প্রতিবেশীর অসুখ!!

 প্রতিবেশীর অসুখ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দিল্লী,মুম্বাইয়ের সকল ঘটনা নিমিষে আমরা পাইয়া থাকি। সুদূর থিরুবনন্তপুরম কিংবা অরুণাচল, দাদরা নগর হাবেলি কিংবা কাশ্মীর যে দূরেই হোক সেই সকল অঞ্চলের খবর আমাদিগের চাই এবং পাই। নিমিষে সেই সংবাদ লইয়া চর্চা শুরু হইয়াও যায়। কারণ ইহা আমার দেশ, স্বদেশ। সেই অর্থে কলকাতা কিংবা আইজলের চাইতেও নিকটস্থ বাংলাদেশ। এই দেশ আমার নহে। কিন্তু এই ভূমি আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই পিতা, প্রপিতামহের জন্মভূমি। ইহার ভাষা, সংস্কৃতি সকলই আমার মতন। তাই স্বদেশ না হইলেও বাংলাদেশ আমাদের আত্মীয়। ভূ রাজনৈতিকভাবে বলা হইবে নিকট প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর কুশল মঙ্গল, তাহার সুস্থতা, অসুখ বিসুখ সকলই আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক অবস্থানগত বিচারেও বাংলাদেশ নয়াদিল্লীর নিকট বন্ধু। ভাষাগত বা সংস্কৃতিগত মিলের কারণে বাংলাদেশ শব্দের সহিত আমাদের এক আন্তরিক নৈকট্য রহিয়াছে। বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাসে তাই জুড়িয়া থাকে ত্রিপুরা বা আগরতলার নাম। শেখ মুজিবুর রহমান আর ইন্দিরা গান্ধীর অধ্যায় স্বর্ণাক্ষরে বিধৃত আছে এই উপ মহাদেশের ইতিহাসে। সেই ইতিহাসের উত্তরাধিকার হিসাবে প্রতিবেশীর অসুখ বিসুখে আমরা বিচলিত হই স্বাভাবিকভাবে। কোটা আন্দোলন লইয়া গোটা বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ হইয়া উঠিয়াছে। কোনও যোগাযোগের সুযোগ আর নাই। ইন্টারনেট, টিভি, টেলি যোগাযোগ সকলই প্রায় বন্ধ। ফলে কাহাকেও ফোন করিয়া খবর পাওয়া দুষ্কর হইয়া গিয়াছে। ইহার পরেও যেটুকু খবর ভাসিয়া আসে, প্রতিবেশী ভালো নাই। অসুখের ব্যাপ্তি বাড়িতেছে। ইন্টারনেট বন্ধের পরের রাতে দেশজুড়িয়া কার্ফু জারি করা হইয়াছে এবং সেনাবাহিনী পথে নামাইয়া জমায়েত বন্ধের প্রচেষ্টা চলিতেছে। একদিকে কোটা লইয়া শেখ হাসিনা সরকারের দোদুল্যমান অবস্থা এবং অন্যদিকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সম্পর্কে অসমীচীন ও অসংযমী বক্তব্য পরিস্থিতি বেগতিক করিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি ছাত্রদের আন্দোলন থামাইতে পুলিশ কী প্রকার নির্মম ভূমিকা লইয়াছে। আবু সায়েদের মৃত্যুর দৃশ্য বিশ্ব মানবতার অন্তর কাঁপাইয়া দিয়াছে। এ যেন তিয়েনানমেনের নির্মমতা। বাংলাদেশের সরকারকে স্বৈরশাসক বলা যাইবে না। জনগণতন্ত্রী
বাংলাদেশ। নির্বাচিত সরকার সবেমাত্র দেশের সাধারণ নির্বাচন শেষ হইয়াছে গত জানুয়ারী মাসে। শেখ হাসিনা পাঁচ বৎসরের মেয়াদে চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হইয়াছেন। নির্বাচন ব্যবস্থার কথা আমরা যতটুকু শুনিয়া থাকি তাহাকে স্বচ্ছ মনে হয় না। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনেও প্রধান বিরোধী দল ভোটে অংশগ্রহণ করে নাই প্রহসনাত্মক ব্যবস্থার অভিযোগে। বিরোধীদের বরাবরই দাবি থাকিয়া যায় দেশে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হোক। পনের বৎসর আগে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসিয়াছিল তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা মানিয়া লইয়াছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে নাই। চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মেয়াদ যে ভালো যাইবে না তাহা দিনের শুরুতেই আঁচ পাওয়া যাইতেছে। দেশের নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকরা বঝিয়াছেন নির্বাচন দিয়া এই সরকারের পরিবর্তন সম্ভব নহে।অন্য পথ লইতে হইবে। মুক্তিযুদ্ধের পর অর্ধশতক কাল অতিক্রান্ত। দেশের সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসিয়াছে। উন্নয়ন কাঙিক্ষত মাত্রায় না পৌঁছালেও দেশের জীবনযাপনে যে পরিবর্তন আসিয়াছে তা অনস্বীকার্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সহিত টেক্কা দিয়া বাড়িয়াছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। তাহাদের কর্মসংস্থানের কোনও সাময়িক বা স্থায়ী পথ দেখাইতে পারে নাই হাসিনা সরকার। বরং এই সরকার যেন ব্যস্ত থাকিতেছে রাজনৈতিক বৃত্ত অক্ষয় রাখিবার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমীকরণে। এই সমীকরণে একদিকে মুক্তিযোদ্ধা আর অন্যদিকে রাজাকার। দেশের জন্মের পরপরই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে দেশটির ভবিষ্যৎ উলটপালট করিয়া দিয়া যায়। সব চাইতে অধিক উলটপালট হইয়া যায় মুক্তিযোদ্ধার সরকারী রেজিস্ট্রারে। অনেক রাজাকারও নিজেদের দেশপ্রেমী বলিয়া রেজিস্ট্রারে নাম তুলিয়া লইয়াছে আবার অন্যদিকে অনেক দেশপ্রেমিক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নাম তুলিয়া রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাইবার পথে হাঁটেন নাই। আবার অনেকে সরকারী রেজিস্ট্রেশন বইয়ের কাছাকাছি যাইতেই পারেন নাই। তাহাদের পরিজনেরা আজও জীবনযুদ্ধে লড়াই করিতেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যাহা সরকারীভাবে লিপিবদ্ধ তাহাতে সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের যে জনসংখ্যা তাহার এক শতাংশ মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করিয়াছিল। আজ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য স্কুল-কলেজ-চাকরির প্রয়োজন তখন তাহাদের জন্য কোটা ধার্য করা আছে ত্রিশ শতাংশ। আন্দোলনকারীদের এই ন্যায্য বক্তব্য খন্ডন করিতে পারিতেছে না হাসিনা প্রশাসন। হয়তো সেই কারণেই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলিয়া সম্বোধন করিলেন। এই সম্বোধন নি:সন্দেহে এক অসংযমী উচ্চারণ। আর এই ভূখন্ডের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার অজানা নহে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হইতে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসকে আলাদা করা যায় না। প্রতিবেশী হিসাবে আমরা কেবল দেশটির সুস্বাস্থ্য কামনা করিতে পারি প্রত্যাশা করি দেশটির সারা শরীর জুড়িয়া যে অসুখ ছড়াইয়া পড়িতেছে তাহার আশু নিরাময়। দ্রুত ফিরিয়া আসুক জীবনের পরিচিত ছন্দ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.