বরাভয়!!

 বরাভয়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনেকের বিশ্বাস, শেয়ার বাজার হলো ভোটের ‘হাওয়া মোরগ’।মধ্য মার্চে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা ইস্তক ভারতের শেয়ার বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় সেই বিশ্বাস হয়তো খানিক দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু যারা অর্থশাস্ত্রের চর্চা করেন, তারাই বলবেন, বাজারে এমন অস্থির মতিত্বের সঙ্গে নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি সরকারের তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসা, না-আসার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। একটি দেশের শেয়ার বাজার সে দেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এটা ঠিকই,কিন্তু সেই বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে আনুষঙ্গিক একাধিক কার্য-কারণ নিহিত থাকে। রবিবার কংগ্রেসের তরফে এই মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে শেয়ার বাজারে ধস নামবে,এমন কথা রটিয়ে বিজেপি নাকি আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে।নির্বাচন একটি আদ্যন্ত যুদ্ধ। সিংহাসনের মহাসংগ্রাম।সেই যুদ্ধ জয় করতে কত কিছুই বলা হয়।সাধারণ মানুষের, এমনকী দেশের বিত্তবান মানুষের লগ্নির উপরেও শেয়ার বাজারে সার্বিক চরিত্র নির্ভর করে না,নির্ভর করে বিদেশি লগ্নির উপর।এমাসের প্রথম সতেরো দিনে ভারতের শেয়ার বাজার থেকে ২৮,২০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। ভোটের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা হয়তো এর একটি কারণ।সমধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণটি চিন এবং হংকংয়ের পড়তি শেয়ার বাজার। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, ভারতের বাজার ছেড়ে যাওয়া বিদেশি তহবিলের গন্তব্য মূলত চিন ও হংকং।গত মাসেও দেশের শেয়ার বাজার ছেড়েছিল বহু বিদেশি লগ্নিকারী। যদিও তার পরিমাণ ছিল অনেক কম, নিট হিসাবে ৮৭০০ কোটি টাকা।তার আগে ফেব্রুয়ারীতে অল্প হলেও বিনিয়োগ আসে,অঙ্ক প্রায় ১৫৩৯ কোটি।তবে মার্চে তারা প্রায় মুক্তহস্তে ভারতীয় বাজারে ঢালে ৩৫,০৯৮ কোটি টাকা।বস্তুত ওই সময়ে বিবিধ জনমত সমীক্ষা সামনে আসে, যার নির্যাস ছিল মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।সেই সূত্রে তেজি আসে বাজারে।কিন্তু প্রথম দফার ভোটের পর
বিজেপির পদস্খলনের সম্ভাবনা সংবাদমাধ্যমে চর্চায় উঠে আসতেই বাজারে ধস নামতে শুরু করে।ভোট-বাজারের মতো শেয়ার
বাজারেও সম্ভাব্য ফল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।শুরু হয় আশা-আকাঙক্ষার দোলাচল। বাজার আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী পদবি ধরে দেশের দুই প্রধান শিল্পপতি কংগ্রেসকে বস্তা
ভরে টেম্পোতে করে বড় অঙ্কের নগদ টাকা পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগের আঙুল তোলেন।লগ্নিকারীদের ভরসা ফেরাতে আসরে নামেন সরকারের তিন রথী-অমিত সাহ, নির্মলা সীতারামন ও এস জয়শঙ্কর।চতুর্থ দফার ভোটের প্রাক্কালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে নির্বাচনি ফলের যোগ খোঁজার চেষ্টা বৃথা।বাজার চলে তার নিজস্ব গতিতে। বরাভয় দিয়ে তিনি বলেন, এখনই শেয়ার কিনে রাখুন। কম দামে পাবেন।আগামী ৪ জুনের পর বিপুল জনাদেশ নিয়ে কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার গঠিত হলেই শেয়ার সূচকে বড় উত্থান হবে, তদনুরূপ মুনাফা পাবেন লগ্নিকারীরা। অবশ্য শাহী বার্তার পরদিনও সেনসেক্সের পতন অব্যাহত ছিল। লগ্নিকারী, বিশেষত বিদেশি সংস্থাগুলির মধ্যে ভারতের নির্বাচন নিয়ে দোলাচল তৈরি হলে বলতে হয়, এমন অনিশ্চয়তার তত্ত্ব তারা কোথা থেকে পেয়েছে? এখনও পর্যন্ত এমন একটিও সমীক্ষা এবং পূর্বাভাস আসেনি, যা জানান দিয়েছে ভারতে বিজেপি সরকারের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাথায় রাখতে হবে পৃথিবী দ্রুত জটিল হচ্ছে। বাড়ছে দুশ্চিন্তা। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর্বে দুটি বড় দেশ বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করত।এখন দশ থেকে পনেরোটি দেশ মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন। এখন পণ্যবাহী জাহাজেও গোলা ছোড়া হচ্ছে, ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে যা অকল্পনীয় ছিল। এ হেন অবস্থায় দেশের হাল এমন একজনের ধরা উচিত, যার দুরদৃষ্টি আছে।নীতি আছে।যিনি শক্তিশালী নেতা। তাই বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বাজারে রাজনীতির এই প্রভাব সাময়িক। ভোটের ফল ফের নাটকীয় বদল আনতে পারে বিদেশি সংস্থাগুলির শেয়ারে বিনিয়োগে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজারকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই তাদের পুঁজির প্রবাহ বাড়বে। দীর্ঘ মেয়াদে মজবুত অর্থনীতিই যে বাজারের গতিপথ নির্ধারণ করে, গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদি তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। ফলে, অমিত শাহের বরাভয়কে নিছক রাজনৈতিক ভাষ্য মনে করার কারণ নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.