অরণ্য ফেরেনি!!

 অরণ্য ফেরেনি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পরিবেশ নিয়ে প্রকৃতির রুদ্ররূপ সম্পর্কে আশঙ্কা ব্যক্ত করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুকাল আগেই লিখে গিয়েছিলেন- যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু,নিভাইজে তব আলো, তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ,তুমি কি বেসেছ ভালো? আজ এতগুলো বছর আগে প্রশ্ন কবিতায় এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করার পরেও প্রকৃতি রুদ্ররোষ সম্পর্কে আমরা সতর্ক হইনি। কবিগুরু বলে গিয়েছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর, লও যত লৌহ লোস্ট্রা কাষ্ঠ ও প্রস্তর।কিন্তু তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।অরণ্য আর ফিরে আসেনি।বেড়েছে জলবায়ুর উষ্ণতা।অপরিকল্পিত নগরায়ন আর শিল্পায়নের ধাক্কায় আজ গোটা মানবসভ্যতাই কঠিন সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।
আজকে থেকে আট-দশ বছর আগেও গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ নিয়ে আমরা খবরের কাগজে কিছু শিরোনাম আর খবরের মধ্যেই উষ্ণায়নকে দেখতে পেতাম। যদিও বিজ্ঞানীরা তিন দশ করেও বেশি সময় ধরে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আমাদের বারবার সতর্ক করার চেষ্টা করে গেছেন।কিন্তু আমরা কেউই এর ভায়বহতা আর ব্যাপ্তি নিয়ে যেমন মাথা ঘামাই নি।তেমনি উষ্ণায়নও জলবায়ু
পরিবর্তনের বিষয়টিকে কোন রকম পাত্তাই দিইনি।যার কারণে আজ বিপর্যয়ের ঘন্টা শিয়রে বাজছে।এটা শুধু একা ভারতের কিংবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমস্যা নয়।গোটা বিশ্বজুড়েই এই সংকট অতি দ্রুত ছুটে আসছে।তবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক অতি সম্প্রতি এই সম্পর্কে ভারতের জন্য যে সতর্কবার্তা শুনিয়েছে তা ভয়াবহ।বিশ্ব ব্যাঙ্ক তাদের একটা রিপোর্টে এই সম্পর্কিত সতর্কবার্তায় বলেছে,আগামী দিনে তাপমাত্রার পারদ এতটাই চড়তে চলেছে যা মানুষের সহ্যের সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে।এতে করে বাড়বে স্বাস্থ্যহানি,প্রাণহানি এবং আর্থিক সঙ্কট।রিপোর্টে উদ্বেগের যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলো, তাপমাত্রার -পারদ প্রতি বছর তার রেকর্ডকে সে নিজেই ভেঙে দিচ্ছে।বলা হচ্ছে ভারতে বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে শীতের সময়কাল ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।গ্রীষ্মের আগমন তার স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই হয়ে যাচ্ছে।গ্রীষ্মের দাবদাহ বেড়ে যাচ্ছে এবং এই দাবদাহের সময়কাল প্রলম্বিত হচ্ছে।পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে আগামী কয়েক দশকে ভারতীয় উপমহাদেশ ঘন ঘন তাপপ্রবাহের শিকার হবে। প্রকৃতির রোষের শিকার হবে মানুষ।বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকটি হলো, ভারত সহ এই অঞ্চলে কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ না কমালে ২০৩৫ থেকে ২০৬৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই তাপপ্রবাহের হার বাড়বে ২৫ স্থায়িত্ব এবং তাপপ্রবাহের সময়কালের গুণ বেড়ে যাবে। এই জলবায়ু বিপর্যয় দেশের অর্থনীতিকেও ধাক্কা দেবে। এর ফলে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হবে দেশের উৎপাদনশীলতা।দেশের শ্রমশক্তির ৭০ ভাগ মানুষ কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে এবং তাদের বেশিরভাগ মানুষকেই সরাসরি চূড়ান্ত তাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। যে কারণে তাপমাত্রা মানুষের সহ্যসীমার বাইরে চলে গেলে উৎপাদনশীলতার উপর বড় আঘাত নেমে আসতে বাধ্য। আসলে গত ২৩ বছরে দেশে ধ্বংস হয়েছে ২.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর বনাঞ্চল।গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০০১ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে ভারতে অরণ্য ধ্বংসের ৬০ শতাংশ ঘটেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে।রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের তথ্যে বলা হয়েছে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্য ৬.৬৮ লক্ষ হেক্টর সবুজ ভূমি নিশ্চিহ্ন হয়েছে ভারত থেকে,যা গোষ্ঠি পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পরিবেশ সংক্রান্ত এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই কেন্দ্রীয় পরিবেশন, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে তলব করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। আসলে বিজ্ঞানীরা প্রতি বছরেই এই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করছেন।রিপোর্ট প্রকাশের পর দৌড়ঝাঁপ হচ্ছে।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।উন্নয়নের দোহাই দিয়ে প্রকৃতি ধ্বংসও বন্ধ হচ্ছে না। আবার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও কমছে না।খরা বন্যা,দাবদাহ, শুস্কতা নিয়ে প্রকৃতির আচরণকে নিয়ে সেমিনার হচ্ছে। ওয়েবিনার হচ্ছে।কিন্তু মানুষ নিজেকে,নিজের কর্মপদ্ধতিকে সংশোধন করছে না।যে কারণে প্রকৃতির প্রতিশোধ বাড়ছে।গত ৫০ বছরে বিশ্বে প্রকৃতি সম্পর্কিত দূর্যোগ ১০ গুন বেড়েছে।কিন্তু মানুষ আত্মঘাতী খেলা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.