খোদ বিধায়কের খুন হওয়ার আশঙ্কা ঘিরে তোলপাড় রাজ্য!”

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে নিগো বাণিজ্য থেকে শুরু করে নেশা বাণিজ্য,জমি দালালি এবং নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, খোদ শাসক দলের বিধায়ক নিজেই খুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।অথচ সরকার, প্রশাসন এমনকী শাসক দেলও নির্বিকার।সোমবার রাতে বিশালগড়ের শাসক দলের জনপ্রিয় বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সুশান্ত দেবের সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্ট ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য এবং তোলপাড় শুরু হয়েছে।শুধু তাই নয়,দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিধায়ক শ্রী দেবের এই বিস্ফোরক পোস্ট ঘিরে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলের একাংশ নেতা-কর্মীর যে ধরনের পাল্টা মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হচ্ছে,তাতে বিশালগড়ে যেকোনও মুহূর্তে বড় ধরনের স্বদলীয় সংঘর্ষে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও।বর্তমানে রাজ্যে বিজেপির শাসনকালে এমন কী পরিস্থিতি তৈরি হলো যে, একজন শাসকদলীয় বিধায়ক নিজেই খুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন?জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি নিজেই অসুরক্ষিত বলে মনে করছেন?প্রশ্ন বিরোধীদের। মঙ্গলবার দেখা গেল বিধায়কের নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইল থেকে করা পোস্টকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা তাদের নিজ নিজ ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল থেকে শাসক দলের মুন্ডুপাত করে চলেছে।অনেকের বক্তব্য, রাজ্যে নাকি ডবল ইঞ্জিনের সরকার চলছে। অথচ এই ডবল ইঞ্জিনেই একজন শাসক দলীয় বিধায়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।এই সরকার সাধারণ মানুষের কী নিরাপত্তা দেবে? এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। রাত পোহালেই রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে।এর আগে এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায় বিরোধীরা সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টিকে ব্যাপক প্রচারে নিয়ে গেছে।এতে শাসক দলের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণ্ণ হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশালগড়ের যুব বিধায়ক সুশান্ত দেব সোমবার তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন।তাতে তিনি লিখেছেন, ‘বিশালগড়ে বিধায়ক গৌতম দত্ত খুন হয়েছে।এই বিশালগড়েই বিধায়ক পরিমল সাহা খুন হয়েছে।কিন্তু উনাদের মায়েদের চোখের জলের সম্মান দেওয়া হয়নি।আমি আমার প্রাণের বিশালগড়বাসীর কাছে বিনম্রভাবে অনুরোধ করবো, আগামীদিনে বিশালগড়ে যদি বিধায়ক সুশান্ত দেবের কিছু হয় আমার মায়ের চোখের জলের যেন সম্মান দেওয়া হয়।তার এই পোস্ট সাথে সাথেই ভাইরাল হয়ে যায়। একই সাথে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।বিধায়ক সুশান্ত দেবের এই পোস্ট কেন? কাদের উদ্দেশ্য করে তার এই পোস্ট? কেন তিনি বিশালগড়ের দুই প্রাক্তন বিধায়কের মতো নিজেও খুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন?তা বুঝতে কারোর বাকি নেই। উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে বিশালগড় নিগো বাণিজ্য ও নেশা বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।আর এই অবৈধ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই বিশালগড়ে দুই যুবনেতার লড়াই চলছে দীর্ঘদিন ধরে।২০২৩ সালে বিশালগড়ে সিপিএমের প্রবীণ ও ডাকসাইটে নেতা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহাকে পরাজিত করে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছেন সুশান্ত দেব। যুবনেতা এবং বিধায়ক হিসেবে গোটা বিধানসভায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।এরই সুবাদে পরবর্তীকালে দল তাকে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি করে। স্থানীয় সূত্রে খবর, তিনি চান বেআইনি বাণিজ্য বন্ধ হোক। কিন্তু বাদ সাধে দলেরই প্রভাবশালী অপর গোষ্ঠীর আরেক যুবনেতা।যিনি বর্তমান প্রশাসনের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন।এই বিরোধের জেরেই গত কদিন আগে রাতের অন্ধকারে বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারায় বিশালগড় থেকে রাজ্য সরকারের ডিডব্লিউএস অফিসটি বিশ্রামগঞ্জে সরিয়ে নিতে হয়েছে।তাতেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।অভিযোগ, বিশালগড়ের বিধায়ক হলেও শ্রী দেবকে একপ্রকার কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। বিধায়ক হিসেবে এলাকার জনগণের জন্য যে কাজ করার কথা, তিনি সেই কাজ করতে পারছেন না।প্রতি পদে পদে তিনি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।একপ্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন শীর্ষনেতার আশীর্বাদপুষ্ট ওই যুবনেতা। ফলে বিশালগড়ে আগামীদিনে বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।শুধু তাই নয়, বিধায়কের এই পোস্টে যে রাজ্যের ভয়ানক পরিস্থিতির ছবিটা ফুটে উঠেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।