লোকসভায় ৪০ মিনিট বাজেট ভাষণে নজর কাড়লেন বিপ্লব!!

 লোকসভায় ৪০ মিনিট বাজেট ভাষণে নজর কাড়লেন বিপ্লব!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার লোকসভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।বুধবার সেই বাজেটের উপর ভাষণ দিতে গিয়ে সংসদে সকলের নজর কাড়লেন রাজ্যের সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব।এদিন তিনি দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট সংসদে বাজেটের উপর আলোচনা করেন।সম্ভবত রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সাংসদ কেন্দ্রীয় বাজেটের উপর এতটা দীর্ঘ সময় সংসদে ভাষণ রেখেছেন। ত্রিপুরার মতো একটি ছোট রাজ্যের সাংসদকে লোকসভায় দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া, বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।ভাষণ শেষ করার আগে শ্রীদেব লোকসভার স্পিকার ওম বিরলা,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তাকে এতটা সময় কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।পাশাপাশি ধন্যবাদ জানান লোকসভার শাসক ও বিরোধী সব দলের সাংসদদের,এতটা সময় তার কথা শোনার জন্য।দীর্ঘ ভাষণে এদিন বারবার সাংসদদের বাহবা যেমন কুড়িয়েছেন,তেমনি ভাষণ চলাকালীন বিরোধীদের কটাক্ষেরও সমুচিত জবাব দিয়েছেন শ্রী দেব।
এদিন বাজেট ভাষণে শ্রীদেব বলেন,ইউপিএ সরকারের শেষ বাজেট ছিলো ১৬ লক্ষ কোটি টাকার।দশ বছরে সেই বাজেট বেড়ে হয়েছে ৪৮ লক্ষ কোটি টাকা।এর থেকেই স্পষ্ট দেশ কোন দিশায় চলছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা
সীতারামন যেভাবে এ বাজেট তৈরি করে পেশ করেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। এ বাজেট তিনি সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করছেন।তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদি যখন দায়িত্ব নিয়ে দেশের জন্য কাজ শুরু করেছেন সেই সময় দেশের আর্থিক পরিস্থিতি মোটেও ভালো ছিলো না।১০ বছরের ইউপিএ সরকার যে আর্থিক অস্থিরতা তৈরি করে রেখেছিল তাতে ভারতের আর্থিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল।কিন্তু নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেই সময়ে আর্থিক বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি করোনা মহামারিকে উপেক্ষা করে যেভাবে আর্থিক পরিস্থিতিকে সচল রেখেছেন, তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। বর্তমানে দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে সাড়ে ছয় শতাংশ থেকে সাত শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি রয়েছে। এবারে যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা সর্বজনক গ্রাহ্য এবং প্রণিধানযোগ্য।বাজেটে ১৮.২ শতাংশ ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বেশি ধরা হয়েছে। যখন ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বৃদ্ধি হয় সেই সময় যে কোনও দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং জব অপরচুনিটি বেড়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি।সেই সাথে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাজেটে প্রস্তাব আকারে প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা করে প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ রেখেছেন। এই বাজেটের মাধ্যমে দেশের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।তিনি বলেন, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বেশি মাত্রায় ক্যাম্পাস সিলেকশন হয়।বড় বড় কলেজগুলিতে শতভাগ ক্যাম্পাস সিলেকশন হয়, কিন্তু গ্রামে কিংবা ছোট জেলাগুলিতে এই সুযোগ নেই।যুবক যুবতীরা যখন পড়াশোনা শেষ করে চাকরির আশায় বসে থাকে,তখন সেই সিলেকশনের কারণে তাদের মনোকামনা পূর্ণ হয় না।ফলে যুবক যুবতীরা হীনমন্যতায় ভোগে।ড্রাগসের মতো নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই বাজেটে প্রবিধান রেখেছেন দেশের শীর্ষ ৫০০ কোম্পানিতে যাতে ইন্টার্ন এবং রোজগার করা যায়,সেই গ্যারান্টি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।এর জন্য প্রথম মাসে ৬০০০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ে এক বছর পর্যন্ত প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।যেখানে তাদের ট্রেনিং হবে সেখান থেকে যদি তাদের প্রতিভা থাকে তাহলে সেই কোম্পানিতেই তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করা হবে।
চিন, জাপান, কোরিয়ার মতো দেশগুলিতে প্রতিভা এতো বেশি পরিমাণে রয়েছে, মানুষ বাড়িতে বসেই কাজ করতে পারে। তারা মোবাইল পর্যন্ত তৈরি করে বাড়িতে বসে। বর্তমানে সেই সব দেশের পরিস্থিতি ভারতে তৈরি হতে চলেছে।আর এর জন্য মোদির গ্যারান্টির সাথে দেশে কর্মসংস্থান এবং রোজগারের গ্যরান্টি বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা এমএসপিতে খরচ করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃষকদের জন্য যে দরদ রয়েছে এটাই তার প্রমাণ।সেজন্য ভারত আজ দুধ উৎপাদনে সারা বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে।ধান এবং গম উৎপাদনে সারা বিশ্বে ২ নম্বর স্থানে রয়েছে। কৃষকের কল্যাণের কারণেই দেশে আজ উৎপাদন বেড়েছে।
নরেন্দ্র মোদি এমন একজন প্রধানমন্ত্রী, যখন কোনও সন্তানের জন্ম হয় সেই
সন্তান ও মায়ের জন্য মাতৃপুষ্টি বন্দনা যোজনা নিয়ে আসেন।সেই মায়ের জন্য উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস, সৌভাগ্য যোজনায় ইলেকট্রিক, বিনামূলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর, প্রধানমন্ত্রী শৌচালয় যোজনায় সবার জন বিনামূল্যে শৌচাগার, কেউ অসুস্থ হলে আয়ুষ্মান যোজনায় ৫ লাখ টাকা পর্যভ
চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হেলথ ইনশিয়োরেন্স নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।জল জীবন মিশনে প্রতি ঘরে জল,৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন যা আগামী পাঁচ বছর চলবে। একটি শিশুর জন্মের সময় থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব জায়গায় নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন প্রকল্প এবং এর সুবিধা পাচ্ছেন দেশের মানুষ।আর এর জন্যই দেশের ২৫কোটি মানুষ আজ দারিদ্র্যসীমার নিচে থেকে মধ্যবিত্ত অংশে উঠে এসেছে। মহিলাদের জন্য এই বাজেটে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি বিগত কংগ্রেস আমলে দেশে মহিলা প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ইউপিএর চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও সোনিয়া গান্ধী মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লোকসভা এবং রাজ্যসভা দুটি আসনেই মহিলাদের সংরক্ষণ চালু করেছে।গোটা দেশে স্ব সহায়ক দলে বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি মহিলা কাজ করে চলেছেন। তারা স্বরোজগানি হয়েছেন এইসব সহায়ক দলের মাধ্যমে।উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,বর্তমানে শহরের মহিলারাও যেখানে ড্রোন ক্যামেরা চালাতে ব্যর্থ, সে জায়গা স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে মহিলারা গ্রামেগঞ্জেও ড্রোন চালিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া
চেষ্টা করছেন।কৃষকদের ফসল দেখভাল এবং জমিতে সার প্রয়োগের জন্যও ড্রোন ব্যবহার করছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রসঙ্গে সাংসদ বিপ্লবকুমার দেন
বলেন, কংগ্রেস আমলে যেখানে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাত্র নটি বিমানবন্দর ছিলো, সেই জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে ১৬টি বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে বিমান উঠানামা করছে প্রতিনিয়ত। সেই সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।যে সমস্ত রাজ্যে এখনও রেল
পরিষেবা পৌঁছায়নি, সেখানে রেল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার।বিগত জমানায় যখন কেলেঙ্কারি আর দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেছিল সে জায়গায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার সেই সমস্ত ভ্রষ্টাচার দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করেছে।তিনি বলেন, চলতি বাজেটে তিন লক্ষ কোটি টাকা শুধুমাত্র মহিলা ক্ষমতায়ন ও মহিলাদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।বিপ্লবকুমার দেব বলেন,ত্রিপুরাতে কংগ্রেস সরকার থাকাকালীন সময়ে এবং কেন্দ্রেও তাদের সরকার
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে সিপিএমের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল।ভাষণের সময় কয়েকজন তৃণমূল সাংসদ বিপ্লব দেবকে খোঁচা দিতে চাইলে তিনি তাদের পাল্টা খোঁচা দিয়ে রীতিমতো মুখ বন্ধ করে দেন।তিনি তৃণমূল
কংগ্রেসের সাংসদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একসময় কংগ্রেস এবং সিপিআইএম মিলে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল।এখন সেই দলের সাংসদরা কংগ্রেসের সাথে এক আসনে বসে আছেন।ত্রিপুরায় কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে সিপিএম দলকে সেখানে
আশ্রয় দিয়েছিল,ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছিল। নিজেদের বন্ধুত্ব বজায় রাখার
জন্য।কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সমালোচনা করে সাংসদ বিপ্লবকুমার দেব বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।আসাম
থেকে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একবারের জন্যও তিনি সফর করেননি।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৯০ বার গিয়েছেন।আর মন্ত্রিসভায় যারা বর্তমানে রয়েছেন তারা হাজারবার ত্রিপুরা রাজ্যসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন।গোটা দেশে ইমার্জেন্সি চালু করার পেছনে কারা দায়ী ছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে যারা লাগাতার হত্যা করে চলেছে, তাদের মুখে সংবিধান রক্ষার কথা মানায় না।দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিংবা খরা ছিলোনা, যেখানে জরুরিকালীন অবস্থা লাগু করতে হয়েছিল।আর এর পেছনে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন সাংসদ বিপ্লবকুমার দেব। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোরোল্যান্ডের সমাধান, নাগাল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করেছে নরেন্দ্র মোদি।মিজোরামের ব্রু শরণার্থীদের সমস্যা এতো বছর যে সরকার পূরণ করতে পারেনি সেই সমস্যা সমাধান করেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার।সাংসদ বিপ্লবকুমার দেব যখন একটানা ৪০ মিনিট ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন অধ্যক্ষকে মনোযোগ সহকারে সেই ভাষণ শুনতে দেখা গেছে।টেবিল চাপড়ে বিপ্লবকুমার দেবের ভাষণের সমর্থন করতে দেখা গেছে বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদ সদস্যকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারত তৃতীয় অর্থনীতির দেশের মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন সাংসদ। সংসদ বিপ্লবকুমার দেব বলেন, এই বাজেট সবার জন্য। প্রতিটি রাজ্যেই এই বাজেটের সুবিধা পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালে যে কাজ শুরু হয়েছে তা আগামী ২০৪৭ সাল পর্যন্ত এনডিএ সরকার থাকবে এবং ভারতকে পৃথিবীর মধ্যে নাম্বার ওয়ান ইকোনোমিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে গিয়ে সাংসদ বিপ্লবকুমার দেব বলেন, যে কংগ্রেস দল সংবিধান হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করেন, তাদের শাসনে ৭০ বার দেশে ৩৬৫ ধারা জারি করে সংবিধানকে হত্যা করা হয়েছে।তিনি কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের আঁতাত নিয়েও এদিন সংসদে সুর চড়িয়েছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.