ক্ষমতাহীন ন্যায়বিচার!!

 ক্ষমতাহীন ন্যায়বিচার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাষ্ট্রহীন সার্বভৌমত্ব কথাটি যেমন সোনার পাথরবাটির মতো অলিক কল্পনা, তেমনি ক্ষমতাছাড়া ন্যয়বিচার কথাটিও ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই অবাস্তব ও অকার্যকর এক ব্যবস্থা।গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইজরায়েল গাজা ভূখন্ডে যে মানবতা বিরোধী চরম পৈশাচিক হিংস্র বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে, আট মাস অতিক্রান্ত হলেও তাতে কোনও ছেদ পরেনি।এখনো পর্যন্ত এই হামলায় ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ ইজরায়েলের আক্রমণে বাস্তচ্যুত হয়েছে।হামাসের হামলায় ১২০০ এর মতো ইজরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে মানবতাবিরোধী যতগুলি নরসংহারের ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে গাঁজা তার মধ্যে অন্যতম।এই যুদ্ধে ১ লক্ষ্যের মতো আহত হয়েছেন।অথচ ওষুধ, জল, খাবার ও চিকিৎসার অভাবে আহত ও অসুস্থ সবাইকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এই গভীরতর সংকটের মধ্যেই জাতিসংঘ আদালত অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ গাজার রাফা এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইজরায়েলের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে। শুক্রবার ১৫ সদস্যক আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক প্যানেল ১৩-২ ভোটে এই রায় দিয়েছে।গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিপূর্বে একটি আবেদন জমা দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, গাজায় ইজরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর রায় দিতে গিয়েই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সংক্ষেপে আইসিজে অবিলম্বে রাফা সহ গাজায় হামলা বন্ধ করতে ইজরায়েলসে নির্দেশ দিয়েছে।একই সঙ্গে আদালত মানবিক সহায়তার জন্য রাফা সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতেই ইজরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচারালায়।এই আদালত বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার বিবাদ শুনে।এই আদালতের রায় চূড়ান্ত এবং তা পালন করা বাধ্যতামূলক।এই রায়ের বিরুদ্ধে কোথাও আপিল করার সুযোগ নেই।অথচ বিস্ময়কর হলো, আদালত তার রায় কার্যকর করতে যে ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে সে ধরনের কোনও ক্ষমতা নেই।ফলে অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই আদালতের রায় সব অভিযুক্ত রাষ্ট্রই অগ্রাহ্য করেছে। এক্ষেত্রে ইজরায়েল একই পথ অনুসরণ করেছে।রায় ঘোষণার চব্বিশ ঘন্টা না পেরোলেও ইজরায়েল এই আদেশ না মেনে গাজায় অভিযান আরো তীব্র করেছে। শুধু তাই নয়, ইজরায়েল বলছে, হামাসকে পরাজিত করার তাদের মিশন শেষ করার জন্য এই হামলা অব্যাহত রাখা জরুরি।অর্থাৎ ইজরায়েলের তরফে সরকারীভাবে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও ইজরায়েল যে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করবে, সেই সম্পর্কে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের বিশ্লেষকরা নিশ্চিত। হয়তো এই রায়ের ফলে ইজরায়েলের মিত্ররা ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে খানিকটা সংযত হবে। আরও আগের মতো ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ মেনে চলা আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা মূলক।এই রায়ের উপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আগামীতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের এ সম্পর্কিত কোন প্রস্তাবের উপর মার্কিনীরা ভেটো প্রদান করবে। অর্থাৎ জাতিসংঘ এতকাল ইজরায়েলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সুরক্ষা কবচ দিয়ে এসেছে। এবারেও আমেরিকা এর অন্যথা করবে না।হয়তো এতে করে গাজাতে রক্তক্ষয় রোধ করা যাবে না,কিন্তু কূটনৈতিকভাবে ইজরায়েল আন্তর্জাতিক আইনে অনেকটাই কোণঠাসা হবে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আরও বেশি সমালোচিত হবেন, এক ঘরে হবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল,সোনার পাথরবাটি সমান এই জাতিসংঘ এবং ক্ষমতাহীন ন্যায় বিচার সম আন্তর্জাতিক আদালতের রায়, প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করে গেলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে গাজায় অপূরণীয় ক্ষতি হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও ইজরায়েলকে প্রতিহত করার কোনও শক্তি বা ক্ষমতা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নেই।মানবতাদের সামনে এই নিদারুণ অসহায়ত্বই আগামী দিনে বিশ্বের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।আর এই বিপর্যয়ের বিজ হয়তো এই রায় লঙ্ঘনের মধ্য দিয়েই অঙ্কুরীত করার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.