মোদির সামনে এন ফ্যাক্টর!!

 মোদির সামনে এন ফ্যাক্টর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- সিংহাসন তো দুই পা ফেলিলেই, আর রাজমুকুট হাতের নাগালে। এই ন্যূনতম দূরত্বকে মহাসমুদ্রের সমান বিশাল মনে হইতেছে। যত সময় আগাইতেছে দূরত্ব যেন ততই বাড়িতেছে। তিন তিনবারের গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর তজরুবা লইয়া গুজরাট মডেলে দুই দুই দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব করিয়াছেন যে মোদি তাহাকেই আজ আয়না দেখাইতেছেন ‘শাহজাদা-রা। রাজীব গান্ধী, মুলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদের, বালাসাহেবের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম- যাহারা শাহজাদা নামে বারবার উচ্চারিত হইয়াছেন মোদি শাহের মুখে তাহারাই আয়না ধরিতেছেন এই সময়ে। সংখ্যাগতভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ মোদি-শাহ এই সময়ে সরকার গড়িবার প্রয়াস লইয়াছেন। রাষ্ট্রপতি মোদিকে সেই অনুমতি দিয়াছেন। কিন্তু অপর দিকে ইন্ডিয়া জোট বা এনডিএ জোটের বাইরের অন্যান্য তালিকাভুক্তরা আসিয়া জুটিতেছে কংগ্রেসের সঙ্গে। ভোটের গণনায় কংগ্রেস দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হইয়া আসিয়াছে। গণনায় তাহারা তিন অঙ্কে যাইতে পারে নাই। গণনায় ৯৯ সংখ্যাতেই আটকাইয়াছিল। কিন্তু গণনা শেষ হইবার পর দুই দিনের মাথায় তাহাদের সংখ্যা বাড়িয়া ১০১ হইয়াছে, দিন কয়েকের মধ্যে কংগ্রেস ১০৩ হইতে চলিয়াছে, এমনই অনুমান। অথচ এই সময়ে খুচরা অঙ্কগুলি সংখ্যা গরিষ্ঠের সঙ্গেই জুড়িয়া থাকে। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের মতন এই ঘটনাও যথেষ্ট চমকপ্রদ। যাহারা সরকার গড়িবেন তাহাদের নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখিতে পারিতেছেন না নির্দল বা জোটহীন দলের সাংসদেরা। তাহারাও কি বুঝিতেছেন জে মোদি তৃতীয়বারের জন্য সিংহাসন লগ্ন হইলেও সেই সিংহাসন বাস্তবে কণ্টকাকীর্ণ? রাজামুকুট মসলিনের নয়, ইহা এক কাঁটার মুকুট করে মোদি শাহ কিন্তু সম্যক বুঝিতেছেন ইহা, কিন্তু মুখে প্রকাশ করিবার সাহস দেখাইতেছে না। বরং মোদিকে নেহেরুর সঙ্গে তুলনা করিয়া তুল আত্মপ্রসাদ লাভের চেষ্টা করিতেছেন। এই সময়ে মোদি শাহের বড় দায়িত্ব হইতেছে শরিকগণকে খুশি রাখিয়া ঘরের ভেতরের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা। এই কাজ কোনটাই সহজ নহে। ঘরের অশান্তি বাহিরের সমান ঘাতক হইয়া উঠিতে পারে। বিজেপির সংসদীয় সভায় নেতা নির্বাচন এখনও সম্পন্ন হয় নাই। সেই বৈঠকে সাধারণ কোনও সাংসদ দলের শোচনীয় অবস্থার জন্য মোদি শাহের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারেন, এমন ভাবনার কোনও অবকাশ না থাকিলেও কেহ কেহ, যারা সঙ্ঘের আশীর্বাদধন্য রহিয়াছেন তাঁরা তো প্রশ্ন তুলিতেই পারেন। সেই পরিবেশ সামাল দিতে হইবে মোদি শাহকে। এখন প্রশ্ন উঁকি দিতেছে, সকল দিক সামলাইয়া সত্যই কি রবিবারের সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হইতে পারিবেন মোদি? যত বেলা বাড়িতেছে ততই সঙ্কট তীব্র হইতে দেখা দিয়েছে। আড়াই- তিন মাসের ভোট প্রচারে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার অনুচর শাহ হিন্দু সলিম প্রসঙ্গ আনিয়া বারবার কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধীদের পর্যুদস্ত করিতে চাহিয়াছেন। মঙ্গলসূত্র ইস্যুতে বলিয়াছেন ইন্ডিয়া জোট ব্রেকারে আসিলে তাহারা হিন্দুদের সম্পদ ছিনাইয়া লইয়া নলমানদের হাতে তুলিয়া