প্রতিরোধ ও হুমকিতে উচ্ছেদ অভিযান থেকে পিছলো প্রশাসন!!

 প্রতিরোধ ও হুমকিতে উচ্ছেদ অভিযান থেকে পিছলো প্রশাসন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্ত মহিলাদের প্রতিরোধ এবং হুমকিতে পিছু হটল বন দপ্তর। ফলে শুক্রবারে জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে জেলা বন দপ্তর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্ত মহিলারা উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই নড়েচড়ে বসে জেলা । তবে প্রশাসন। বন্ধ রাখা হয় উদ্বাস্তুদের বনাঞ্চল থেকে জোর করে তুলে দেওয়ার কর্মসূচি। বন দপ্তর থেকে উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণার পরই যেভাবে পাল্টা প্রতিরোধে তৈরি করেছে পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত বাস্তুহারা ভূমিহীন মহিলারা তা এক কথায় নজির বিহীন ঘটনা। এদিকে, পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়িয়েছে পানিসাগর এলাকার মানুষ। উত্তর জেলার বুদ্ধিজীবীরা পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্তুদের স্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উত্তর জেলার বন দপ্তরের অন্তর্গত পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্ত মহিলারা লাঠিসোঁটা, দা ব্যারিকেড তৈরি করেছিল। এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ফলে জেলা বন দপ্তর দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এদিকে, শুক্রবার পানিসাগর এলাকার বাসিন্দারা পেকুছড়া বনাঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্তুদের পক্ষে জেলা বন আধিকারিককে এক ডেপুটেশন দিয়েছে। পেকুছড়ায় আসা উদ্বাস্তুদের সাথে দ্বিচারিতা না করে সকল দখলকারীদের সাথে একই পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে উত্তর জেলা বন আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দেয় স্থানীয়রা শুক্রবার। পাশাপাশি তারা এও জানিয়েছে বন দপ্তর যদি সদ্য আসা উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করতে কোনও রকমের বলপূর্বক অভিযান চালায় সেক্ষেত্রে উদ্বাস্ত পরিবারগুলোর পক্ষে থেকে গোটা গ্রামের জনগণ বন দপ্তরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের এই সিদ্ধান্তে কিন্তু বেকায়দায় বন দপ্তর। প্রসঙ্গত, একমাস আগে পানিসাগর ও কাঞ্চনপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পেকুছড়ায় আসা উদবাস্তুদের দ্বারা দখলকৃত বনদপ্তরের জাইকা প্রকল্পের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় তিনটি উদবাস্তুদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় তিনটি নোটিশ জারি করেছেন বন দপ্তর। সর্বশেষ নোটিশের সময়সীমা ছিল ৬ জুন অর্থাৎ ৬ জনের মধ্যে সদ্য আসা উদ্বাস্তদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল বন দপ্তর। এরই মধ্যে অসহায় উদ্বাস্তুদের পাশে এসে দাঁড়ালেন পানিসাগরের পেকুছড়ার স্থায়ী বসবাসকারী গ্রামের জনগণ। তাদের বক্তব্য এই এলাকার জাইকা প্রকল্পের জায়গা দীর্ঘদিন থেকে ক্রমান্বয়ে বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। কিন্তু এতদিন রাজ্যের বন দপ্তর নীরব ভূমিকা পালন করে কাউকেই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার জন্য কোনওরকমের চাপ সৃষ্টি করেনি। এমনকী এমনও অনেকজন রয়েছে যাদের নিজস্ব জায়গা থাকার পরেও তারা ইচ্ছে মাফিক বন দপ্তরের জায়গা দখল করে রেখেছে। আরও অনেকজন রয়েছেন যারা বছরের পর বছর বন দপ্তরের জায়গার ওপর ক্ষেত কৃষি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। পাশাপাশি বহু লোক অবৈধভাবে বন দপ্তরের জায়গা কেনা বেচার কাজেও যুক্ত রয়েছেন বলে এই দিন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। এর সাথে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ বন দপ্তরের জাইকা প্রকল্পের জায়গার উপর কোনও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। অথচ বন দপ্তর তা দেখেও কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু গত একমাস আগে কাঞ্চনপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অসহায় উদ্বাস্তুরা যখন বনদপ্তরের জায়গায় একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই নেওয়ার আশায় এখানে আসতেই বন দপ্তর তাদের ক্রমাগত নোটিশের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। যা সম্পূর্ণরূপে দ্বিচারিতা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাই স্থানীয় জনগণের স্পষ্ট বক্তব্য বন দপ্তরের জায়গা থেকে সদ্য আসা উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করতে হলে একই এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে যারা বন দপ্তরে জায়গা দখল করে রেখেছে তাদেরও উচ্ছেদ করতে হবে। অন্যথায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা উদ্বাস্তুদের পক্ষে দাঁড়িয়ে বন দপ্তরের বিরোধিতায় শামিল হবেন। এই মর্মে শুক্রবার সকালে পানিসাগারের পেকুছড়া থেকে আগত স্থানীয় গ্রামবাসীদের একটি প্রতিনিধি দল উত্তর জেলা বন আধিকারিকের কাছে একটি স্মারকপত্র তুলে দেন এবং ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে দ্বিচারিতার বদলে যারাই উক্ত এলাকায় বন দপ্তরের জায়গা জবরদখল করে রেখেছেন সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি রেখে আগামীর প্রক্রিয়া গ্রহণের অনুরোধ করেন। শুক্রবার জেলা বন আধিকারিকের কাছে প্রতিনিধিমূলক এই ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এলাকার উত্তম রায়, সুভাষ চন্দ, স্বপন দাস, নির্মল মালাকার, দ্বিজেন্দ্র দাস এই পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.