নিটফল মহাশূন্য!!

 নিটফল মহাশূন্য!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

তৃতীয় মোদি সরকারের সূচনাপর্বেই যে নিট-ইউজি পরীক্ষার কারচুপি নিয়ে বিরোধীরা বাজিমাত করবে ভেবেছিলেন,শেষ পর্যন্ত সেটি হলো না।সম্প্রতি খোদ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৪ সালের ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-ইউজি বাতিল করা হবে না।কারণ হিসাবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে,এমন কোনও প্রমাণ সামনে আসেনি যাতে মনে হতে পারে পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি হয়েছে এবং প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারটা এতটাই ব্যাপক যে পরীক্ষার পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে।তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে,এতে কোনও সন্দেহ নেই যে,অন্তত দুটি জায়গা পাটনা ও হাজারিবাগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। যার সুবিধা পেয়েছেন মাত্র ১৫৫ জন পরীক্ষার্থী।
প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৫ সংখ্যাটা নগন্যই বটে। শীর্ষ আদালতের এই রায় মোদি সরকারের কাছে নিঃসন্দেহে স্বস্তির কারণ। বাজেট অধিবেশনে প্রারম্ভেই নিট-ইউজি পরীক্ষা নিয়ে বিরোধীদের নিশানার কেন্দ্রে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।চক্রব্যূহে ঘিরে ধরে শিক্ষামন্ত্রীর ইস্তফার দাবি জানিয়েছিলেন বিরোধীরা। আসা করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিরোধীরা সেই রণে ভঙ্গ দেবেন। অতঃকিম, দাঁড়াল এই যে, নিট-ফল মহাশূন্য! নিট-এ প্রশ্নফাঁস এবং এর ফলে ত্রুটির অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অনেকগুলি আবেদন জমা পড়েছিল। গত তিন মাস ধরে বিস্তৃতভাবে নিট মামলার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি জানান, ফের পরীক্ষা নেওয়া হলে প্রায় চব্বিশ লক্ষ পরীক্ষার্থীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শিক্ষার সময়সূচি নষ্ট হবে। পরবর্তী ছয় বছরগুলিতেও এর প্রভাব পড়তে থাকবে। আইআইটি মাদ্রাজকে দিয়ে নিট পরীক্ষা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট করিয়েছিল আদালত। সেই রিপোর্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, বড় ক্যানভাসে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবং ব্যাপক অর্থে কারচুপি হয়েছে এমন নজির তারা পাননি। ওই রিপোর্ট হাতে পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)-কে নির্দেশ দেয়, প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে নিট-ইউজির-চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবে এনটিএ। এর থেকে ‘রাজনৈতিক লাভ নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রধান বিচারপতি বেঞ্চের রায়, ফলে এ নিয়ে সংশয়ের আর কোনও অবকাশ থাকে না। তবে নিট-রায় জানার পরে বাংলার অতি পরিচিত একটি প্রবাদ মনে পড়া অস্বাভাবিক নয়- চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ো ধরা। রায়ের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করেও বলতে হয়, এই নিট পরীক্ষার সূত্রেই ‘পরীক্ষা মাফিয়া’ এবং ‘সলভার গ্যাং’-মতো দুটি শব্দ বন্ধের সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি। কিছু রাজ্যে এই পরীক্ষ মাফিয়ারা নাকি বহু দিন ধরেই সক্রিয়। সে সব রাজ্যে নাকি টাকা দিলেই ডিগ্রির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, এমনকি সরকারী চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায়। তবে নিট এবং নেট-এর মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এর আগে এত ব্যাপকভাবে এই পরীক্ষা মাফিয়াদের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসেনি। সে ক্ষেত্রে বলতে হয়, সর্ষের মধ্যে ভূত ছিলই, এতদিন তা প্রকাশ্যে এসেছে। এই সূত্রেই দেশ জেনেছে, চুরি বিদ্যা অবলম্বন করে অতীতে যারা লাভবান হয়েছেন, তাদের লোভ বেড়ে গিয়েই এত বাড়াবাড়ি। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় এক সঙ্গে ৬৭ জন ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে গেল, যাদের মধ্যে আট জন একই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী! আশ্চর্যজনক নয় কি? যারা এই মাফিয়াদের টাকা দিয়ে ডাক্তার বা অধ্যাপক হতে চেয়েছেন, তারা কিন্তু তাদের কেরিয়ারের শুরু থেকেই জালিয়াতির পথকে গ্রহণ করেছেন। এটাই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়।পরিশেষে বলার, দেশের ৫৭১ টি শহরের প্রায় চার হাজার সাতশো কেন্দ্রে একই দিনে, একই সময়ে এত বড় পরীক্ষা নেওয়ার মতো পেশাদারি দক্ষতা, সততা, আন্তরিকতা আমাদের সরকারী ব্যবস্থাপনার আছে কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় উসকে দিয়েছে। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে আগামীদিনে কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে এর চেয়েও বৃহৎ কোনও কেলেঙ্কারি আমাদের সামনে চলে আসতে পারে। সরকার এখন থেকেই শক্ত হাতে শিক্ষা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে হাল ধরবেন কি না, তা সময়ই বলবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.