মাঠ ও রেফারি!!

 মাঠ ও রেফারি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদটি গরিমা এবং গুরুত্বের বিচারে দেশের প্রধান বিচারপতির পদের সমতুল্য বলে গণ্য করা হয়।এ পদ যে কোনও সংশয়, সন্দেহ, বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে গণতন্ত্রে সেটাই বিধেয়।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ষষ্ঠ দফা নির্বাচনের পরেও দেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার স্বাক্ষর বহন করতে পারেনি।ভোটের দিন এবং পরে ঘোষিত প্রাপ্ত ভোটের হারে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান এ হেন শঙ্কার অন্যতম কারণ। অথচ বিষয়টি খুব জটিল ছিল না।
ইভিএমে ভোটার বোতাম টিপবেন।তারপর ভিভিপ্যাট থেকে একটি স্লিপ বা কাগজের টুকরো বেরিয়ে আসবে।ভোটার দেখতে পাবেন তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন।মনের সংশয় দূরীভূত হবে।অতঃপর সে সেই কাগজটি একটি বাক্সে ফেলে দেবেন।গণনার দিন ভিভিপ্যাটের স্লিপের সংখ্যার সঙ্গে ইভিএমে কত ভোট পড়েছে তার সংখ্যা মিলিয়ে নিলেই প্রথম দফার ‘অনিয়মের’ পালা সাঙ্গ। এরপর ওই স্লিপের প্রতীক চিহ্ন ধরে গুনে ফেলা এবং ইভিএমের চিহ্ন ধরে গুনে ফেলা, দুটি মিলে গেলে কোথাও কোনও গোল থাকে না।এরজন্য খুব অতিরিক্ত সময়ও যে লাগে, তাও নয়। দেড় মাসব্যাপী নির্বাচন চালানো সম্ভব হলে গণনার সময় কিছু বাড়ত হয়তো, কিন্তু সব সংশয়ের নিরসন হতো। যদিও পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে চব্বিশ লক্ষ ভিভিপ্যাট যন্ত্র কেনা যায়,তা হলে তার স্লিপ গোনা হবে না কেন?ভোট গ্রহণের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে বুথভিত্তিক ভোটের যাবতীয় পরিসংখ্যান প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল অ-সরকারী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)।গত ১৭ মে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি কার্যত খারিজ করে দিয়ে জানান,পাঁচ দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন।বাকি মাত্র দুই দফা।এই সময় এমন কোনও নির্দেশ মানা কমিশনের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক ভোটের সময়সীমা শেষে সহজভাবে প্রতিটি বুথে একটি গণনা হয়। ইভিএমে কত ভোট পড়ল, তা লেখা হয় একটি ফর্মে।তার নাম ১৭সি।ওই ফর্মে থাকে কত ভোেট ওই বুথে ছিল এবং কত ভোট পড়ল।ভোট সমাপ্তির তিন কি চার ঘণ্টার মধ্যে কমিশন বিভিন্ন বুথে ১৭সি দেখে সহজ একটি গ্রাফিক্স তৈরি করে দিত এতদিন।সেখানে লেখা থাকতো, সংশ্লিষ্ট বুথের মোট ভোটার কত, মোট কত ভোট পড়েছে এবং ভোটের শতাংশ। সেই সঙ্গে ওই ফর্মে দেখা যেত, বিগত নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে কত ভোটার ছিল,কত ভোট পড়েছিল এবং শতাংশের বিন্দুতে তা কত। খুব জটিল কিছু নয়। কিন্তু এবারই প্রথম দেখা গেল, কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করছে, সেখানে মোট ভোটারের সংখ্যাটি নেই। গতবার কত ভোট পড়েছিল, ভোটার কত, সেটিও নেই। বিগত ভোটের ‘পার্সেন্টেজ’ সম্পর্কিত কোনও তথ্যই নেই। তথ্য হিসাবে শুধু দেওয়া হয়েছে, গত শতাংশ ভোট পড়েছে, কিন্তু কত ভোট পড়েছে।
এটি বিতর্কের সূচনা হলে দ্বিতীয় ঘটনা আরও অদ্ভুত। প্রথম দফা ভোট শেষের এগারো দিন পর কমিশন জানায়,ভোটের হার ৬ শতাংশ বেড়েছে।এ ভাবে দ্বিতীয় দফা ভোটের চার দিন পরে, তৃতীয় ও চতুর্থ দফা ভোটের যথাক্রমে পাঁচ ও সাতদিন পরে জানানো হয় প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ এবং দেখা যায় আট থেকে দশ শতাংশ পর্যন্ত ভোটের হার বেড়েছে। এই হিসাবে ইতিমধ্যে দেখা গেছে, এক কোটি সাত লক্ষ ভোট বেশি পড়েছে।এই হিসাবটা করা হয়েছে শতাংশের হিসাব কষে।কিন্তু নির্বাচন কমিশন ১৭সি ফর্ম প্রকাশ করেনি। সর্বোপরি, মোট কত ভোটার ভোট দিয়েছেন, সেই তথ্যও উহ্য রাখা হয়েছে। কমিশন শীর্ষ আদালতে জানিয়েছেন, তাদের নাকি অধিকার নেই
১৭সি ফর্ম দেখার।
মাঠে রেফারি যদি ঠিক না থাকে, তবে খেলার ফলে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তবে এর অর্থ কখনওই এটা নয় যে, কমিশনের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট।তবে সন্দেহের উদ্রেককারী তো বটেই। গণতান্ত্রিক দেশে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সন্দেহের উর্ধ্বে থাকা আবশ্যিক। দেশের কোনও নাগরিকই চায় না যে, সংবিধান স্বীকৃত নির্বাচন কমিশন নিয়ে, তার কার্যকলাপ এবং কর্মপদ্ধতি নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তুলুক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.