ঊর্ধ্বগতির বাজার!!

 ঊর্ধ্বগতির বাজার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ তেমন কোনও এ সংস্কারমুখী ঘোষণা করেননি।এদিকে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবেশী বাংলাদেশে চরম নৈরাজ্য। অথচ ভারতীয় শেয়ার বাজারে সেভাবে তার কোনও প্রভাব নেই।গত মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি, তিন দিন মূলত বিবিধ আন্তর্জাতিক কারণে আমাদের শেয়ার বাজারে সূচকের আকস্মিক পতনের জেরে লগ্নিকারীদের বাইশ লক্ষ কোটি টাকা মুছে গেলেও,শুক্রবার ফিরে এসেছে প্রায় নয় লক্ষ কোটি টাকা।তিনদিনের পতন বরং লগ্নিকারীদের সামনে নতুন শেয়ার ক্রয়ের বাড়তি সুযোগ করে দিয়েছিল।
বাজারের সূচক এখন প্রায় আশি হাজারের গণ্ডিতে দাঁড়িয়ে।তবে শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বগতি সর্বদা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির পরিচায়ক নয়।বাজারে এই রকেট গতির সঙ্গে ফান্ডামেন্টাল অর্থাৎ মৌলিক অর্থনৈতিক শর্তগুলি আদৌ সম্পর্কযুক্ত কি না,সে তর্ক অনেক দিনের।সম্পর্ক আছে নিশ্চয়ই,তবে এটাও সত্যি যে, এমন রুদ্ধশ্বাস ঊর্ধ্বগতির জন্য তেমন মজবুত বুনিয়াদ (ফান্ডামেন্টালস) না থাকলেও চলে।অর্থনীতিতে প্রকৃত ইতিবাচক পরিবর্তন এলে তবেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে, নচেৎ নয়- এই তত্ত্ব ক্রমশ ফিকে হয়েছে।এমন বহু শেয়ার আছে,যেখানে সংশ্লিষ্ট লাভের মাত্রা আহামরি নয়, অথবা সংস্থাটি বাজারে নতুন- অথচ তাদের শেয়ার-বৃদ্ধির দৌড় অবিশ্বাস্য।কেবল বাজারের ভরবেগ বুঝে লগ্নি করেন,এমন কৌশলী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা আজ আমাদের দেশে প্রচুর। তার জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা সূচক, সরকারী নীতিও যথেষ্ট সহায়ক।
আবার বিপরীত দিকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রবণতা ক্রমহ্রাসমান।কোভিড পরবর্তী দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় যারা প্রথম শেয়ারে লগ্নি করেছেন, তারা শুধু বাজারের চড়াই দেখেছেন, উতরাইয়ের অভিজ্ঞতা তাদের নেই বা হয়নি।ফলে,শেয়ারের ‘প্রাইস’ ও ভ্যালু’, অর্থাৎ মূল্য এবং মানের মধ্যে ফারাক তাদের অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত হয়নি এখনও।সে কারণেই বাজারে কেনা-বেচা চলছে অবিশ্বাস্য গতিতে।বাজারের চরিত্র সম্যক না জেনেই মূলত ধারণার ভিত্তিতে বহু মানুষ আজ – বাজারমুখী।এমনকী স্বল্পসংখ্যক স্টকের পিছনে প্রচুর টাকা ধাবমান,এই দৃশ্য এখন কার্যত জলভাত।সেই কারণে বেড়ে চলেছে অল্প-খ্যাত স্টক, ঘন ঘন পুনর্মূল্যায়নের সম্ভাবনায় উদ্ভাসিত হচ্ছে ছোট-মাঝারি সেক্টর।ফলে রিলায়েন্স, আদানি এন্ট্রারপ্রাইজ বা ওএনজিসির মতো স্টকের বাইরে বাড়ছে মিড-ক্যাপের লগ্নির প্রবণতা।
বাজারে যে কোনও জিনিসের মতোই শেয়ারের দামও নির্ধারিত হয় জোগান ও চাহিদার সমতাবিধানের মাধ্যমে। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, চাহিদায় ভাটা পড়লেও দাম কমবে।কিন্তু, কোন অদৃশ্য জাদুবলে চাহিদা উত্তুঙ্গ হবে অথবা ধসে পড়বে, নির্ভুলভাবে তা জানার কোনও উপায় নেই।তবে তার কতকগুলি উপাদান আছে। সংস্থার রোজগার এবং লাভের হিসাব তো আছেই। সঙ্গে আছে একগুচ্ছ বড়-মাপের শর্ত।সহায়ক সরকারী নীতি অথবা পুঁজি-কাঠামো অদলবদল, মার্জার বা বাইআউটের মতো কোনও কর্পোরেট ঘটনা ইত্যাদি এই উপাদানের অংশ। নানা প্রকারের অ্যাপ ব্যবহার করে এই বিষয়ে সড়গড় হয়ে গেছেন বাজারে এক বড় অংশ।ভবিষ্যতে তাদের কার্যকলাপ আরও বাড়বে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।এই মুহূর্তে স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য আমরা এক বিরাট আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী। ছোট লগ্নিকারীরর সংখ্যা এবং তাদের বিনিয়োগের ধরন,দুই-ই এই পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে নগদে অর্থের লেনদেন তার আগের মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪.৭ লক্ষ কোটি টাকা।শুধু মে মাসেই শেয়ার ট্রেডারদের সংখ্যা আট শতাংশ বেড়েছিল এবং তা ক্রমবর্ধমান।শেয়ার বাজারে লগ্নির প্রশ্নে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লীর পরেই পশ্চিমবঙ্গ। বঙ্গে নতুন শিল্প তৈরি হয় না বলে যারা হাহুতাশ করেন,বাজারে লগ্নির
রেখচিত্র কিন্তু সেকথা বলে না।
অনেক দিন ধরেই ফিক্সড ডিপোজিটের ‘নিরাপদ’ বিকল্প ছেড়ে বাজারমুখী হয়েছে নতুন প্রজন্ম।সঞ্চয়ের ধ্রুপদী ধরন আজ অনেকটাই পরিবর্তিত।তবে,বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে হলে ভারতীয় অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে।করতে হবে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানির বহর কমাতে হবে, দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি হার নামিয়ে আনতে হবে, সাধারণ মানুষের জীবনে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা জারি রাখতে হবে। কারণ, শেষ অবধি অর্থব্যবস্থার জমিটি পোক্ত না হলে যে কোনও ভরবেগই দীর্ঘস্থায়ী হয় না, সরকার এই সারসত্যটি যত মাথায় রাখে ততই মঙ্গল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.