বিদ্যাজ্যোতিতে বোর্ড পরীক্ষা ইংরেজিতে, ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সিবিএসই পরিচালিত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফল হল। মাধ্যমিকে প্রায় চল্লিশ শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৩৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাস করতে পারলেন না।এরপরও রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের মতি ফিরল না।উল্টো প্রায় একবছর আগের সিদ্ধান্ত কার্যকরে তোড়জোড় শুরু করে দিল দপ্তর।ফলে রাজ্যের প্রায় লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার পথে।লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর মাঝপথে পঠনপাঠন বন্ধের সম্ভাবনা প্রবল।
রাজ্য সরকার প্রায় এক বছর আগে এক নির্দেশে বলেছে সিবিএসইর অনুমোদিত বাংলা স্কুলগুলিতে ২০২৬ থেকে ইংরেজি ভাষাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হবে।২০২৬ সাল থেকে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বোর্ডের পরীক্ষা ইংরেজিতে দিতে হবে।সারা দেশেই সিবিএসই পরিচালিত-অনুমোদিত স্কুলে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পঠনপাঠন ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষাতে হয়। ফলে সিবিএসইর স্কুলে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি-হিন্দি ভাষাতে হয়। ফলে সিবিএসইর স্কুলে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি-হিন্দি ভাষাতে স্কুলে নিয়মিত পঠনপাঠন এবং দশম ও দ্বাদশের ফাইনাল পরীক্ষা ইংরেজি-হিন্দি ভাষাতে দিতে অসুবিধা হচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ত্রিপুরা। যা ২০১৪ সালের ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছে। এখন যদি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে দশম ও দ্বাদশের পরিক্ষা পুরোপুরি ইংরেজি ভাষাতে দিতে হয়। তবে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের করুণ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ত্রিপুরা। রাজ্যে ন্যূনতম পঠনপাঠনের পরিকাঠামো না থাকলেও রাজ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২৫ টি সরকারী স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে আনা হয়। এই ১২৫টি সরকারী স্কুলের মধ্যে ৮৮ টি স্কুল জন্মলগ্ন থেকে বাংলা মাধ্যমে বিদ্যালয়।তবে অবাক করার বিষয় হলো রাজ্য সরকার ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলকে রাতারাতি আবার সিবিএসই বোর্ডে পরিবর্তন করে নিল।
এই ১২৫টি স্কুলের মধ্যে আবার ৮৮টি স্কুল বাংলা মাধ্যমের। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ। তাই সহজেই অনুমেয় রাজ্য সরকারের এক সিদ্ধান্তে ৮৮টি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর কী করুণ দশা।সিবিএসই সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম হলো সিবিএসই স্কুলে পঠনপাঠন এবং পরীক্ষা হিন্দি ইংরেজি ভাষাতে হবে। তবে রাজ্যে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে সিবিএসইতে পরিণত করা হল। লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীকে বিপাকে ফেলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেল রাজ্যে।অথচ রাতারাতি ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষৎ থেকে বাংলা স্কুলগুলিকে সিবিএসই বোর্ডের অধীনে নেওয়ার পরিণতি দশম ও দ্বাদশের ফলাফলেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন আবার ২০২৬ সাল থেকে ইংরেজিতে পরিক্ষা গ্রহণের দৌড়ঝাঁপ ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, একজন বাংলা মাধ্যমের ছাত্রযছাত্রী প্রথম শ্রেণী থেকেই ইংরেজি ছাড়া সব বিষয় বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠন করছে।কিন্তু এই সিদ্ধান্তের জন্য বাংলা মাধ্যমে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হবে ইংরেজিতে।এটা কি সম্ভব? একজন বাংলা মাধ্যমের ছাত্র/ছাত্রী প্রথম থেকে নবম শ্রেণী এবং একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠনের পর দশম ও দ্বাদশে হঠাৎ করে ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষাতে বোর্ডের পরীক্ষা দেবে এটাও কি বাস্তবে সম্ভব?একমাত্র হিন্দি সিনেমাতেই এটা সম্ভব হবে যা করতে চাইছে রাজ্য সরকার, শিক্ষা দপ্তর বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য সরকার, শিক্ষা দপ্তর বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকার, শিক্ষা দপ্তরের এ বিষয়ে যুক্তি হলো ২০২৫ সালের মধ্যে নাকি সরকারী ৮৮টি বাংলা স্কুলকে ধাপে ধাপে ইংরেজিতে পরিবর্তন করা হবে।এই ৮৮টি সহ রাজ্যের হাজারো সরকারী বাংলা স্কুলে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পঠনপাঠন করছে।ফলে এই স্কুলগুলি ইংরেজিতে পরিবর্তন করার সাথে সাথে পঠনপাঠন বন্ধ। কারণ সিবিএসই স্কুলে পাঠনপাঠনের খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই বলে তারা বাংলা স্কুলে পড়াশোনা করছে।বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে ইংরেজিতে পরবির্তন করার পর পঠনপাঠন করাবেন কে? কারণ যে সব শিক্ষক শিক্ষিকা এই স্কুলগুলিতে শিক্ষকতা করছেন তারাও তো বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী ছিলেন।টেট,এসটিজিটি, এসটিপিজিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকারাও অধিকাংশ বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী। তবে কেন রাজ্য সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্ত?শিক্ষক শিক্ষিকাদের ইংরেজি ভাষাতে পঠনপাঠনে প্রশিক্ষণ রাজ্যে আগামী দশ বছরেও শেষ হবে না। রাজ্যে কোনও পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শুধুমাত্র ছেলেখেলা চলছে। ভাবনাচিন্তা এইরকম যে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।অথচ বাংলা মাধ্যমে স্কুলে পঠনপাঠন করেই রাজ্যে, দেশ-বিদেশে ও রাজ্য প্রশাসন সহ সর্বক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা ত্রিপুরার নাম উজ্জ্বল করছেন।