উত্তরপ্রদেশ এবার কার?

 উত্তরপ্রদেশ এবার কার?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশের সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ভাগ্যে এবার কী হতে দেয় যাচ্ছে? উত্তরপ্রদেশ এবার কোম্পথে ধাবিত হতে যাচ্ছে?রাজনৈতিক মহলে এবার জোর চর্চা উত্তরপ্রদেশকে ঘিরে।স্বভাবতই দেশব্যাপী সবার নজর পড়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে এবার কী হবে? উত্তরপ্রদেশে লোকসভার মোট আসন ৮০।অর্থাৎ দেশে সবচেয়ে বেশি আসন এই রাজ্যে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির উত্থানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ।সেবার ৭৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি এই উত্তরপ্রদেশ থেকে। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপি পেয়েছিল ৬২টি আসন। সহযোগীরা পেয়েছিল ২টি আসন।সেই উত্তরপ্রদেশে এবার কি সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত থাকবে, নাকি উত্তরপ্রদেশে এবার মোদি-শাহের বিজয়রথ ধাক্কা খেতে চলেছে।রাজনীতির পণ্ডিতরা এ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন।
একটা সময় ছিল উত্তরপ্রদেশে রাজত্ব করতো কংগ্রেস।সে তিন দশক আগের কথা।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কংগ্রেসের আজ সে রাজ্যে ভোট শেয়ার কমতে কমতে ৩% এসে দাঁড়িয়েছে। গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে একটি মাত্র আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস এবং সেটি রায়বেরিলিতে।কংগ্রেস- পরবর্তী সময়ে সেই উত্তরপ্রদেশে কখনও রাজ করেছেন মায়াবতী,কখনবা মুলায়ম সিং যাদব,আবার কখনও বিজেপি।বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায়ও বিজেপি। হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথের হাতেই এখন উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোট তখনও শুরু হয়নি, বিজেপি ন্যারেটিভ সেট করে যে এবার উত্তরপ্রদেশে অন্তত ৭৫টি আসন চাই-ই চাই। দেশে কিছুদিন আগেও একাংশ চ্যানেল যখন ওপিনিয়ন পোল জারি করে তখনও বলা হয় যে, বিজেপি অন্তত সে রাজ্যে ৭০-এর বেশি আসন পাচ্ছে। কিন্তু লোকসভা ভোট শুরু হতেই সব রাজনৈতিক ভোট বিশ্লেষকদের চোখ যেন কপালে উঠে যায়।পাঁচ দফা ভোটের পর এখন কোনও রাজনৈতিক দলই বুকে হাত রেখে বলতে পারছে না যে তারা কোথায় দাঁড়িয়ে? রাজনৈতিক পণ্ডিতদের সব বিশ্লেষণ এক নিমেষে পাল্টে দিয়েছেন মুলায়ম-পুত্র তথা বর্তমানে সমাজবাদী সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।এবার উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে যেটা উল্লেখযোগ্য বিষয় তা হলো তৃতীয় আরেক শক্তি মায়াবতীর হাতি ময়দানে প্রায় অনুপস্থিত।রাজনৈতিক মহলের অনুমান, এবার মায়াবতীর হাতির সব ভোট শেয়ার অখিলেশের দিকে পড়তে চলেছে।আর এখানেই পাশার খেলা শুরু।আজকের দিনে উত্তরপ্রদেশের অবস্থানটা কোথায়?সপা সুপ্রিমো অখিলেশকে ঘিরে রাজ্যের মানুষজনের যে উন্মাদনা তা চোখে পড়ার মতো।এ যাবৎকালের মধ্যে অখিলেশকে ঘিরে এমন উন্মাদনার কথা কেউই মনে করতে পারছেন না। একই সাথে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রয়েছে কৃষক বিক্ষোভ। বিজেপি এবার চৌধুরী চরণ সিংয়ের পৌত্র জয়ন্ত চৌধুরীর দল আরএলডিকে কাছে টেনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের ভোটব্যাঙ্কে থাবা দিতে একটা জোরদার প্রয়াস নিয়েছে ঠিকই, তবে আদতে তা কতখানি কাজে আসবে তা ভোটের বাক্স না খুললে বোঝা সম্ভব হবে না।উত্তরপ্রদেশ বরাবরই জাতপাতভিত্তিক রাজনীতির সমীকরণে ধাবিত হয়।দলিত, যাদব, মুসলিম, ঠাকুর, কুর্মি সহ অসংখ্য জাতপাতভিত্তিক সমীকরণ উত্তরপ্রদেশের ভোটের ভাগ্য নিয়ন্তা হয় প্রার্থীদের।এবার উপরন্তু রয়েছে রাজ্যে রাজপুত, ঠাকুর বিক্ষোভ।ভোটের সময় রাজপুতরা মহাপঞ্চায়েত করে করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট না দেবার শপথ নেন।এদের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং একদা দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংয়ের নাতনি।
এই অবস্থায় উত্তরপ্রদেশে এবার জটিল এক রাজনীতির পাঁকে ভোট হচ্ছে।বিজেপির অন্দরমহলে আবার কান পাতলে শোনা যাচ্ছে মোদি-শাহের সাথে যোগীর তালমিলের অভাব রয়েছে। ঠাকুর সম্প্রদায় থেকে এবার বিজেপিতে প্রায় টিকিটই দেওয়া হয়নি। তবে এবার বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে বেহেনজি মায়াবতীর অভাব। মায়াবতী লড়ছেন নামমাত্র। মায়াবতীর দলিত ভোট এবার কোন্দিকে যাবে তা ভেবে পাচ্ছে না বিজেপি। কেননা, কংগ্রেস এবং সপা সংবিধান বাঁচানোর ডাক দিয়েছে এবং তাতে দলিত অংশের মানুষ যে প্রভাবিত হয়েছেন এর প্রমাণ অখিলেশ-রাহুল গান্ধীর প্রতিটি র‍্যালিতে জনবিস্ফোরণ। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে এমনিতেই শক্তিশালী সপা।বিধানসভায় এই অঞ্চল থেকে তাদের প্রচুর বিধায়ক রয়েছে।আর যে ২ দফা ভোট রয়েছে তাতে পূর্বাঞ্চলেই ভোট হচ্ছে মূলত। তাই সপা-কংগ্রেস জোট এবার বিজেপির সামনে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।রাজনৈতিক ভোট পণ্ডিতরা এখন বলাবলি করছেন যে, উত্তরপ্রদেশে এবার বিজেপি ৫০-এর নিচে নেমে গেলেও আশ্চর্যের কিছু নয়।তাই এবার সবার নজর উত্তরপ্রদেশের দিকে। ইন্ডিয়া জোটকে এবার উত্তরপ্রদেশ কী ডিভিডেন্ট দেয় এর উপর নির্ভর করবে ইন্ডিয়া জোট মোদি-শাহকে বেগ দিতে পারবে কি না।স্বভাবতই প্রশ্ন- উত্তরপ্রদেশ, এবার তুমি কার?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.