এক জরুরি ধাক্কা!!

 এক জরুরি ধাক্কা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নিট এবং নেট লইয়া যাহাই হইতেছে কিংবা কাশ্মীর লইয়া শাসক বিজেপি দল যাহা কিছু বলিতেছে- বিরোধী দলের কোনও কথা বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই দেশে শাসকের এমন সাড়া এক নতুন বিষয়।অন্তত গত দশ বছরের অভিজ্ঞতায় ইহাকে নতুন বলা চলে।গত দশ বছরে বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দল ফুৎকারে উড়াইয়াছে। তাহাদের অভিযোগের পেছনে বাস্তবতা রহিয়াছে কিনা সেই সব বিষয় কখনও বিচার্য হয় নাই।আজ বিরোধী দলের কথা শুনিতে হইতেছে শাসককে।তাই নিট ও নেট লইয়া জল আরও গড়াইবে এমন অনুমান করাই যায়। কাশ্মীরে নির্বাচন হইবে বা পূর্ণরাজ্যের মর্যাদাও ফিরাইয়া দেওয়া হইতে পারে, এমন আভাসও মিলিতেছে।এই যে নতুন বিষয় বলিয়া যাহাকে মনে হইতেছে, বাস্তবে ইহা নতুন নহে।ইহাই আবহমান কাল ধরিয়া চলিয়া আসিতেছিল।২০১৪ নির্বাচনে বিরোধী শক্তি দুর্বল হইলো, ২০১৯ সালে আরও দুর্বল হইলো।অপরদিকে শাসক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এতোটাই নির্মম হইলো যে তাহারা বিরোধীদের কথা কর্ণপাত করা যে প্রয়োজন অন্তত পক্ষে ইহা যে গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার তাহা আর মনেই রাখিল না। অতএব ২০২৪ নির্বাচনে শাসক বিজেপি এবং মোদি-শাহের শাসন যে ধাক্কা খাইয়াছে ইহা বুঝি প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছিল।যাহা প্রয়োজন তাহাই করিলেন দেশের ভোটারবর্গ। এক একেলা ভারী’ বলিয়া যে মিথ তৈরি করা হইয়াছিল তাহা চুরচুর হইয়া গেল।
মোদি-শাহের প্রশাসন রহিল বটে,একই রহিল প্রাসাদের গবাক্ষ, খিলান, সদর দরজা কিন্তু এই প্রাসাদের ভিতরকার সুর বদলাইয়া গেল।২০২৪ নির্বাচনের আগে শাসকেরা নানান প্রশ্নে, প্রসঙ্গে বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করিতেন, বিরোধীরা সেই সকল প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে প্রাণান্ত হইতেন।এইবার চিত্র একেবারে বিপরীত দেখা যাইতেছে।যা দেখা যাইতেছে তাহাই নিয়ম,তাহাই ছিল এক কালের পরম্পরা।বিরোধীরা শাসককে প্রশ্ন করিবে।শাসক সেই সকল কথা শুনিবে এবং উত্তর দিবে।দেশে অদূর অতীতে যে সকল প্রধানমন্ত্রীরা সাফল্যের সঙ্গে জোট সরকার চালাইয়াছেন এবং সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদের ইতিহাসের পাতায় যাহাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে অটল বিহারী বাজপেয়ী মনমোহন সিং প্রমুখেরা বিরোধীদের বক্তব্য শুনিতেন, তাহাদের মতামতকে মর্যাদা দিতেন।
উল্টোদিকে আমরা গত দশ বছরে দেখিয়াছি, প্রশ্ন করিলেই সংসদের ভিতরে বাহিরে তীব্র ব্যঙ্গর মুখে পড়িতেন বিরোধী নেতারা। এই ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীর কথা সর্বাগ্রে বলিতে হয়।আজ ২০২৪ নির্বাচনের যে ফল আসিয়াছে দেশের সামনে তখন রাহুল গান্ধী সম্পর্কে তো বলিতেই হয়।প্রশ্ন করিলেই রাহুল গান্ধীকে যুবরাজ, শাহজাদা, পাপ্পু তকমা দিয়া তামাশা করা হইতো।যদি কংগ্রেসের উত্থান এবং রাহুলের রাহুল হইয়া উঠিবার কথা বলিতে হয় তাহা হইলে ইহাও বলিতে হইবেব, দলের বিপর্যয়ের দিনে রাহুলকে কেবল বিজেপির লোকেরাই পাপ্পু বলে নাই, কংগ্রেসের অন্দরেও যখনই রাহুলের রাজনৈতিক পরিপক্কতা লইয়া প্রশ্ন উঠিত তাহাকে পাপ্পু সাজিতে হইতো। ইহার বড় কারণ শতোর্ধ বৎসরের কংগ্রেসের অতীত নেতাদের যে পারস্পরিক পরিপক্কতা তাহার সহিত পঞ্চান্ন বৎসরের রাহুল গান্ধীকে যুঝিতে হইয়াছে।
