শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নেই মুখ থুবড়ে বিদ্যাজ্যোতি স্কুল!!

 শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নেই মুখ থুবড়ে বিদ্যাজ্যোতি স্কুল!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- রাজ্যে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের মান-উন্নয়ন এখনও বিশবাঁও জলে। শিক্ষামন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা রূপায়ণের উদ্যোগও উধাও। ফলে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফল ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে আয়োজিত এক জুলাইয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়ে গেছে শুধুমাত্র কাগজে কলমে। যার খেসারত দিচ্ছেন রাজ্যের হাজারো স্কুল পড়ুয়া। তাই এই বৈঠক আদতে কেন করা হলো? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে বৈঠকের পরও ছাত্রছাত্রীদের কোনও লাভ হচ্ছে না। কারণ এখন পর্যন্ত ছাত্র স্বার্থে একটিও পদক্ষেপ নেয়নি শিক্ষা দপ্তর। উল্টো দপ্তরের অধিকর্তা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এমনকী ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পঠনপাঠনের পরিকাঠামোর মান উন্নয়নের জন্যে কোনও পদক্ষেপ নেই। অথচ ওই দিনের বৈঠকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু তাই নয় রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে ১৪০০ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। যা বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছরেও হয়নি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল প্রথমে ১০০টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে একাডেমিক কাউন্সিলার ১০০ জন, স্পেশাল এডুকেটর ১০০ জন ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার ১০০ জন, প্রি-প্রাইমারি টিচার প্রত্যেকটি স্কুলের জন্য তিন জন, পিজিটি শিক্ষক শিক্ষিকা যথাক্রমে সোসিওলজি ৭৫ জন, সাইকোলজি ৭৫ জন, জিওগ্রাফি ৭৫ জন, ইকনোমিক্স ৭৫ জন। লাইব্রেরিয়ান ১০০ জন, স্টাফ নার্স, আয়া সহ ১৪০০ জন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। যা সাড়ে তিন বছরে হয়নি। যার খেসারত প্রদান করছে রাজ্যের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা। উল্টো আরও ২৫টি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে এনে সিবিএসইর পাঠ্যক্রম চালু হয়ে যায়।আর এই ব্যর্থতার কোনও সঠিক উত্তর রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের কাছে নেই। তাই বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। এদিকে বিদ্যাজ্যোতি স্কুল নিয়ে রাজ্যের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর রাজ্যে কোনও ধরনের পঠনপাঠনের পরিকাঠামো গত উন্নয়ন না করে তড়িঘড়ি বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প চালু করার কারণেই ২০২৪ সালে সিবিএসই আয়োজিত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর হতাশাজনক ফলাফল হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রীর পৌরোহিত্যে আয়োজিত বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফল শীর্ষক বৈঠকও হলো। তবে এখন এ অদৃশ্য কারণে শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিরসন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের হাল ফেরাতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হবে? তা নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য মহাকরণ সূত্রে খবর, ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পশ্চিম জেলায় রয়েছে ৩০টি স্কুল। ঊনকোটি জেলায় ১১টি, গোমতী – জেলায় ১৬টি, দক্ষিণ জেলায় ১২টি, উত্তর জেলায় ১৫টি, সিপাহিজলা জেলায় ১৬টি, খোয়াই জেলায় ১২টি এবং ধলাই জেলায় ১৩টি বিদ্যালয় রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সিবিএসই প্রশ্নপত্রে এই ১২৫টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারেনি। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার মাত্র ৬০ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ। এদিকে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষিকাদের আরও অভিযোগ বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকর এখন পর্যন্ত অধরা। যার পরিণতিতে নতুন শিক্ষা বর্ষেরও তিন মাস শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে শিক্ষা দপ্তরের কোনও হেলদোল নেই। আর ২০২৪ সালে দশম ও দ্বাদশ মানের পরীক্ষায় এই শোচনীয় ফলাফলের মূল কারণ ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে সিবিএসই পরিচালিত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার একমাস আগে পর্যন্ত সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের কোনও সঠিক সিলেবাস ছিল না। এমনকী এখনও অনেক স্কুলে সিলেবাস নেই। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস অনুযায়ী পঠনপাঠন করাতে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। যা বর্তমানেও হচ্ছে। তবে কেন এক জুলাই এই বৈঠক হলো? বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে প্রায় ৯৬টি স্কুল আবার জন্মলগ্ন থেকে বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়। সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ছিল না কোনও প্রশিক্ষণ। ফলে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে সিবিএসই-র দ্বাদশ মানের পরীক্ষায় প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং দশম মানের পরীক্ষায় প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং দশম মানের পরীক্ষায় প্রায় ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। ২০২৪ সালে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে দ্বাদশ পরীক্ষায় ৯৬৭৪ জন পরীক্ষায় বসেছিল। এরমধ্যে মাত্র ৫৩৫৪ জন পাস করেছে। আর ফেল করেছে ৪৩২০ জন ছাত্রছাত্রী। দশম সিবিএসই শ্রেণীর পরীক্ষায় ৭৩৪১ জন বসেছিল। এরমধ্যে পাস করেছেন ৪৫৫৩ জন। আর ফেল করেছেন ২৭৮৮ জন ছাত্রছাত্রী। শুধু তাই নয় সরকারী বিদ্যালয় হওয়া সত্বেও বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা করে আদায় করেছে শিক্ষা দপ্তর। তবে পঠনপাঠনের কোনও পরিকাঠামো নেই। যার খেসারত দিচ্ছেন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.