মমতার কাঁটা কি বাম-কং?

 মমতার কাঁটা কি বাম-কং?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এদেশে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় পশ্চিমবঙ্গের ২ নির্বাচন।পশ্চিমবঙ্গে এবার কি হবে?উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পর তৃতীয় বড় রাজ্য হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।পশ্চিমবঙ্গে এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক বিজেপি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার অন্তত ৩০টি আসন আসছে বিজেপির। বিজেপির থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে করছে উত্তর ভারত থেকে বিজেপির যদি কিছুটা ক্ষতিও হয় তা পুষিয়ে দেবে এবার পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারত।তাই বিজেপি এবার এককভাবে ৩৭০ এবং এনডিএ হিসাবে ৪০০ পারের ন্যারেটিভ সেট করেছে।তা পশ্চিমবঙ্গে সত্যি সত্যিই কি বিজেপি এবার চমক দেবে?লাখ টাকার প্রশ্ন এখন এটাই।২০১১ সাল থেকে এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায়।২০১৪ সালে কেন্দ্রের গদিতে বিজেপির আসীন হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি কিছুটা শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে।২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যদিও বিজেপি তেমন সুবিধা করতে পারেনি।তবে প্রথমবার বিজেপি চমক দেয় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। সেবার বিজেপি সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলায় ১৮টি আসন জিতে নেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বিরোধী বামেদের একটা বিরাট অংশের ভোট বিজেপির দিকে শিফট করে যাওয়াতেই বিজেপির এই সাফল্য।সেই ধারা অব্যাহত থাকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও। বিজেপি সে সময়ও ২ থেকে একেবারে ৭৭-এ চলে আসে। সে সময়ও তৃণমূল বিরোধী বামেদের একটা বিশাল অংশের ভোট বিজেপির দিকে চলে যাওয়াতেই বিজেপির ভোটের শতাংশ অনেকটাই বেড়ে যায়। প্রশ্ন হলো এবার কি হবে?
বিজেপির বিপক্ষে এবার গোটা দেশে বিরোধী দলগুলি এক জোট হয়ে নির্বাচনে লড়ছে।বিপক্ষের এই জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ জোট।এই নাম বাংলার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই দেওয়া। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে বাংলায় এই ইন্ডিয়া জোট নেই বিজেপির বিপক্ষে।পাঞ্জাব, কেরল এবং বাংলায়ই এই জোট নেই।তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে, বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের প্রয়োজন নেই।বিজেপির জন্য তৃণমূলই যথেষ্ট।শেষ পর্যন্ত কং-বাম জোট করেই বাংলায় লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিকে না বুঝতে চাইলেও এখন তিনি বুঝতে পারছেন যে বাংলায়ও ইন্ডিয়া জোটের প্রয়োজন ছিল।কেননা, মমতাকে এবার বাংলায় একেবারে ছেকে ধরেছে বিজেপি।সাত দফা ভোট ঘোষণা করে বাংলার ভোটকে একেবারে ‘ম্যাপ’ করে খেলতে নেমেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু থেকে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ।একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পালা করে বাংলায় গিয়ে খাঁটি গেড়েছেন।মোদি-অমিত শাহরা প্রায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন বাংলায়।এর ফসল কতখানি বিজেপি তুলতে পারে তা সময়ই জবাব দেবে।যদিও বাংলা নিয়ে এবার কেউই তেমন একটা ভবিষ্যৎবাণী করতে পারছে না।
বাংলায় ইন্ডিয়া জোট না হওয়ায় এবার তৃণমূল, বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেস-বাম জোট রয়েছে ভোটের ময়দানে।রাজনৈতিক মহল মনে করছে ২০১৯, ২০২১ সালে বামেদের যে ভোট বিজেপির দিকে শিফট হয়েছিল তা পুনরায় এবার বামেদের দিকে যেতে চলেছে। যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে প্রশ্ন- এতে কার লাভ হবে, কার ক্ষতি হবে?মমতা মনে করছে বামেদের- কংগ্রেসের ভোট অর্থাৎ মমতা বিরোধী ভোট ভাগ হলে আখেরে তৃণমূলেরই লাভ হবে।আবার বিজেপি মনে করছে তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ হলে বিজেপির সুবিধা হবে।তাই এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বাজির রাজ্য অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ।দেখা গেছে,যদি মাত্র ৪% ভোট বিজেপির পক্ষে স্যুইং করে তাহলে বিজেপির আসন ১৮ থেকে বেড়ে ২৩ হতে পারে। আবার উল্টোদিকে ৪% ভোট যদি তৃণমূলের পক্ষে স্যুইং হয় তাহলে তৃণমূলের আসন বেড়ে ৩১ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই পশ্চিমবঙ্গে এবারের নির্বাচনে কি হয় গোটা দেশের নজর সেদিকেই রয়েছে।সে জন্যই বাংলাকে এবার অন্যতম স্যুইং স্টেট মনে করা হচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গে মমতার সবচেয়ে বড় ভোটব্যাঙ্ক হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক।এছাড়া মহিলাদের মধ্যেও মমতার প্রবল জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে তৃণমূল। বিজেপি একে জাতীয় ইস্যু বানিয়ে দিয়েছে তার প্রচারতন্ত্রের মাধ্যমে। রাজনৈতিক মহল এখনও মনে করছে যে,পশ্চিমবঙ্গে মমতাকে হারানো বেশ কঠিন। বিশেষ করে গত পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে তৃণমূলের পারফরমেন্সকে যদি ধরা যায় তাহলে বিজেপির ভোট শেয়ার উভয় নির্বাচনেই কমেছে।তবুও বলা হচ্ছে এবারের লোকসভা নির্বাচন মমতার কাছে সত্যিকার অর্থেই চ্যালেঞ্জ হয়েই দাঁড়িয়েছে।এবারের নির্বাচনে তাই বলা হচ্ছে বাম কংগ্রেসের ভোটই কি ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছে?বাম-কংগ্রেস কি ‘ভোট কাটোয়া’ হিসাবে বিজেপিকে সুবিধা করে দেবে নাকি বাম-কংগ্রেসের দিকে ভোট ভাগ করে বিজেপির ভাড়া ভাতে ছাই দেবে মমতা তা বোঝাতে গেলে ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কি?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.