এই কথা অনেকেই বিশ্বাস করিবেন, ইন্দিরা গান্ধী পরে গান্ধী পরিবারে জননেতা আসে নাই।যাহারা আসিয়াছেন তাহারা দলের ও দেশের বিপদের সময়ে অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া আগাইয়া আসিয়া নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করিয়া দিয়াছেন। প্রাণ বলিদান দিয়াছেন রাজীব গান্ধী। কিন্তু রাজীব গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী সেই অর্থে ইন্দিরার পদচিহ্ন ধরিয়া কতটা আগাইতে পারিয়াছেন বা নিজেদের, জননেতা হিসেবে কতটা তুলিয়া ধরিতে পারিয়াছেন?অন্যদিকে গুজরাটে তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মোদি যখন ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দলীয় ছাড়পত্র লইয়া দেশের নির্বাচনি রণক্ষেত্রে নামিলেন তখন তাহাকে জননেতা হিসাবেই ধরিয়া লইলেন দেশের মানুষ।তাহার বিপরীতে রাহুল গান্ধীকে একেবারেই অসম প্রতিযোগিতায় নামাইয়া দেওয়া হইয়াছে বলিয়া সবার মনে হইলো।ঘরে বাইরে সর্বত্র অসম প্রতিযোগিতা। কংগ্রেসের সমর্থক ভোটারেরা।যেমন রাহুলের মধ্যে ইন্দিরাকে চাইলেন, রাজীব গান্ধীর মতন জলদগম্ভীর কণ্ঠের নেতাকে খুঁজিলেন, অপর দিকে ভাসমান ভোটার, দেশের সাধারণ মানুষ মোদির বিরুদ্ধে রাহুলকে পাল্লায় তুলিতে লাগিলেন।
মোদি প্রমাণ করিলেন তিনি জননেতা।২০১৯ নির্বাচনে আরও বড় জয় পাইলেন। আর রাহুল তখনই বুঝিলেন রণকৌশল বদলাইতে হইবে। বিজেপির হিন্দুত্বের একতরফা রাজনীতির বিপরীতে তিনি বলিলেন, ‘নফরত কি বাজার মে মহব্বত কি দোকান’। ভোট ঘনাইলে শাসক দল বা সাধারণ মানুষ যখন প্রশ্ন তুলিলেন, মোদির বিপরীতে কে?কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট কিন্তু রাহুলের নাম বা কাহারো নাম বলিলেন না। তাহারা সংবিধান আগাইয়া দিয়া বলিলেন- দেশে লড়াই আজ মোদি বনাম আম জনতার। রাহুল আজও জননেতা হন নাই। তবে দেশীয় রাজনীতির পরিপক্কতা লইয়া মোদির সামনে আজ সমানে সমানে দাঁড়াইবার প্রতিস্পর্ধা অর্জন করিয়া লইয়াছেন।একজন জননেতা হইতে গেলে রাহুল গান্ধীকে ততদিন ময়দানে থাকিতে হইবে, যতদিন মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব এনডিএ সরকার দেশ চালাইতেছে। শতবর্ষ পরে হইয়া কংগ্রেস আজ মরিচা ধরা জাহাজের চেহারা লইয়াছে বলিয়া হরহামেশা যে বিদ্রুপ বা শ্লেষের বাণী শোনা গিয়াছে এতোদিন, সেই অবস্থা হইতে দলকে টানিয়া তুলিয়াছেন রাহুল গান্ধী।ভুলিলে চলিবে না রাহুলের এই উত্থানের সূচনা কিন্তু ভারত জোড়ো যাত্রা আর ভারত ন্যায় যাত্রা। ২০১৪ সালের কংগ্রেস ৪৪ এ আটকাইয়া গিয়াছিল, সবাই যখন ভাবিতেছিল চোরাবালি হইতে এই জাহাজ কবে ভাসিবে-২০২৪ এ আসিয়া সেই জবাব মিলিল।একশত আসনের বেশি আজ কংগ্রেসের হাতে। সরকার গঠন সম্ভব হয় নাই বটে, তবে কংগ্রেস ভোটারদের সামনে যে পাঁচ ন্যায় বা প্রতিশ্রুতির কথা বলিয়াছে দেশের সরকারের রাশ যাহাদের হাতেই থাকুক, পাঁচ ন্যায় সেই সরকারকে অতি তৎপর রাখিবেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.