এবার যোগী কাঁটা!!
এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পর ২০২৭ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক অবস্থাকে মজবুত করতে দলীয় নেতৃত্ব দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। কারণ উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া জোটের বড়সড় সাফল্য তাদেরকে এখন লখনৌর তখত দখল করতে অনেকটাই মানসিক শক্তি জোগাচ্ছে। বিজেপিকে লোকসভায় অনেক কম আসনে বেঁধে রেখে সমাজবাদী পার্টি এখন টগবগ করে ফুটছে। লোকসভার ভোটের ফল ঘোষণার ১ মাস অতিক্রান্ত না হতেই ৭ রাজ্যের ১৩ বিধানসভার উপনির্বাচনেও এনডিএ তথা বিজেপি শক্তপোক্ত ধাক্কা খেয়েছে।এই জয়ের ধারা লোকসভার পর বিধানসভার উপনির্বাচনগুলোতে অব্যাহত থাকায় স্বাভাবিক কারণেই সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস অনেকটাই স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে আছে।এই যখন জাতীয় রাজনীতিতে শাসক বনাম বিরোধী জোটের অবস্থান, ঠিক তখনই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির একের পর এক নেতার বক্তব্য দলীয় নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। মাত্র ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশে দলীয় সংগঠন নিয়ে বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং মুখ খুলেছিলেন। তারপর দলেরই আরেক বিধায়ক রমেশচন্দ্র মিশ্রও দলীয় সংগঠন নিয়ে সরব হন। তিনি তো প্রকাশ্যে বলে দিলেন উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তাই এই অবস্থা দূর করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কঠোর পদক্ষেপ বা বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরই মধ্যে রবিবার দলের জাতীয় সভাপতি জেপিনাড্ডা এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশে। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল মূল্যায়ন করার জন্যই এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। আর সেই বৈঠকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার বক্তব্যে উত্তরপ্রদেশে দলের খারাপ ফলের জন্য কিছু নেতার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করেছেন। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফল যে বিজেপির জন্য বিরাট ক্ষতি ডেকে এনেছে, তা স্বীকার করতে এতটুকুও কার্পণ্য না করলেও লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকেই যে আঙুল তুলতে চেয়েছেন সেটা কিন্তু পরিষ্কার। সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দোষারোপ না করেও কৌশলে যে কথাটা যোগী বলতে চেয়েছেন তার মর্মার্থ হলো-দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা দিল্লীর একাংশ নেতার আশ্রয় ও আশীর্বাদ পুষ্ট প্রার্থী এবছর লোকসভার ভোটে লড়াই করেছেন। আর এই প্রার্থীদের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিজেপি কর্মীদেরকেও প্রভাবিত করে। যার ফলে রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে সবকিছু মুখ বুঝে হজম করা ছাড়া আর
কোনও দ্বিতীয় উপায় খোলা ছিল না। কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি যে কথাটা বলেছেন তা হলো, ভোটের আগে সর্ব ভারতীয় পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিরোধীরা ধরে নিয়ে তাদের পক্ষে সাফল্য পাওয়া সহজ নয়। অথচ একাংশ প্রার্থী ও কর্মীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, দলের কোনও ঘরোয়া বৈঠকে যোগী এই মন্তব্য করেননি। দলের কার্যকারিণী সভার ভিড়ে ঠাসা বৈঠকে এই কথাগুলো বলেছেন। তাও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে পাশে বসিয়ে। লোকসভার ভোটের ফল বিশ্লেষণ নিয়ে শাসক কিংবা বিরোধী দলের মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে এই ধরনের চুলচেরা আলোচনা দোষের কিছু নয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে এবং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী যখন দলীয় নেতৃত্বের সামনে রাজ্যের ভোট বিপর্যয় নিয়ে তার অনুসন্ধানী বিশ্লেষণ রাখেন তখন এর গুরুত্ব আর পাঁচটা বৈঠকের থেকে অন্য মাত্রা পেতে বাধ্য। দলের অভ্যন্তরের খবর, এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে কমপক্ষে ৩৫ জন সাংসদকে টিকেট দিতে আপত্তি তুলেছিলেন যোগী। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে তাকে এই প্রার্থীগুলো হজম করতে হয়। লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক সাফল্যের আশায় বুক বেঁধেছিল বিজেপি। রামমন্দিরের ইস্যুর পাশাপাশি ৪০০ পারের স্লোগানও দিয়েছিল দল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ তো দূরে থাক। ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে মাত্র ৩৩ টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। ফল প্রকাশের পর দেশজুড়ে শুরু হয় বিস্তর কাঁটাছেড়া। আর ক্ষুন্ন যোগী প্রকাশ্যেই দলীয় মঞ্চে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে দলের ভোট না কমলেও ইন্ডিয়া জোটের কারণে বিরোধী ভোট যে ভাগ হয়নি সেটাও মনে করিয়ে দিয়ে কার্যত আদিত্যনাথ নিজ রাজ্যে স্বদলীয় প্রতিপক্ষ সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধেও পাল্টা জবাব দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়ে রাখলেন। আগামীতে এই বার্তা বিজেপিতে কোন রাজনীতির সূচনা করে সেটাই দেখার।