কঠোর ব্যবস্থার বার্তা দিয়ে রাজ্য ছাড়লেন চেয়ারম্যান!!

 কঠোর ব্যবস্থার বার্তা দিয়ে রাজ্য ছাড়লেন চেয়ারম্যান!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-দুর্নীতির
আখড়ায় পরিণত হয়েছে ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেট। গতকাল রবিবার ও আজ সোমবার পরপর দুদিন পত্রিকায় ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেটের যাবতীয় দুর্নীতির তথ্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।রবিবারই দুই ডাইরেক্টরকে সাথে নিয়ে আগরতলা ছুটে এসেছিলেন ওএনজিসি’র চেয়ারম্যান অরুণ কুমার সিং।আগরতলা এসেই বিকাল পাঁচটা থেকে একেবারে রুদ্ধদ্ধার বৈঠকে বসেন।বৈঠকের সারমর্ম গতকাল খুব একটা জানা না গেলেও,আজ কিছুটা হলেও আমাদের কাছে এসেছে। জানা গেছে, ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেটে নজির বিহীন জ্বালানি(পেট্রাল এবং ডিজেল)চুরির ঘটনায় চারজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন চেয়ারম্যান অরুণ কুমার সিং।বৈঠকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন,কেন তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়নি?এই চারজনের মধ্যে একজন জেনারেল ম্যানেজার,একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, একজন ম্যানেজার এবং একজন স্টোর ইনচার্জ পদে রয়েছেন।যেকোনও সময়ই তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল হতে পারে আমতলী থানায়।ফলে জ্বালানি দুর্নীতি (চুরি) কাণ্ডে ওই চার আধিকারিক গ্রেপ্তার হতে পারেন এবং চাকরি থেকে সাসপেন্ডও হতে পারেন।জানা গেছে, গতকাল বৈঠকে চেয়ারম্যান এবং দুই ডাইরেক্টরের এতটাই ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে যে তাঁরা বৈঠকের শুরুতে অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছ থেকে ফুলের তোড়া পর্যন্ত গ্রহণ করেননি।আলোচনা কালে অ্যাসেট ম্যানেজার ত্রিপুরায় ওএনজিসির যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উত্থাপন করেন। জানা গেছে,ওই প্রেজেন্টেশনের একাধিক জায়গায় যে ভুয়ো তথ্য রয়েছে,তা চেয়ারম্যান ও দুই ডাইরেক্টরের নজর এড়ায়নি। তাঁরা পুরো বিষয়গুলি পয়েন্ট আউট করেছেন এবং অ্যাসেট ম্যানেজারকেও কাঠগড়ায় তুলে একপ্রকার তুলোধুনো করেছেন।
জানা গেছে, ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেটের ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন চেয়ারম্যান। ভূতাত্ত্বিক বিভাগে যারা কাজ করেন তাদের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা, ২০২৩ সাল থেকে ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ৩০ টি জায়গায় গ্যাসের জন্য ড্রিলিং করা হয়েছে।গ্যাস পাওয়া গেছে মাত্র তিনটি জায়গায়। জানা গেছে, প্রতিটি ড্রিলিং-এ খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।প্রশ্ন উঠেছে, ভূতাত্ত্বিক বিভাগ ড্রিলিং করার আগে তাহলে কী কী ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করছে? যেখানে ৯৫ শতাংশই বিফলে যাচ্ছে।এতে বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ হলেও সাফল্য একেবারে তলানিতে। অভিযোগ,গ্যাস অনুসন্ধানেও বড় ধরনের ঘোটালা চলছে। তবে বিস্ময়ের ঘটনা হলো, চেয়ারম্যান অরুণ কুমার দুই ডাইরেক্টরকে সাথে গিয়ে আগরতলা এলেও, কোনও এক রহস্যজনক কারণে ওএনজিসির ভূতাত্ত্বিক বিভাগের ডাইরেক্টরকে সাথে নিয়ে আসেননি।গ্যাস অনুসন্ধানের নামে,ত্রিপুরায় কী চলছে?সে সম্পর্কে অবহিত হতে পারতেন।
জানা গেছে, বৈঠকে চেয়ারম্যান গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য টার্গেট বেঁধে দিয়ে
গেছেন।আগামী তিন মাসের মধ্যে ত্রিপুরায় গ্যাসের উৎপাদন প্রতিদিন ৪০ লক্ষ
কিউবিক মিটারে নিয়ে যেতে হবে।শুধু তাই নয়, ২০২৫-এর মধ্যে উৎপাদন নিয়ে যেতে হবে প্রতিদিন ৫২ লক্ষ কিউবিক মিটার।জানা গেছে, টাক্কাতুলসিতে গ্যাস পাওয়া গেছে।সেখানে মাটির নীচে বিশাল গ্যাসের ভান্ডার রয়েছে।এখান থেকে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ২লক্ষ কিউবিক মিটার গ্যাস উত্তোলন করা যাবে।
কিন্তু গত তিনমাস ধরে এখানে কোনও কাজ করা যাচ্ছে না।কেননা,ওই জায়গাটি পাট্টা দেওয়া ভূমিতে পড়েছে।স্থানীয় জনজাতিরা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
তাদের দাবি জায়গা নিতে হলে তাদের অর্থ প্রদান করতে হবে।এর সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক মাফিয়া ও জমির দালাল। প্রশ্ন হচ্ছে, পাট্টা দেওয়া জমির মালিক হচ্ছে রাজ্য সরকার।অথচ অর্থ চাইছে পাট্টা প্রাপকরা।প্রশাসনও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে।শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেট ম্যানেজারেরও কোনও সদর্থক উদ্যোগ নেই। বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর। তবে সব থেকে উল্লেখযোগ্য
ঘটনা হলো, ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেটে এতবড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটে গেছে। যার জেরে এতদিন পর খোদ চেয়ারম্যান ছুটে এসেছেন। অথচ সাংবাদিক সম্মেলন
না করেই তিনি চলে গেছেন। যা ওএনজিসির ইতিহাসেও বিরল।সব মিলিয়ে ভালো নেই ওএনজিসি ত্রিপুরা অ্যাসেট।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.