জুলুম আর কতদিন?
রাজ্যের বিমান যাত্রীদের উপর বিমান সংস্থাগুলির জুলুম দিন দিন বেড়েই চলেছে।কিন্তু কোনও মতেই এর থেকে কোনও পরিত্রাণের রাস্তা নেই।খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে রোগী নেওয়ার ক্ষেত্রে যে স্ট্রেচার ব্যবহার করা হয় সেই স্ট্রেচারের ভাড়া এক ধাক্কায় ২০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।এতে করে শুধু বিমানে একজন রোগীকে স্ট্রেচারে করে কলকাতায় নিয়ে যেতে গেলেই ভাড়া গুনতে হবে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা।এর উপর আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে আরও প্রায় লাখ খানেক টাকা রয়েছে।তো শুধু কলকাতায় এখন থেকে রাজ্যের একজন রোগীকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য স্ট্রেচারে নিয়ে যেতে গেলে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভাড়া গুনতে হবে ন্যূনতম আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। চিকিৎসা শুরুর আগেই যদি রোগীর এই পরিমাণ টাকা পকেট থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সহজেই অনুমেয় রাজ্যবাসী কীরকম নির্মম পরিণতি এতদিন ধরে বহন করে আসছে এবং আগামীতেও তাদের বহন করতে হবে।
বিমান সংস্থাগুলির যাত্রীদের উপর এ ধরনের মর্জিমাফিক ভাড়া চাপানো রাজ্যবাসীর উপর এক প্রকার জুলুমবাজি করার শামিল।এটা সকলেরই জানা,রেল আসার পর একাংশ যাত্রী এখন বহিঃরাজ্যের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে রেলকেও ব্যবহার করে থাকেন।কিন্তু এখনও এটা নির্মম সত্য যে রাজ্যের সিংহভাগ রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজন ধারদেনা করেই বিমানেই কলকাতা থেকে শুরু করের হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর মতো স্থানে উন্নততর চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।আর জটিল,গুরুতর কিংবা আপৎকালীন রোগীর জন্যই স্ট্রেচারে রোগীকে নিয়ে যেতে হয়।সেক্ষেত্রে যেহেতু কলকাতাই আমাদের সব থেকে কাছের গন্তব্য তাই সবাই কলকাতাকেই প্রথম পছন্দ হিসাবে বাছাই করেন। প্রশ্ন হল বিমান সংস্থাগুলি যদি রাজ্যের রোগীদের পকেট কাটতে গিয়ে এ ধরনের জুলুমবাজি করে তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? এটাও নির্মম সত্য যে, ত্রিপুরা থেকে এযাবৎকালীন যত সংখ্যক মুমূর্ষ রোগী বিমানে স্ট্রেচারে করে বহিঃরাজ্যে উন্নততর চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছে তা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যের সাথে পরিসংখ্যানেই আসবে না। কেননা, স্ট্রেচারে করে মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানে বহিঃরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার বিরল দৃশ্য ভারতের অন্য রাজ্যে আর দেখা পাওয়া বড়ই দুষ্কর।তাই এ রাজ্যের বিমানযাত্রী এবং রোগীদের উপর একপ্রকার জুলুমবাজি চালানো বিমান সংস্থাগুলির নিয়মিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিমান সংস্থাগুলি ওঁত পেতে বসে থাকে কখন পাহাড় লাইনে ধস পড়বে আর বিমান ভাড়া বাড়ানো যায়।বিমান সংস্থাগুলি ওঁত পেতে বসে থাকে কখন পুজো আসবে, গ্রীষ্মের ছুটি পড়বে, শীতের ছুটি পড়বে আর বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের উপর কোপ বসানো হবে।
অথচ এ রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে যত সংখ্যক মানুষ বিমান চড়েন তা এক কথায় নজির।যখন রাজ্যে একটি মাত্র সংস্থার বিমান চলতো তখনও বিমানের টিকিট নিয়ে মার মার কাট কাট অবস্থা ছিল।আজকের দিনে কুড়িটির মতো উড়ান প্রতিদিন আগরতলা সেক্টরে যাওয়া-আসা করলেও যাত্রী কিন্তু একচুলও কমেনি।বরং যাত্রী দিন দিনই বাড়ছে।বরং আরও নতুন নতুন জায়গায় কবে বিমান পরিষেবা চালু হবে যাত্রী সাধারণ গভীর উৎসাহ নিয়ে বসে থাকে। অর্থাৎ এক কথায়, এ রাজ্যে বিমান যোগাযোগ বা বিমান পরিষেবা বিমান সংস্থাগুলির কাছে একটা লাভের ক্ষেত্র। মাত্র ৩৫ মিনিটের বিমান চড়ার জন্য বিমান সংস্থাগুলি ২০/২২/২৫ হাজার টাকাও পর্যন্ত ভাড়া নেয়।এমন খবরও মাঝেমধ্যেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে।এবার এয়ার ইন্ডিয়াও স্ট্রেচারে মুমূর্ষু রোগীকে যে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে যে লাগামহীন দাম বৃদ্ধি করেছে এক লাফে তা এককথায় নজিরবিহীন।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এখন বিমান সংস্থাগুলির উপর আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। সবই এখন বেসরকারী বিমান পরিষেবা। একটা যাও ছিল এয়ার ইন্ডিয়া- রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহণ সংস্থা।তাও সংস্থাটি টাটা কিনে নিয়েছে।সমস্ত বিমান পরিবহণ সংস্থা এখন বেসরকারী হাতে। ফলে তাদের ইচ্ছে মতোই সব হচ্ছে। নামে একটা শুধু কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক রয়েছে।এই মন্ত্রকের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।রাজ্য সরকারেরও কিছু ক্ষমতা নেই।চিঠি চালাচালি ছাড়া রাজ সরকারের কোনও কাজ এবং ক্ষমতা দুটোই নেই।ফলে সাধারণ মানুষকে সব ধরনের জুলুম সহ্য করেই বিমানে যাতায়াত করতে হয়।কেউ তাদের খোঁজখবর রাখার মতো নেই।শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে দরবার করবেন তাও তাদের অজান।ফলে নিত্য জুলুমবাজি সহ্য করা ছাড়া আপাতত তাদের আর কিছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না।