নিগো ও জমি মাফিয়া দমনে বিশেষ টাস্ক ফোর্স কোথায়?

 নিগো ও জমি মাফিয়া দমনে বিশেষ টাস্ক ফোর্স কোথায়?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-নিগো নামক ভয়ঙ্কর ব্যাধিতে আক্রান্ত গোটা রাজ্য, নিরাময় ও প্রতিকারের কোনও উদ্যোগ নেই।এই সংক্রান্ত তথ্যমূলক সংবাদ সোমবার দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হতেই গোটা রাজ্যজুড়ে সাধারণের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।কিন্তু বিস্ময়ের এবং উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ব্যাপারে বর্তমান রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।বাম আমলের কুখ্যাত নিগো বাণিজ্য সংস্কৃতি রাম আমলে আরও দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। রাজ্যের বিভিন্ন মহল এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে,তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর বললেও অনেটা কম বলা হবে।তথাকথিত সুশাসন এবং স্বচ্ছতার আড়ালে দুর্নীতি এবং অনিয়ম এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষ এখন সরকার এবং প্রশাসনের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি যা, তাতে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে টেন্ডার আহ্বান করা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়।যে অনলাইনে টেন্ডার আহ্বান হোক, কিংবা অফলাইনে, যে পদ্ধতিতেই টেন্ডার আহ্বান করা হোক না কেন,কাজ কে পাবে, কাজ কে বা কারা করবে, সব কিছু আগে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। বাম জমানায় যেমন মেলারমাঠ থেকে চাকরি প্রাপকের তালিকা ঠিক করে দেওয়া হতো, এখন ঠিকেদারি কাজ কে পাবে তা মণ্ডল অফিস থেকে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।নিগো বাণিজ্যে এখন শুধু মণ্ডলের নেতা-নেত্রীরাই নয়, রাজ্যস্তরের একাংশ নেতা-নেত্রীও সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েছে।এমন বহু অভিযোগ উঠে এসেছে।ফলে এখন দুই স্তরে ঠিকাদার এবং ঠিকাদার সংস্থাকে মোটা অংকের কমিশন তোলা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।প্রথম উপর মহলে,দ্বিতীয় স্থানীয় মহলে।এই দুইস্তর ছাড়াও আরও একাধিক স্তর রয়েছে, যেখানে নানা নামে তোলা দিতে হয়।স্বাভাবিকভাবেই কাজের গুণমান আর থাকছে না।
আগরতলা পুর নিগমের কর্পোরেটারদের মধ্যে একটা বড় অংশ সরাসর নিগো বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে।পুর এলাকায় যে কোনও কাজ করতে হলে তাদের কমিশন দিতে হয়। এমন বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।বেশ কয়েকজন নারীনেত্রীও নিগো বাণিজ্যের সাথে যুক্ত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে।শুধু নিগো বাণিজ্যই নয়,বর্তমানে রাজ্যে জমি মাফিয়াদের আস্ফালন এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে জমি ক্রয়-বিক্রি করার চিন্তা-ভাবনা করতেই ভয় পাচ্ছেন।নিগো বাণিজ্যের সাথে সাথে জমি মাফিয়াদের বাড় বাড়ন্তে গোটা রাজ্যে সাধারণ মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।রাজ্যে যেখানেই জমি মাফিয়াদের অর্থ দিতেই হবে।যিনি জমি বিক্রি করবেন,তাকেও অর্থ দিতে হবে।যিনি ক্রয় করবেন, তাকেও অর্থ দিতে হবে।বাম জমানার এই সংস্কৃতি এখন পদ্ম জমানায় আরও পল্লবিত হয়ে কুঠির শিল্পের রূপ নিয়েছে।
২০১৮ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর নিগো বাণিজ্যের সাথে মাফিয়াদের শক্তি প্রদর্শনে ঊষাবাজার ও গুর্খাবস্তি এলাকায় তিনজন শাসকদলের নেতা খুন হয়েছেন।এর মধ্যে একজন মণ্ডল সভাপতিও আছেন। এটা একটা ছোট উদাহরণ মাত্র।তারপরও প্রশাসন এবং সরকারের কোনও হেলদোল নেই।কারণ সর্ষের মধ্যে রয়েছে ভূত।এলাকাভিত্তিক কোন্ কোন্ নেতা-নেত্রী নিগো বাণিজ্য এবং জমির দালালির সাথে যুক্ত,তাদের প্রত্যেকের নাম-ধাম সহ পুরো বায়োডাটা আমাদের হাতে আছে।সব থেকে ভয়ানক হলো,সদ্য কিশোর অবস্থা থেকে যৌবনে পা দেওয়া যুবকরাও এখন নিগো বাণিজ্য এবং জমির দালালির মতো মারাত্মক অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে।এখনো অভিযোগ আসছে যে, প্রশাসনের অন্দর মহলে বসে থেকে,সরকারী অফিসেই নিগো বাণিজ্যের ডিল হচ্ছে।রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা নিগো মাফিয়া, জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলেছিলেন।সেই টাস্ক ফোর্স আজও রাজ্যবাসী চোখে দেখেনি।অপরাধ দমনে রাজ্য পুলিশের একটি ক্রাইম ব্রাঞ্চ আছে।কিন্তু সেই ক্রাইম ব্রাঞ্চের কোনও অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না।অপরাধ ও অপরাধী দমনে ক্রাইম ব্রাঞ্চের কোনও উদ্যোগ রাজ্যবাসীর চোখে পড়ে না।মানব পাচার থেকে শুরু করে মাদকের রমরমা গোটা রাজ্যজুড়ে।সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে যাচ্ছে গোটা রাজ্য। এমনটাই মনে করছে রাজ্যের সচেতন মহল।অথচ সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তথাকথিত সুশাসনের প্রচারে ব্যস্ত।সততা ও স্বচ্ছতার আড়ালে যেসব কান্ডকীর্তি চলছে, তা কিন্তু বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.