ওড়িশায় ভোটের লড়াইয়ে ব্যাকরুম বয়-ই মূল ইস্যু!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-আগামী ২০ মে লোকসভার পঞ্চম দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।আর পঞ্চম দফা ভোটের আগে দেশের সমুদ্র উপকুলবর্তী রাজ্য ওড়িশার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একের পর এক চমক এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, পঞ্চম দফা ভোটের আগে ওড়িশায় সব ইস্যুকে চাপিয়ে ‘বহিরাগত পান্ডিয়ান’ ইস্যুই সব থেকে বড় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ,বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে
পি নাড্ডা এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পর্যন্ত সকলের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ওই পান্ডিয়ান।একজন বহিরাগত এবং প্রাক্তন আমলা কি করে
গোটা ওড়িশা রাজ্যের লাগাম নিতে পারে?ওড়িশায় একই সাথে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে এবার এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।বিজেপি- কংগ্রেস সব বিরোধী দলের কণ্ঠে একই সুর শোনা যাচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কারণেই ‘ওড়িশা অস্মিতা’ আজ বিপদের মুখে। বিরোধীদের ক্রমাগত নিশানায় শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন ভিকে পান্ডিয়ানও।তার বক্তব্য, আমি জন- মসূত্রে একজন ভারতীয় এবং আমার নি:শ্বাসে ওড়িশা।আমার সন্তানদের মাতৃভাষা হলো ওড়িয়া এবং ওড়িশা হলো আমার কর্মভূমি।এই পান্ডিয়ান এতটাই অপ্রতিরোধ্য এবং ক্ষমতাবান যে, তাকেই ৭৭ বছরের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের রাজনৈতিক উত্তরসূরী হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই পান্ডিয়ান?তার সম্পর্কে আগে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু উল্লেখ করেছিলাম।কিন্তু পঞ্চম দফা, ওড়িশায় দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে যখন পান্ডিয়ান ইস্যুই সব থেকে বড় হয়ে উঠেছে, তখন তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে গিয়ে যতটুকু জানা গেছে, সেটা হলো তামিলনাডুতে জন্ম, সেই রাজ্যেই তার পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছু।২০০০ সালের ব্যাচের আইএএস ভি কে পান্ডিয়ানকে প্রথমে পাঞ্জাব ক্যাডার বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ই তিনি একই ব্যাচের ওড়িশা ক্যাডারের আইএএস সুজাতা আর কার্তিকেয়নের সাথে প্রণয়ে আবদ্ধ হন এবং সুজাতাকে বিবাহ করেন। সুজাতা ওড়িশার কেন্দ্রপাদা জেলার বাসিন্দা।বিবাহের পর পান্ডিয়ান পাঞ্জাব ক্যাডার ছেড়ে ওড়িশা ক্যাডারে যোগ দেন।
২০১১ সালে পান্ডিয়ান মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যোগ দেয়।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পান্ডিয়ানের দক্ষতা নবীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।২০১৪ এবং ২০১৯ লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের সময় নবীনের এবং বিজু জনতা দলের ভোট কৌশল তৈরি করার জন্য তাকেই ‘ব্যাকরুম বয়’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার তৈরি করা রণনীতিই ২০১৪ এবং ২০১৯
সালে নবীন ও বিজু জনতা দলকে সাফল্য এনে দেয়। এরপর আর পিছনে তাঁকাতে হয়নি পান্ডিয়ানকে।ক্রমশ মুখ্যমন্ত্রী নবীনকে হাতের মুঠোতে নিয়ে তিনিই হয়ে উঠেন বকলমে মুখ্যমন্ত্রী।৭৭ বছরের নবীনও ক্রমশ পান্ডিয়ান নির্ভর হয়ে নিজেকে একপ্রকার সপে দিয়েছেন। যার পরিণতিতে মাত্র ৫০ বছরেই ভি কে পান্ডিয়ান
ওড়িশা ক্যাডারের (আইএএস) চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্থায়ীভাবে যোগদেন বিজু জনতা দলে।নবীনও তার হাতে দল এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে।
সেই পান্ডিয়ানই এখন ওড়িশায় বিজেডির প্রধান প্রচারক এবং ভোটকৌশলী। মুখ্যমন্ত্রী নবীনের প্রতিটি সভাতেই একেবারে ছায়াসঙ্গী হয়ে উপস্থিত থাকেন পান্ডিয়ান।স্বাভাবিকভাবে তিনিই হয়ে উঠেছেন বিরোধীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য।পান্ডিয়ানের নানা দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে হাতিয়ার করেছে প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি। পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে ‘পান্ডিয়ান’ নামক কাঁটাই নবীনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে প্রবল আশাবাদী নবীন পট্টনায়েকও।গত ২৫ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নকে সামনে রেখে ষষ্ঠবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন।যদি জয়ী হন, তাহলে দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন নবীন পট্টনায়ক।তবে এবার যুদ্ধটা অনেকটা কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। বিধানসভায় কি হবে? তা এখনই বলা মুশকিল। তবে লোকসভায় বিজেপি এবার ওড়িশায় ভালো ফলাফল
করবে বলেই মনে হচ্ছে।