মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
ব্যাঙ্কিং শিল্পে চ্যালেঞ্জ!!
ব্যাঙ্কের চেয়ে ব্যাঙ্ক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আ আমানত জমা রাখলে কিংবা অর্থলুগ্নি করলে বেশি পরিমাণে সুদ পাওয়া যায়।দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই প্রচলিত নিয়মের কারণে ব্যাঙ্কগুলো কার্যতই এখন গভীর সংকটে পরেছে।একদিকে মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বাজার এবং সরাসরি স্টক মালিকানার মতো উচ্চ লাভজনক বিকল্প বিনিয়োগের দিকে শহরের সঞ্চয়কারীরা অধিকতর আগ্রহী হয়ে উঠায় তাদের অগ্রাধিকার স্থানান্তর করে ব্যাঙ্ক থেকে আমানতের পরিমাণ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।এতে করে দেশের ব্যাঙ্কগুলো এই মুহূর্তে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে। আমানত এবং ঋণ এই দুটি হল একটি গাড়ির দুইটি চাকা।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোতে গ্রাহকরা টাকা ঋণ নিতে যতটা আগ্রহী,টাকা জমা রাখতে ততটা আগ্রহী নন। মূলত, চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষা, বাড়ি ক্রয় করা, গাড়ি কেনা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে লোকেরা বাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন।এই ঋণের টাকা আসে ব্যাঙ্কে গ্রাহকরা যে পরিমাণ আমানত বা টাকা জমা রাখেন সেই জমাকৃত অর্থরাশি থেকে।ফলে ব্যাঙ্কগুলোর মূল ব্যবসা হচ্ছে একদিকে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা জমা রাখা বা আমানত সংগ্রহ এবং অপরদিকে যাদের টাকার প্রয়োজন তাদেরকে ঋণ দেওয়া। সুতরাং এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলোকে আমানত ও ঋণের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হয়।কিন্তু দেখা যাচ্ছে, লোকেরা বহুদিন ধরেই ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখছেন কম। ফলে আমানত ধীরে এগোচ্ছে।কিন্তু ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।এই ভারসাম্য হীনতার কারণে ব্যাঙ্কগুলো গ্রাহককে ঋণ দিতে পারছে না।এটাই হলো ব্যাঙ্কগুলোর জন্য বড় সংকটের বার্তা।এর ফলে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। লোকেরা ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখবে মূলত ভালো সুদ পাওয়ার জন্য।আমানতের জন্য এটাই মূলত মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রলুব্ধ করে। কিন্তু আমানতকারীদের অভিযোগ হল, বিগত বেশ ক’বছর ধরে ব্যাঙ্কগুলি তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হল সুদের পরিমাণ বেশ ক’দফায় বাড়িয়ে দিয়েছে।অথচ টাকা জমা রাখলে বা সঞ্চয়ের জন্য সুদের পরিমাণ তো বাড়ায়ই নি বরং উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে।এই কারণেই গ্রাহকরা ব্যাঙ্কের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখার পরিবর্তে শেয়ার বাজার কিংবা অন্য কোনও সঞ্চয় সংস্থায় টাকা নিবেশ করছেন।যে কারণে শেয়ার বাজার, বাজার নির্ভর প্রকল্পের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে লগ্নীকারীদের কাছে। বেশি সুদের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনেও ছুটছেন গ্রাহকরা।এই ঘটনা সরকারের মাথাব্যাথা বাড়াচ্ছে।সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলোর অস্তিত্বও বড়সড় সংকটের মুখে দাঁড়িয়েছে। ব্যাঙ্ক এখন আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না।ফলে তারা চাহিদা মতো ঋণ দিতেও পারছে না।শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পরবর্তী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠকে এই নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।উদ্বেগের পাশাপাশি তিনি উদ্ভাবনী ও আকর্ষণীয় প্রকল্পের মাধ্যমে আমানতের জন্য গ্রাহককে আগ্রহী করতে এবং পুরানো ব্যবস্থায় ফিরে আসতে ভারসাম্য রক্ষার কথা বলেছেন।লক্ষ্যণীয় দিক যেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শন্তিকান্ত দাস বলেছেন,সুদ এখন নিয়ন্ত্রণ মুক্ত অর্থাৎ গ্রাহককে আমানত জমা বাবদ বাঙ্কগুলো কত শতাংশ হারে সুদ দেবেন, সেটা ব্যাঙ্কগুলো নিজেরাই এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।তাহলে প্রশ্ন উঠছে, সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দুজনেই যেখানে চাইছে ব্যাঙ্কগুলি তাদের মূল ব্যবসা-আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ দেওয়া’ এই দুইটি জায়গাতে আগের মতো মনোনিবেশ করুক এবং এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করুক- তাহলে বাঙ্কগুলির আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বর্তমান সংকটের পেছনে মূল প্রতিবন্ধকতা কোথায়?মনে রাখতে হবে, ব্যাঙ্কের এই ধরনের প্রবণতা, অর্থাৎ আমানতের সুদ কমিয়ে ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেওয়া-এটা কার্যত: ব্যাঙ্কগুলোর মূল ভিত্তি ও শক্তিকে ক্রমশ দুর্বল করছে। কারণ প্রযুক্তির উত্থান এবং গ্রামীণ সঞ্চয়কারীদের মধ্যে ভারতীয় স্টক মার্কেটের সাথে ক্রমবর্ধমান পরিচিত ব্যাঙ্কিং শিল্পের আমানতের জন্য সংগ্রামকে আরও তীব্র করে তুলবে। প্রযুক্তির এই বিকাশ আর্থিক সঞ্চয়ের গতিশীলতাকে মৌলিকভাবেই শুধু পরিবর্তন করছে তাই নয়।বরং ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্কগুলোকে অসুবিধার দিকে ঠেলে দেবে।কারণ ২০২২ সালে মার্চে ভারতের সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে যৌথ অনুপাতে (কারেন্ট ও সেভিংস) আমানতের পরিমাণ যেখানে ছিল ৪৫.২% তা ২০২৩ এর মার্চ মাসে এসেছে ৪৩.১% এবং গত বছর সেপ্টেম্বরে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৫%। ২০২৪ এর মার্চে এই পরিস্থিতিটা আরো উদ্বেগজনক।সুতরাং চ্যালেঞ্জ অনেক গভীর।