আত্মবিশ্বাস, না সংশয়!!

 আত্মবিশ্বাস, না সংশয়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকরী করে গোটা দেশবাসীকে রীতিমত চমকে দিয়েছিল কেন্দ্র।আর এর রেশ ফিকে না হতেই ভোট চলাকালীনই সিএএর আওতায় নাগরিকত্ব দেওয়া হল ১৪ জনকে।২০১৯ সালে
এই আইন তৈরি হলেও দীর্ঘ প্রলম্বিত প্রক্রিয়ায় ২০২৪ সালে এই আইন কার্যকর করতে হয়েছে।আর এই আইন বলবৎ নিয়ে দেশজুড়ে
প্রবল হইহই রব পড়ে যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আইন বলবৎ হওয়ার পর পরই জানিয়ে দিয়েছিল,এখন থেকে যোগ্যদের ভারতীয়
নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজটুকু শুরু হবে।কিন্তু একেবারে দেশে লোকসভার ভোট চলাকালীন সময়ের মধ্যেই ১৪ জনের হাতে ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে- সেটা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।আসলে লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই চটজলদি এই কাজটি যে রূপায়ণ শুরু হবে এর ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল বিভিন্ন মহলে।মূলত সিএএর মাধ্যমে ভারতের প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্র অর্থাৎ পাকিস্তান,আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অ-মুসলিম অর্থাৎ হিন্দু,জৈন,শিখ,পার্সি, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ যারা ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবেন,যদি তাদের নথিপত্রে এই সম্পর্কিত যথার্থতা প্রমাণিত হয় তাহলেই তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া কথা সিএএতে বলতে বলা হয়েছিল।আপাতঃদৃষ্টিতে এটি একটি ইতিবাচক প্রয়াস মনে হলেও এই আইনটি তলিয়ে দেখলে এটা পরিষ্কারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ছিল প্রধান।লক্ষণীয় হলো,যে তিন দেশের কথা সিএএ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলিই মুসলিম রাষ্ট্র। আবার তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, ওই দেশগুলো থেকে আগতদের মধ্যে কোন মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ স্পষ্টতই সংবিধানের বিপরীত সুরে এই আইনের মাধ্যমে মুসলমান এবং অ-মুসলমানদের মধ্যে একটি আড়াআড়ি বিভাজন রেখা টানার চেষ্টা হয়েছে এই আইনে।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মায়ানমার,নেপাল কিংবা শ্রীলঙ্কা থেকে অত্যাচারিত হয়ে যারা আশ্রয়
চাইবেন ভারতে তাদের নাগরিকত্ব বা আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা এই আইনে নেই। যদিও মুসলিমদের মধ্যেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব
ও লড়াই যেমন শিয়া,বেলুচ এই ধরনের সম্প্রদায়গুলোও নিজেদের দেশে মৌলবাদী অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। কিন্তু সিএএ তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে অনিচ্ছুক। যে কারণেই ভারতে কেরল ও তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত ও প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে।পূর্বোত্তরের আসামেও এই নিয়ে কম বিরোধিতা হয়নি।আসলে লোকসভা ভোটের মুখে এই আইন পাস এবং দেশে লোকসভা নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে সিএএ মেনে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান চালু করা এর সবটার পেছনেই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ভোটের রাজনীতি।সাধারণ ক্ষেত্রে অন্য দেশের বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে হলে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়।তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে কমপক্ষে ১১ বছর বসবাস করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু সিএএতে এই শর্ত অনেক শিথিল ও সরল করা হয়েছে।তাদের জন্য ১১ বছর ভারতে থাকার বাধ্যতামূলক বিধান প্রযোজ্য হবে না।এখন অন্তত: ১ বছর ধরে ভারতে থাকা ওই তিন দেশের ৬ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে কোনও বাধা থাকবে না।কিন্তু এই বিতর্কিত ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে প্রবল হিন্দুত্ববাদী তাসই যে ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের কাছে একমাত্র আশ্রয় তথা অবলম্বন হয়ে উঠেছে, তড়িঘড়ি ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই সিএএর মাধ্যমে ১৪ জন বিদেশিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনবহুল দেশে নতুন করে ৩ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ৬ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর জন্য নাগরিকত্বের দরজা খুলে দিয়ে আগামী দিনে তা সুদূরপ্রসারী কোনও নেতিবাচক প্রভাব ডেকে আনে কিনা সেটাই এখন দেখার।তবে নির্বাচন যখন মধ্যগগনে তখন ভোটের মধ্যেই নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ শুরু করে দেওয়ার মোদি সরকারের এই ভূমিকায় বিজেপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ, নাকি ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে সংশয়কেই আরও জোরালো করে তুলল- সেই একগুচ্ছ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.