ধামাকাদার অফার!!

 ধামাকাদার অফার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কথায় আছে সাফল্য অনেক ভুল, অনেক প্রশ্ন ঢেকে দেয়, ব্যর্থতায় কথা তা প্রকট হয়ে উঠে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিজেপির এবং অন্দর মহলের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাজানো বাগানের অবস্থা ঠিক তেমনই। গত দশ বছর ধরে একের পর এক সাফল্য বিজেপি দলের অভ্যন্তরের অনেক কিছুই বাইরে আসতে দেয়নি। এলেও সেই গুলো তেমনভাবে গুরুত্ব পায়নি। তেমনভাবে আলোচনাতে উঠে আসেনি। দেশের সাধারণ মানুষ, দলীয় কর্মী-সমর্থকরা সাফল্য নিয়েই মেতে ছিল। বোর্ড সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়নি, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডার সিদ্ধান্ত ও কাজের ধরনকে। এবার ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ চারশ পার এবং বিজেপি একাই ৩৭০ আসন জয়ের স্লোগান দিয়েছিল। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল দলের আসন এক ধাক্কায় ৩০৩ থেকে ২৪২ এ নেমে এসেছে। এরপর সরকার গড়তে গিয়ে শরিকদের গুরুত্ব দেওয়া এবং উত্তরপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়া সহ আরও একাধিক বিষয় নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন ও কলহ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শুরু হয়েছে একে অন্যের প্রতি দোষারোপের পালা। একে অন্যের প্রতি দায় চাপানোর খেলা। উঠেছে নাশকতার অভিযোগও।এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর কোনও কোনও মহল
থেকে চাপ সৃষ্টির কথাও শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে আরএসএস এর পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত এমন কিছু মন্তব্য
করেছেন, যা নিয়েও তোলপাড় চলছে। সেদিকে নিশানা করতেই সংঘ
প্রধানের এই ধরনের মন্তব্য বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বিজেপির খাস তালুক উত্তরপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়ার পিছনে দলের একটি বড় অংশ অমিত শাহর দিকেই আঙুল তুলেছে। এই দলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও আছেন বলে খবর। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর লবি ও কাছের নেতারা আবার ওই বিষয়ে দোষারোপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী
যোগী আদিত্যনাথকে। এই দলে যোগী সরকারের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যও শামিল। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে
পৌঁছেছে যে বর্তমানে যোগী ও কেশবের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এরই মধ্যে গত তিন চারদিন ধরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী
যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য দলের প্রদেশ সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরী একাধিকবার দিল্লী এসে শীর্ষ
নেতৃত্বের সাথে বৈঠক করে গেছেন। সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী-
উপমুখ্যমন্ত্রী সংঘাত নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। গত ক’দিন
ধরেই উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ভাঙনের খবর উড়ে
বেড়াচ্ছে রাজনীতির অলিন্দে। যোগীর সংসারে কোন্দলের আঁচ পেয়েই,
সুযোগ বুঝে ময়দানে নেমে পড়েছে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। এক্স হ্যান্ডেলে চমকপদ পোস্ট করে জল্পনা আরও উসকে
দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহল অখিলেশের এই বার্তাকে ‘রাজনীতির ধামাকাদার বর্ষার অফার’ বলে ভাবছে। অখিলেশ লিখেছেন, ‘মনসুন
অফার: ১০০ আনুন সরকার গড়ুন”। অখিলেশের এই বার্তা যে উপ- মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যকে উদ্দেশ্য করে, তা বুঝতে কারোর বাকি নেই। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি রাজ্যে ১৩ টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনেও বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। এতে দলের অন্দরে কোন্দল
আরও প্রকট হয়ে উঠে। সামনেই উত্তরপ্রদেশে ১০ টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দল যখন এই দশ আসনে উপনির্বাচনে কোমড়
বেঁধে নামতে চাইছে, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যায়, এই দশ আসনে বিজেপির প্রার্থী কীভাবে মনোনয়ন করা হবে? তা নিয়ে। খবরে প্রকাশ, লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে নিজের
ফরমান জারি করেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী। তিনি বলেছেন, ‘প্রভাব’ বা ‘প্রতিপত্তি’ নয়, ভোটের সম্ভাব্য প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপণ করা হবে জনতা জনার্দনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তিতে। যাঁদের সৎ ভাবমূর্তি
রয়েছে এবং এলাকায় জেতার সম্ভাবনা জোরদার, তাঁদেরকেই টিকিট দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যোগীর
এই সিদ্ধান্তেই দলে বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছে। বিজেপির এই কোন্দালকেই হাতিয়ার করে ‘ভরা বর্ষার ধামাকাদার অফার’ বর্ষণ করেছেন
অখিলেশ যাদব। তাতে বিজেপির অন্দরে ফাটক চওড়া হোক বা না হোক, অখিলেশ যে একজন পাকা রাজনীতির খেলোয়াড়ের মতো কাজটি করেছেন, তা কিন্তু এক বাক্যে সকলে স্বীকার করছেন।যদিও অখিলেশ যে খেলা খেলতে চাইছেন, তাতে অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং অনেক বেশি সফলতা দেখিয়েছেন অমিত শাহ। সরকার ভাঙা-গড়ার খেলায় তাঁর নামই সকলের আগে আসে। তবে এবার অখিলেশ বাজিমাত করতে পারেন কিনা? সেদিকেই নজর থাকবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.