পশ্চাৎমুখী প্রবণতা
অনলাইন প্রতিনিধি :- এ বছর ২০২৪ সালকে গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে উৎকর্ণতম বছর হিসেবে হিসেবে মনে করা হচ্ছে। কারণ এই মুহূর্তে বিশ্ব জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মতো অবস্থায় আছেন। যা এর আগে কখনও ভাবা যায়নি। তার চেয়েও বড় কথা হল, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব এই ২০২৪ সালেই সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে এবং গৌরবজনক একটা পর্যায়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বে এমন ১৫ টি দেশ রয়েছে, যেখানে মহিলা হলেন রাষ্ট্রপ্রধান। আবার এমন ১৬টি দেশ রয়েছে যেখানে একজন মহিলা হলেন সরকার প্রধান। ইউরোপের দেশগুলোকে নারীদের ভোটাধিকার এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব অনেক বছর আগে থেকেই শুরু হলেও, এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলোতে সেই অর্থে নারীদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে আরোহণের দিনকে কোরবা ঘটনা বেশি দিনের ঘটনা নয়। যেমন ধরা যাক, ১৮৯৩ সালে নারীদের পূর্বত ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিল নিউজিল্যান্ড। নরওয়ে ১৯০৭ সালে নারীদের প্রথম সংসদে প্রবেশ করতে দেখছে। আর ভারতে প্রথম নারী দেশের সরকার প্রধান হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। যদিও অবিচা এতগুলো বছর পরেও রাজনীতিতে এবং নেতৃত্বের ভূমিকায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব যে পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রয়োজন ছিল বিগত দিনগুলোতে চলেন সেই লক্ষ্যমাত্রায় তা যেতে পারেনি। মাত্র ক’দিন আগেই ২০২৪ সালে মুসলা অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন হয়ে গেছে আমাদের দেশে। ৫৪৩ আসনের নিগুলে লোকসভায় ৪৬৭ জন পুরুষের সাথে ৭৪ জন মহিলা সাংসদ পদে করতে নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদে মহিলা প্রতিনিধিত্বের নিরীখে এই সংখ্যাটা মোট সাংসদের মাত্র ১৩.৬ শতাংশ। যা গত লোকসভার তুলনায়ও কম। ২০১৯সালে লোকসভায় নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধির পরিমাণ ছিল ১৪.৪ শতাংশ। অর্থাৎ সংসদে মহিলা প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে নারীদের আরও একটু উন্নত অবস্থান ও সাফল্য অর্জন করা উচিত ছিল। যা এবার লোকসভার নির্বাচনে মহিলা সংসদের সংখ্যার নিরীখে আশাপ্রদ নয়। অথচ সংসদে ঐতিহাসিক মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস হওয়ার পর এটাই ছিল ভারতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন। যদিও সঠিক অর্থে বিশ্বের রূপায়ণ ও কার্যকরণ যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ বিষয়। কারণ বিলে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার জন্য মহিলাদের এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। দেখা গেছে গত বছর ২০২৩ সালে, বিশ্বের ৫২ টি দেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনগুলোতে গড়ে ২৮ শতাংশ মহিলা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন। আর আজকের দিনের গোটা পৃথিবীতে সমস্ত সংসদ সদস্যদের ২৭ শতাংশই নারী। অথচ আমাদের দেশে সংসদীয় মহি রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কমছে। এবছর অষ্টাদশ লোকসভা জাত নির্বাচনের পর ভারতের সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের নিরীখে ১৮৫ টি কর দেশের মধ্যে আমাদের দেশের স্থান ১৪৩ নম্বরে। স্বাভাবিক কারণেই মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, ভারতের রাজনীতিতে উৎ মহিলা প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে এই পশ্চাৎমুখী প্রবণতার কারণটা কী? দেশের প্রথম লোকসভায় মহিলা প্রতিনিধিত্বের হার ছিল প্রায় চার শতাংশ। অথচ এই বছর নির্বাচনের পর এই হার দাঁড়িয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। অর্থাৎ স্বাধীনতার গত ৭৫ বছরে লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১০শতাংশ বাড়েনি। ভারতের সমস্ত রাজ্য বিধানসভা তথা আইনকক্ষগুলোতে মহিলা এমএলএদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। জাতীয় গড় মাত্র ৯ শতাংশ। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে দেশে মোট ভোটার ছিলেন ৯৬ কোটি ৮৮ লক্ষ। এর মধ্যে ৪৭ কোটি ১৫ লক্ষ মহিলা ভোটার। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটি ভোটার, যেখানে নারী ছিলেন ৩২ কোটি ২০ লক্ষ। অর্থাৎ নারী ভোটারের তুলনায় নারীর প্রতিনিধিত্ব নেহাৎই কম। ভোটে মহিলা প্রার্থী ছিলেন ১০ শতাংশেরও কম। ১৫৫ টি আসনে কোন মহিলা প্রার্থী ছিলেন না লোকসভা ভোটে। নির্বাচনে জয়ী সবচেয়ে বড় দল বিজেপির মহিলা সাংসদ ৩২ জন। অথচ তাদের ৪৪১ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা ছিলেন মাত্র ১৬ শতাংশ অর্থাৎ ৬৯ জন। কংগ্রেস ভোটে ৪১ জন মহিলাকে টিকিটি দিয়েছিল। জিতেছেন ১৩ জন। এই পরিসংখ্যান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, সংসদে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণে প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলই গলা ফাটালেও মূল লক্ষ্য পূরণে রাস্তা থেকৌ সকলেই এখনও অনেক মাইল দূরে। তাই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহ সুনিশ্চিত ও সফলদায়ী করতে হলে রাজনৈতিক দলকেই নিজের অবস্থান মুস দৃষ্টিকোণ ও মনোযোগ বদল ঘটাতে হবে। সংরক্ষণ তো কথার কথা মাত্র।