ইতিহাসে ত্রিপুরা!!
উত্তর পূর্বের এক কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট এক পাহাড়ি রাজ্য থেকে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের এক সদস্য ভারতের এক অঙ্গ রাজ্যের রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলাতে চলেছেন।এই খবর রাজ্যবাসীর মনে অবশ্যই আনন্দ এনে দিয়েছে।স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ত্রিপুরা থেকে এই প্রথম কোনও ব্যক্তি ভারতের একটি অঙ্গ রাজ্যের রাজ্যপাল হচ্ছেন।ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য যীষ্ণু দেববর্মণ এ রাজ্যে রাজনৈতিক জগতে এক পরিচিত নাম।ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যীষ্ণুবাবু ২০১৮-২০২৩ সাল অবধি। বহুদিন বিজেপির সাথে যুক্ত। একসময় কংগ্রেসী রাজনীতিও করেছেন। বারকয়েক পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসন থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেনও বটে।কিন্তু জিততে পারেননি।একসময় ব্যবসা করেছেন।পরবর্তীতে রাজনীতিতে জড়ান। ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিজেপির উত্থানের পর যীষ্ণুবাবুকে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীও করা হয়।দিল্লীর সাথে বরাবরই ভালো সম্পর্ক যীষ্ণুবাবুর। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের সাথে বেশ তার সম্পর্ক।
দেশ স্বাধীন হবার দশ বছর পর দেশের স্বাধীনতা দিবসের দিনেই তার জন্ম।যীষ্ণুবাবুর পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত। তারা বহু পরিবারেরই অংশ। পড়াশোনা বাইরে, রাজ্য মিলিয়েই।বরাবরেই মেধাবী যীষ্ণুবাবু।অনেকদিন বিজেপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বটে, কিন্তু ২০১৮ সালে উপনির্বাচনে চড়িলাম কেন্দ্র থেকেই তিনি প্রথমবার কোনও নির্বাচনে জয়ী হন। পরে উপমুখ্যমন্ত্রী হন রাজ্যের।তার পাঁচ বছরব্যাপী উপমুখ্যমন্ত্রীর মেয়াদ কেটেছে ভালোমন্দের মিশেলে এটা বলা যায়।রাজনীতির পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন তিনি। গত ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যীষ্ণুবাবু তার চড়িলাম কেন্দ্র ধরে রাখতে পারেননি।সেই থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাকে নিয়ে ভাবতে বসে। লোকসভা না রাজ্যসভা না কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল -এসব নিয়েই চিন্তাভাবনা করার পর অবশেষে তাকে দক্ষিণের এক বড় রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল পদে আসীন করা হলো। তেলেঙ্গানা দক্ষিণের এক বড় রাজ্য।আইটি হাব হায়দ্রাবাদ যার রাজধানী।অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানার জন্ম হয় প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। কেন্দ্রে ২০১৩ সালে ইউপিএ যখন ক্ষমতাসীন সেসময় তেলেঙ্গানার জন্ম হয়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর তেলেঙ্গানার জন্ম হয়।পরপর ২ বার সে রাজ্য ছিল আঞ্চলিক দল বিআরএসের হাতে।কে চন্দ্রশেখর রাও যার সবেসর্বা।কিন্তু গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে সে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে।বর্তমানে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের রেভন্ত রেড্ডি।সেইক্ষেত্রে বিজেপি ত্রিপুরার এক জনজাতি নেতাকে সে রাজ্যে রাজ্যপাল করে পাঠাচ্ছে।যীষ্ণুবাবু জানিয়েছেন, তাকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফোন করে বড় দায়িত্ব নেবার কথা বলেন। পরে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও যীষ্ণুবাবুকে ফোন করে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হবার জন্য তাকে স্বাগত জানান।
রাজনীতিতে ভদ্রলোক হিসাবেই পরিচিত যীষ্ণুবাবু। ডান বাম সব দলের সাথেই তার ভালো রয়েছে।তার ব্যক্তিগত সখ্যতাও রয়েছে এ রাজ্যের বাম নেতৃত্ব, কংগ্রেসী নেতৃত্বের সাথে।সেজন্যই সব দলের নেতারাই তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন।বিজেপি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও কট্টর পন্থী তিনি কোনওদিনই ছিলেন না।ফলে স্বভাবতই রাজ্যপাল হিসাবে তার নিযুক্তিকে সবাই একবাক্যে স্বাগত জানিয়েছেন।সাধুবাদ জানিয়েছে।যীষ্ণুবাবু আগামীদিনে তেলেঙ্গানার মতো বড় রাজ্যের রাজ্যপালের দায়িত্ব যথাযথভাবেই সামলাবেন বলেই সবার আশা।ত্রিপুরার একজন বরিষ্ঠ প্রাজ্ঞ রাজনীতিক তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে তিনি অবশ্যই সাফল্য পাবেন – এটুকু আশা করা যায়।তাতে আখেরে ত্রিপুরারই নাম হবে।যীষ্ণুবাবু তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসাবে সুখ্যাতি পান এটাই আশা।