আমের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে গন্ডাছড়া!!

 আমের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে গন্ডাছড়া!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফল মানেই আম। কিন্তু রাজ্যের চাহিদা মেটাতে অন্যান্য খাদ্য পন্যের মতো মাছ ডিম যেমন আমদানি নির্ভর, তেমনি আমও। রাজ্যের বাজারে সুস্বাদু সমস্ত আমই আসে ভিন রাজ্য থেকে। চিরাচরিত একটা ধারনা সাধারণের মধ্যে তৈরি হয়েছে, রাজ্যের মাটিতে আমের ভালো ফলন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু গন্ডাছড়া মহকুমার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের একদল দামাল ছেলে এই ধারনাকে পাল্টে দিয়ে রাজ্যের মাটিতেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু আম উৎপাদন করে রীতিমতো রেকর্ড করে নিয়েছে। কথায় আছে, ইচ্ছা ও সংকল্প থাকলে সব অসম্ভবই সম্ভব করা যায়। বর্তমান গন্ডাছড়া তার প্রকৃত উদহরণ। একটা সময় গন্ডাছড়া মহকুমার নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কাঁপতো। সন্ত্রাসবাদীদের উন্মুক্ত বিচরণ ভূমি হিসাবে পরিচিত লাভ করেছিল। আজ সময় বদলেছে। পাল্টে গেছে গন্ডাছড়াও। নানা ক্ষেত্রে আজ গন্ডাছড়া এগিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে আম চাষ অন্যতম। নানা জাতের বিদেশি আম যেমন মিয়াজাকি, রেড পালমার, আম্রপালি, বাড়ি ফুল, চিয়াংমাই, কিউজ্যাই , হাঁড়ি ভাঙ্গা ও বার্মিজ ইত্যাদি আমের চাষ করে ডম্বুর ও নারিকেল কুঞ্জকে পৃথক এক পরিচিতি দিতে চলেছে। কিন্তু বানিজ্যিক ভাবে আম চাষ করে তাক লাগিয়ে দিলেও, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজও গন্ডাছড়া আম চাষের জন্য পরিচিতি লাভ করতে পারছে না। তার কারনে উতৎপাদিত আমের সঠিক বাজারও পাচ্ছেনা নারিকেল কুঞ্জের আম চাষী যুবকরা। রাজ্যের ধলাই জেলায় কাঁঠাল উৎপাদনে একসময় রমরমা ছিল। যদিও সেই উৎপাদন বাণিজ্যিক ভাবে হতো না । নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াই ছিল রীতি । আনারস উৎপাদন সম্পর্কেও একই কথা খাটে । তুলনায় আম উৎপাদন ছিল কম । কিন্তু আজ সেই আম উৎপাদনই জুমিয়া প্রধান গন্ডাছড়া মহকুমায় নয়া দিগন্ত খুলে দেওয়ার মুখে।

নতুন করে গন্ডাছড়ায় আমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বলতে কোনও দ্বিধা নেই, এই বদলটা আসে ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর ।

বিজেপি সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধলাই জেলায় শুরু হয় বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফল চাষ । কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতর । বিপ্লব দেবের ঐকান্তিক প্রয়াসের কারণেই সুস্বাদু ক্যুইন আনারস রাজ্যের ফল হিসাবে বিশ্বের বাজারে আজ স্বীকৃতি পেয়েছে । একই সঙ্গে ভালো বাজার ও সরকারের সহযোগিতায় আনারস পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে । সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে সামনে রেখে গন্ডাছড়া মহকুমায় বহু বেকার শিক্ষিত যুবক আম চাষে উৎসাহী হয় । এই মুহূর্তে গন্ডাছড়ায় প্রায় বাইশ প্রজাতির বিদেশি সুস্বাদু আমের চাষ হচ্ছে । রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে এই মায়াজাকি আম বিক্রি হচ্ছে কম দামে । যা আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি আমের দাম আড়াই লক্ষ টাকা। কিন্তু এত সম্ভাবনার পরও উৎপাদকরা যথেষ্ট লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
নারকেল কুঞ্জে বিশাল আয়তনের জায়গা নিয়ে ব্যাপক পরিমাণে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। এমন কি বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু যুবক বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ এবং চারা তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেছেন। নারকেল কুঞ্জ এডিসি ভিলেজের প্রিয় চাকমা, প্রভাত চাকমা, তপন চাকমা, প্রজ্ঞান
চাকমা, রবি ত্রিপুরা, প্রত্যেকের বাগানে বিপুল পরিমাণে আম মজুত রয়েছে বলে জানান। গন্ডাছড়া মহকুমায় আমের চাহিদা কম। ফল চাষিরা সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। প্রত্যেকটি বাগানে রয়েছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দামি আম মিয়াজাকি।
তুলনায় ছোট আকারের আমগুলি খুবই রসালো এবং মিষ্টি। দেখতেও খুব সুন্দর এবং অপূর্ব গন্ধ। এই আম বিশিষ্ট অতিথিদের বরণ করতে উপহার দেওয়া এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু নারিকেল কুঞ্জ সফরে এলে উনাকেও বরণ করা হয় এই আম দিয়ে । অথচ উৎপাদকদের মুখে প্রাণখোলা হাসি ও স্বস্তি নেই । আম উৎপাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রশাসনের কূটচালের শিকার হচ্ছেন তারা । তাদের একটাই দাবি, সরকার আমের প্রচার প্রসারে এগিয়ে আসুক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.