আবেদনকারীর ১১.৭১ লক্ষ টাকা মেডিকেল বিল মিটিয়ে দিতে নির্দেশ!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ নিয়ে রাজ্য সরকারের যান্ত্রিকতা, অসংবেদনশীল ও দূরদৃষ্টিহীন মনোভাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মাননীয় উচ্চ আদালত। মাননীয় প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং সম্প্রতি প্রদত্ত রিট মামলার রায়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, আবেদনকারীর ১১,৭১,১৮০ টাকা মেডিকেল রিএমবার্সমেন্ট বিল প্রদান করতে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে। উক্ত রায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি কড়া পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সরকারী আধিকারিকদের কাণ্ডজ্ঞানহীন যান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে। আরক্ষা দপ্তরের অফিস পরিচালক পদে কর্মরত রিট আবেদনকারী মিনতি দাস ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ এ শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জিবি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা নীরিক্ষার পর দেখা যায় তার মস্তিষ্কে গুরুতররকম রক্তক্ষরণ হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড ৯ সেপ্টেম্বর আবেদনকারীকে আইএলএস হাসপাতালে রেফার করে। আইএলএস হাসপাতালে আবেদনকারী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ১৫ সেপ্টেম্বর অবধি। চিকিৎসাধীন থাকাকালীন শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হওয়ায় আইএলএস হাসপাতাল থেকে আবেদনকারীকে জরুরি ভিত্তিতে বহিঃরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। আইএলএস হাসপাতাল প্রদত্ত ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু এন্ডোভাসর্কুর্লার চিকিৎসার সুবিধা নেই তাই রোগীকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বহিঃরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার করা হয়েছে। রোগীকে বিমানে করে কলকাতায় নিয়ে বাঙ্গুরের স্নায়ুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয় এবং একমাস চিকিৎসা নেবার পর আবেদনকারী আগরতলা ফিরে আসেন অনেকটা সুস্থ হয়ে। কলকাতায় চিকিৎসা ব্যয় বাবদ আবেনদকারী ১১,৭১,১৮০ টাকা এমআর বিল দাখিল করেন দপ্তরে। আরক্ষা দপ্তর বিল অনুমোদন করলেও স্বাস্থ্য দপ্তর এম অআ বিল মঞ্জুর করতে অস্বীকার করে। কলকাতায় চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড থেকে রেফার করা হয়নি এই অজুহাতে। এর বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী উচ্চ আদালতে মামলা করেন। রিট মামলার শুনানিতে আবেদনকারীর পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মণ স্বাস্থ্য দপ্তরের অমানবিকতা ও নিবুদ্ধিতা ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করেন। মেডিকেল বোর্ড আবেদনকারীকে আইএলএস হাসপাতালে রেফার করেছে এবং আইএলএস হাসপাতালে আবেদনকারীর অবস্থার চরম অবনতির জন্য প্রাণ বাঁচাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বহিঃরাজ্যে রেফার করা হয়েছে তারপরও আবেদনকারীকে পুনরায় রেফার নিতে বলা সর্বতোভাবে অযৌক্তিক। আইএলএস হাসপাতালে প্রয়োজনী চিকিৎসা পরিকাঠামো না থাকায় জীবনরক্ষার জন্য বিন্দুমাত্র সময় না না করে আবেদনকারীকে কলকাতায়
নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। জীবনের অধিকারের প্রতি রাজ্য সরকারের বা বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ ও সংবেদনশীলতা নেই বলে আবেদনকারীর পক্ষে সওয়াল করা হয়। মাননীয় প্রধান বিচারপতি দু তরফের সওয়াল শেষে প্রদত্ত রায়ে রাজ্য সরকারকে ছয় এ সপ্তাহের মধ্যে এম আর বিল প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের ১৩ মে ২০২৩ এর আদেশ নাকচ করেছে উচ্চ আদালত। মাননীয় প্রধান বিচারপতি রায়ে ‘ওয়েনেডসবারী প্রিন্সিপালস অব আনরিজেনবল’ এর প্রসঙ্গ টেনে এম আর বিল নাকচ সংক্রান্ত সরকারী ফোতোয়াকে সাংঘাতিক রকমভাবে আপত্তিজনক,
অযৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নৈতিক তে মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে অভিহিত ীবী করেছেন। কোনও যুক্তিবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে উচ্চ আদালত রায়ে অভিমত প্রদান করেছেন। উচ্চ আদালতের রায়ে মেডিকেল রিএমবার্সমেন্ট নিয়ে ভুক্তভোগীদের বিড়ম্বনার অবসানের সম্ভাবনা তৈরি হযেছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। উচ্চ আদালত রায়ে বলেছে, পুনরায় রেফারের জন্য অপেক্ষা করতে হলে ৪৮ বছর বয়সি আবেদনকারীকে প্রাণে বাঁচানো যেত না।
উচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত। আবেদনকারীর পক্ষে রিট মামলা লড়েছেন বরিষ্ঠ আইনজীবী য় পুরুষোত্তর রায় বর্মণ, আইনজীবী সমরজিৎ ভট্টাচার্য, কৌশিক নাথ ও দীপজ্যোতি পাল।