলেই একমাত্র দেশের সামনে প্রকৃত তথ্য ফুটে উঠবে। তখনই বোঝা যাবে এদেশে কী পরিমাণ অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।রাহুল গান্ধী ক্রমাগত বলেই চলেছেন জাতপাত সমীক্ষা কংগ্রেস করবে ক্ষমতায় এলেই।কিন্তু এরই মধ্যে বিহারে জাতপাত সমীক্ষার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।তাতে সে রাজ্যের ভয়াবহ চিত্রই ফুটে উঠেছে। বিহার এখনও পিছিয়েপড়া রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। বারবারই তাই রাজ্য সরকার সে রাজ্যের জন্য স্পেশাল স্টেটাস দাবি করে।বিশেষ প্যাকেজের দাবি করে। বর্তমানে আরজেডি নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দাবি করেছেন।গরিব রাজ্যের জন্য একদিকে বিশেষ প্যাকেজ দাবি করা হচ্ছে আর অন্যদিকে ভোটে যারা প্রার্থী হচ্ছেন তারা প্রায় প্রত্যেকেই কোটিপতি।এক অদ্ভুত অসামঞ্জস্যতা।রাজ্যে গরিব, পিছিয়েপড়া দলিতদের জন্য যতসব মায়াকান্না।যে ক্ষমতায় আসছে তারাই মায়াকান্না করে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলি ফুলেফেঁপে উঠছে। রাজনৈতিক নেতারা কোটিপতি হচ্ছেন।৫ বছর পর পর রাজনৈতিক নেতাদের যে হলফনামা প্রকাশ্যে আসছে তাতে ধরা পড়ছে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ শুধুই বাড়ছে।কমছে না। নগদের পরিমাণ কেবলই বাড়ছে, কমছে না।অন্যদিকে রাজ্যবাসীর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা বাড়ছে।গরিব আরও গরিব হচ্ছে। কর্মসংস্থান নেই।ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে মানুষ বাঁচার তাগিদে।বিহারের এই দৈন্যদশা কবে ঘুচবে এ প্রশ্ন এখন উঠছে।
কয়েকমাস আগেই বিহারে জাতপাত সমীক্ষার রিপোর্ট বেরিয়েছে।তাতে জানানো হয়েছে, সে রাজ্যের ৬৩ শতাংশ পরিবারের মাসিক রোজগার ১০ হাজার টাকার কম।এরমধ্যে ৩৪ শতাংশের বেশি পরিবারের মাসিক রোজগার মাত্র ৬ হাজার টাকা।অর্থাৎ দিনে ২০০ টাকা।বর্তমান সময়ে দিনে ২০০ টাকা রোজগার দিয়ে পরিবার সামলানো যায়! সমীক্ষায় আরও প্রকাশ্যে এসেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।রাজ্যের ১৮ শতাংশ পরিবারের রোজগার মাসিক ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। ২০-৫০ হাজার টাকা মাসিক রোজগার করেন এমন সংখ্যা মাত্র ১০% পরিবারের রয়েছে।
বিহারের ৫০ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য রাজ্যে গিয়ে মজদুরি করে। তাদের নাম পড়ে গেছে ‘বিহারি লেবার’ বা বিহারি শ্রমিক। অর্থাৎ শ্রমিকের সাথে একটা রাজ্যের লেভেল জড়িয়ে গেছে।এবং এটা শুধু আজকের চিত্র নয়।কয়েক যুগ ধরে এই চিএ চলে আসছে।
এতো গেলো জাতপাত সমীক্ষার কথা।এবার যদি সে রাজ্যের গত ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটের সময়কার প্রার্থীদের চিত্র প্রকাশ্যে আসে তা আরও চমকপ্রদ হবে। বিহারে ২৪৩ জনের প্রার্থীর মধ্যে ২৪১ জন প্রার্থীর হিসাব তুলে ধরেছিলো এডিআর। তারা জানায়, ২৪১ জনের মধ্যে ১৯৪ জন প্রার্থীই কোটিপতি। অর্থাৎ প্রার্থীদের ৮১ শতাংশই কোটিপতি। বিজেপি প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি কোটিপতির তালিকায়। দ্বিতীয় আরজেডি, তৃতীয় নীতীশের দল।
এবার শুধু ছোট একটা পরিসংখ্যান হলে ধরা যাক। ১৩ মে রাজ্যের যে ৫টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে তাতে তিনজন আরজেডি প্রার্থী লড়ছেন। তিনজনই কোটিপতি। বিজেপিও লড়ছে তিনটিতে। তিন বিজেপি প্রার্থীই কোটিপতি।
যে রাজ্যে সাধারণ মানুষ অনটনে থাকে সে রাজ্যে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী কোটিপতি।সাধারণ জনগণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির প্যাকেজের শেষ নেই। চিন্তায় তাদের ঘুম আসে না, জাতপাত সমীক্ষা কিংবা অর্থনৈতিক সমীক্ষা নিয়ে মাথাব্যথার শেষ নেই, সেই রাজ্যে প্রার্থীরা কোটিপতি। তাহলে দিনের শেষে হিসাবটা কী দাঁড়াল। রাজ্যের দুর্দশা কোটিপতিদের ভিড়ে কি ঘুচবে? রাজনীতির তরজা চলবে। বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজের দাবি উঠছে। প্রধানমন্ত্রী এবার ৪০-এ ৪০ চাইবেন এবং এর মধ্যে কোটিপতি অনেক প্রার্থীই ভোটে জিতবেনও, কিন্তু বিহার কি সেই তিমিরেই পড়ে থাকবে!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.