দিবে। ইন্ডিয়া জোট ধর্মের নামে সংরক্ষণ চালু করিবে, যাহা তিনি কখনোই মানিবেন না। কিন্তু আজকের দিনে যাদির নেতৃত্বে সরকার গঠন হইলে মোদিকেই প্রথম ধর্মের নামে মুসলিমদের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশে, বিহারে সংরক্ষণ চালু করিতে হইতেছে। কারণ এন ফ্যাক্টরের(নীতীশ-নাইডু) এইটাই আজ প্রথম দাবি। চন্দ্রবাবু নাইডু তার রাজ্যের মুসলিমদের জন্য চার শতাংশ সংরক্ষণের কথা তাহাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে রাখিয়াছিলেন। এই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে বিজেপির কোনও আপত্তি ছিল না জোট গড়িরার ক্ষেত্রে। ফলে মোদির পক্ষে এন ফ্যাক্টর এক্ষণে কোনমতেই অস্বীকার করা সম্ভব নহে। চন্দ্রবাবু নাইডু এই সময়ে চার শতাংশ সংরক্ষণের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে এক লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা পাড়িতেছেন। অন্যদিকে নীতীশ বলিতেছেন, অগ্নিবীর প্রকল্পের পুনর্বিচার, পর্যালোচনা। এই বিষয়গুলি বিজেপি এবং মোদির এই দেশে ‘হিন্দু খতরে মে’ ন্যারেটিভের বিপরীত বিষয়, যাহা ক্ষমতার জন্য মোদি শাহকে চোখ বুজিয়া চিরতা-তিতার মতন হজম করিতে হইবে, হইতেছে। কারণ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণের পর্যায় শেষ করিয়া ফেলা হইয়াছে। একদিকে এন ফ্যাক্টর মোকাবিলা করিয়া ঘরের অভ্যন্তরে শাস্তি আনয়নের বিশাল দায় পালন করা অন্যদিকে রহিয়াছে ইন্ডিয়া জোটের নানা ছক ভাঙিয়া অগ্রবর্তী হওয়া। তাহাদের তূণীরে কত বাণ রহিয়াছে কে জানে? সরকার গঠনের আগেই সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণের আগেই কংগ্রেসের তরফে এক নতুন অভিযোগ তুলিয়া আনা হইলো এবং তার তদন্তে জেপিসি বা জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি গঠনের দাবি জানানো হইলো। ইডি সিবিআই শুনিতে শুনিতে এই দেশের মানুষ মোদি আমলে জেপিসি তদন্তের কথা ভুলিতেই বসিয়াছিল। ভোট চলাকালে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে চিনের আগ্রাসন সম্পর্কে কথা না বলা, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সম্পর্কে নীরবতা এবং ওষুধ কোম্পানির কাছ হইতে নির্বাচনি বন্ড নেওয়ার মতন অজস্র অভিযোগের পাশাপাশি আম্বানি আদানির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনিয়াছিল। আর ভোটের ফল প্রকাশের পর আনা হইলো শেয়ার বাজারে টাকা খাটাইতে মোদি শাহ এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অযাচিত পরামর্শের অভিযোগ। নিয়েছে
রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলিলেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর কাজ হইলো দেশ পরিচালনা। কে কোথায় কখন টাকা বিনিয়োগ করিবেন সেই বিষয়ে পরামর্শদান তাহাদের কাজ নহে। আদানির যে টিভি চ্যানেলে বসিয়া প্রধানমন্ত্রী কথা বলিলেন সেই সংস্থা সেবির নজরদারিতে রহিয়াছে। প্রধানমন্ত্রীর সেই সকল বক্তব্যের সঙ্গে জালি এগজিট পোল সংস্থার এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে কিনা তাহার তদন্ত দরকার রহিয়াছে। কারণ মোদি শাহদের পরামর্শ মতন এই সময়ে পাঁচ হাজার পরিবার ত্রিশ লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে লোকসানের সম্মুখীন হইয়াছে। এই গোটা বিষয়টির জেপিসি চাহিলেন রাহুল গান্ধী। নিঃসন্দেহে এই ঘটনাগুলি মোদি শাহের ওপর আলাদা করিয়া চাপ আনিতেছে ও পরিবেশ, পরিস্থিতি আরও ঘোরালো বানাইতেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.