নামে আসে যায়!!

 নামে আসে যায়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকের একটি সংলাপে বলা হয়েছে- ‘হোয়াটস ইন এ নেম’।অর্থাৎ নামে কী আসে যায়? অর্থাৎ শেক্সপিয়ার বলতে চেয়েছেন, ‘এ রোজ বাই এনি আদার নেম, উড স্মল এজ স্যুইট’। এর মানে হলো গোলাপকে তুমি যে নামেই ডাকো, সে তার মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়েই যাবে।
আসলে নাম নিয়ে সবারই একটা খুত্ খুত থাকে।বিশেষ করে মানুষের নাম আর স্থানের নামের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি করে দেখা যায়। নিজের নাম সম্পর্কে দুর্বলতা নেই এমন মানুষই হয়তো এই ভুবনজুড়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন।কিছু সমস্যা হলো বাবা-মা প্রদত্ত নাম, যদি কঠিন কিংবা-খটমটে হয় তাহলে, সেই নাম লিখতে গিয়ে বানানে যেমন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি উচ্চারণের সময় বিকৃতভাবে সেটা উচ্চারিত হয়।আর এই ভুল বানান কিংবা বিকৃত উচ্চারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্বস্তি ও ক্ষোভের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন এডওয়ার্ড এমভসিভিস শেভানাজডে। কিন্তু এই নাম সঠিক উচ্চারণ কিংবা সঠিক নির্ভুল বানালে ক’জন লিখতে পেরেছেন তা নিয়ে একসময় আলোচনার টেবিলে বেশ বিতর্ক ও ঝড় উঠতো।এই ধরনের অসংখ্য নাম নিয়ে উচ্চারণে কিংবা বানানে কম সমস্যা হয়নি। তাই বলে এ ধরনের সব নামই যে বদলে দিতে হয়েছে তেমন নজির নেই।বরং দেখা গেছে ব্যক্তির নামের চেয়ে স্থান বা জায়গার নাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বদলে দিতে হয়েছে। তাই বলে এই সমস্ত স্থানের নাম সবই যে বিখুটে ছিল তাও নয়।বরং জায়গার নাম পরিবর্তনের প্রশ্নে যত না দুর্বোধ্য বা কঠিন শব্দ ছিল। তার চেয়ে বেশি ছিল অন্য কারণ। কখনও যদি তা হয় রাজনৈতিক, তবে কখনও সেটা জ্যাতাভিমান, ভাষাগত আবেগ অথবা অন্য কোনও সুড়সুড়ি।
ঘটনা হলো নাম বদলের এই হুজুগে দুনিয়ায় এবার নিজের নাম বদলাতে চাইছে কেরালা। গত বছর ২০২৩ এর আগষ্ট মাসে প্রথম বার রাজ্যের নাম পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব পাস করেছিল কেরালা বিধানসভা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল বলে কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিতে পারেনি। সোমবার তাই কেরালা বিধানসভায় আবার নতুন করে প্রস্তাব পাস হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে।এবার ‘কেরালা’ নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম হবে ‘কেরালাম’। নতুন নামের মধ্যে অবশ্য একটা সুরেলা মূর্ছনা থাকলেও, প্রশ্ন উঠেছে আচমকাই কেন নাম পরিবর্তন করে ‘কেরালাম’ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার?দেশে বর্তমানে একমাত্র বাম শাসিত রাজ্য হলো কেরালা।নাম বদলের পক্ষে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বক্তব্য রাখতে গিয়ে যা বলেছেন তার সার কথা হলো- ১৯৫৬ সালে ১ নভেম্বর, ভাষার ভিত্তিতেই গঠন করা হয়েছিল কেরালা রাজ্য।কেরালার জন্মদিন ১ লা নভেম্বর।কিন্তু দেশে যখন স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছিল, তখন থেকেই মালায়ালম ভাষাভাষি জনগোষ্ঠীর জন্য ঐক্যবদ্ধ কেরালা গঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই দাবির জন্ম হয়েছিল।কিন্তু সংবিধানের প্রথম তপশিলে এই রাজ্যের নাম লেখা হয় কেরালা।আর ‘কেরালাম’ হচ্ছে স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্যবাহী নাম।যা মালায়ালাম সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। নাম বদলের এই সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের সবুজ সংকেত মিললেই দক্ষিণ ভারতের আরও একটি রাজ্যের নাম পাল্টে যাবে। নাম বদলে গেলেই তাতে কেরালার লাভ কি হবে-সেই বিতর্কে না গিয়েই বলা যায়, ভাষাগত আবেগকে কোনও ভাবেই দীর্ঘদিন দূরে ঠেলে রাখা কাম্য নয়। যেহেতু মলয়ালম ভাষায় রাজ্যের নাম কেরালা নয়, কেরালাম হওয়া উচিত- এটাই যেহেতু মনে করেন রাজ্যে প্রায় সব অংশের মানুষ,তাই মানুষের এই ভাবাবেগ এবং উচ্ছ্বাসকে সম্মান জানিয়েই সরকারকে সাংবিধানিক সংশোধনী মেনে পদক্ষেপ নিতে হবে।যদিও এই প্রক্রিয়াটাও যথেষ্ট জটিল।রাজ্য সরকারের প্রস্তাব এলেই কোনও রাজ্যের নাম বদলে দেওয়া যায় না, এরপর দায়িত্ব চলে যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। পর্যায়ক্রমে রেল মন্ত্রণালয়, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, ডাক বিভাগ, সার্ভে অব ইন্ডিয়া, এবং রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার মতো একাধিক সংস্থার থেকে অনাপত্তি শংসাপত্র পাওয়ার পরই সম্মতি মেলে নাম বদলের।
সেক্ষেত্রে সংসদে বিল পেশ করে রাজ্যে নাম পরিবর্তন করা হয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.