দায়িত্বশীল হতে হবে!!
কোনো নগরসভ্যতায় নাগরিক সচেতনতা যদি না থাকে, তাহলে নগর জীবনের জন্য আগামী দিনে ভয়াবহ দুর্যোগ অপেক্ষা না থাকে, রবিবার আগরতলা পুর নিগমের প্রাণকেন্দ্র প্যারাডাইস চৌমুহনী এলাকায় ম্যানহোল খুলে নিগমের সাফাই কর্মীরা ভূগর্ভস্থ ড্রেন থেকে কঠিন বর্জ্যের যে। বিশালাকার আয়তনের আবর্জনা সংগ্রহ করে ডাম্পিন সাইটে নিয়ে গেলেন, তা এককথায় আগরতলা নগরসভ্যতার জন্য অশনিসংকেত। নিগমের সাফাই কর্মীরা ন্যানহোল থেকে যে পরিমাণ কঠিন বর্জ্য এদিন তুলে এনে রাস্তার উপর জমা করলেন তা দেখতে ছোটখাটো কিছু নয়। একটা জঞ্জালের পাহাড়ের চেয়ে কম কিছু নয়। আগরতলা শহর আর পাঁচটা শহরের মতোই। পলিথিন ব্যাগ আর বিজ্ঞ প্লাস্টিকের বোতলের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এই শহরে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড়সড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে অনেক আগেই। কিছু রবিবার ম্যানহোল থেকে সংগ্রহ করা যে জঞ্জালের পাহাড়ের সো ছবি সামনে এল, তা এমন কোন কঠিন, অপচনশীল আবর্জনা নেই। যা ম্যানহোল থেকে তোলা হয়নি। প্লাস্টিকের ঝুড়ি, রাস্তার ভেন্ডারদের বিভিন্ন কঠোর বাক্স, পানীয়ের বোতল, কাচের শিশি, টুথপেস্টের খোল, নারকেল ও ভাবের অংশ-সবই ছিল ওই কঠিন সন বর্জ্যের তালিকায়। এমনিতেই এই। শহরের কভার ড্রেন ছাড়া প্রায় ৮০ প্রন ভাগ ড্রেনই উন্মুক্ত। এই উন্মুক্ত ড্রেনগুলোর দিকে তাকালে দেখা হ যাবে অসংখ্য পলিথিন আর পানীয় ও কাচের বোতলে বোতলে ডেনগুলো যেন উপচে পড়ছে। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য মানুষ যেন ড্রেনকেই প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছে। শুধু ড্রেনই নয়, রাস্তার উপরও মানুষ যত্রতত্র ময়লা, আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে। পুর নিগম আগরতলা শহরে বাড়ি বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ সাফাই কর্মীদের দিয়ে প্রতি মাসে ৭০ টাকার বিনিময়ে বর্জ্য সংগ্রহ করছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রায় নিয়মিতই এই কাজটা করে থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে অথবা ভোরের আলো ফোটার আগে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ময়লা আবর্জনা ফেলে, স্তূপ করে রাখার একটা অভিপ্রায় নিরন্তর ঘটে চলেছে। পাশাপাশি রাস্তার দুই পাশে ড্রেনের বরাবর যে সমস্ত দোকান বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রায়শই দেখা যায় সেখান থেকেও আবর্জনার স্তূপ এনে ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। আবার এমন পথচারীও আছেন, ব্যবহারের পর পানীয় বোতল অবলীলায় ছুড়ে মারছে রাস্তায় বা ড্রেনে। অথচ ঘটনা এরকম নয় যে, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন নেই। রাস্তার উভয় পাশেই নির্দিষ্ট দূরত্বে ময়লা আবর্জনা ফেলার কন্টেনার রয়েছে। তাছাড়া কন্টেনার না থাকলেও এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য পদার্থগুলো জমিয়ে রাখা যায়, যেখান থেকে নিগমের সাফাই কর্মীরা অনায়াসে তা সংগ্রহ করতে পারতেন। কেবল পলিব্যাগ কিংবা বোতলই নয়, গ্রীষ্মের দাবদাহে রাস্তার পাশে ডাব, তালের শাঁস, আনারস বিক্রি হচ্ছে। সেই সব জিনিসের অবশিষ্টাংশ গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায়। তারপর সেগুলো চলে যাচ্ছে ড্রেনে। বাদ যাচ্ছে না চিপসের প্যাকেট, চানাচুরের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট, ওষুধের দোকানের খালি প্যাকেট। কিন্তু নাগরিক সচেতনতার অভাবে এভাবেই সমস্যাটি দিন দিন জটিল আকার নিচ্ছে। যার ফলে বৃষ্টির জল নিকাশের পথ যেমন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তেমনি ড্রেনের ভেতরে জমে থাকা পলিথিন আর বোতলে আবর্জনা আটকে গিয়ে বিকট গন্ধে পথচারীদের পথচল দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জন্ম নিচ্ছে মশা। এভাবে আগরতলার নগর সভ্যতা আজ বড়সড় হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন জন সচেতনতা এবং সমন্ধিত প্রচেষ্টা। মনে রাখতে হবে, এই কাজটি যেমন একা সরকারের পত্রে করা সম্ভব নয়, তেমনি এক-দুইজন সচেতন মানুষের পক্ষেও রাতারা এই অবস্থা বদলে দেওয়া যাবে না। তাই ক্ষেত্রে সরকার, এনজি বেসরকারী উদ্যোগ ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে স পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলা সম্ভব। এই কাজে সবাইকেই সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।