৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়ে সুনীতাদের থাকতে হবে ৮ মাস!!

 ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়ে সুনীতাদের থাকতে হবে ৮ মাস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মহাকাশে রওনা দিয়েছিলেন ৮ দিনের সফরে।এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে থাকতে হবে অন্তত ৮ মাস!
মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি- ১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে গত ৫ জুন মার্কিন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওই দুই নভশ্চর পাড়ি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে।এদের একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস ও নাসায় তার সতীর্থ বুথ উইলমোর।নাসার দ্বৈত নভশ্চর নিয়ে তখন উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। কারণ, প্রথমত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রস্তুতির পর এটিই ছিল বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা। দ্বিতীয়ত, এই ‘ক্রু ফ্লাইট টেস্ট’ অভিযানের উদ্দেশ্য বেসরকারি ফি উদ্যোগে সাধারণের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের রাস্তা প্রশস্ত প করা।শুরুতে কথা ছিল, মহাকাশ স্টেশনে আট দিন থেকেই দিন পরেই ফিরছেন সুনীতারা।কিন্তু হঠাৎই তাদের মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। যাত্রাপথে আরও নানা যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। রকেটের পাঁচটি ‘ম্যানুভরিং থ্রাস্টার’ খারাপ হয়ে যায়, সমস্যা দেখা দেয় একটি ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুনীতাদের ফেরা।
ইতিমধ্যেই ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের সঙ্গে যৌথ ভাবে নতুন একটি মহাকাশযান মহাকাশ স্টেশনে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রু- ৯’।আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ওই মহাকাশযান দু’জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে রওনা দেবে মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে। এই যানে মাত্র দুই জনেরই স্থান সঙ্কুলানের মতো ব্যবস্থা রয়েছে। মহাকাশ স্টেশন পৌঁছে তারপর সেটি সুনীতাদের নিয়ে ফের পৃথিবীর দিকে পাড়ি দেবে যানটি।আপাতত সুনীতাদের সুস্থ শরীরে ফেরানোই বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য।নাসা জানাচ্ছে, সব ঠিকঠাক চললে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ফিরতে পারেন সুনীতারা।তার মানে জুন থেকে ফেব্রুয়ারী আট মাস সনীতাদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকতেই হচ্ছে।
প্রায় দুই মাস ধরে সুনীতা ও ব্যারি বুচ উইলমোর মহাকাশে রয়েছে।প্রায় দুইমাস ধরে তারা পৃথিবী থেকে অনেক উপরে ভাসমান অবস্থায় আছেন এবং তারা সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকা পড়েছেন। এবছর গ্রীষ্মকাল, এমনকি বড়দিন ও আগামী নববর্ষও তারা পৃথিবীতে উদযাপন করতে পারবেন না।
সব ঠিক মতো এগোলে ৬১ বছর বয়সি বুছ উইলমোর এবং ৫৮ বছর বয়সি সুনীতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফিরতে আরও প্রায় ছয় মাস। গত বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে নাসার কর্মকর্তারা জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নাসার বানিজ্যিক ক্র প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ হচ্ছে বুচ ও সুনিকে ফিরিয়ে আনা। তারপরও, আমাদের কাছে অন্যান্য যা বিকল্প আছে সেসব নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করছি।’ সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে নাসার কর্মকর্তারা জানান, স্পেস-এক্স ক্রু ড্রাগন ব্যবহার করে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা হবে।সেপ্টেম্বরের এই মিশনে প্রাথমিকভাবে চারজন ক্রু সদস্যের যাওয়ার কথা ছিল। তবে প্রয়োজনে দুটি আসন ফাকা রাখা হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহাকাশচারীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আট দিনের পরিবর্তে আট মাসেরও বেশি সময় কাটাবেন। যদি ক্রু ড্রাগন ব্যবহৃত হয়, তাহলে স্টারলাইনারটি ক্রু ছাড়াই কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
নাসার মহাকাশ পরিচালনা বিভাগের পরিচালক কেন বোয়ারসক্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্টারলাইনারের ক্রু ছাড়া ফেরার সম্ভাবনা সাম্প্রতিক এক-দুই সপ্তাহের ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে ‘একটু বেড়েছে’।এ কারণেই, আমরা সেই বিকল্পটি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যাতে আমরা এটি সফলভাবে পরিচালনা করতে পারি।’ অন্য দিকে বোয়িং সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই স্টারলাইনার মহাকাশ যানটি সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তার পর তার ব্যাটারি নিঃশেষিত হতে পারে। ফলে সুনীতাদের নিরাপদে ফেরানোর জন্য আর ২৯ দিন হাতে রয়েছে নাসার। তাই এই সময়ের মধ্যেই স্পেস এক্সের মহাকাশযান গিয়ে সেখানে পৌঁছবে। কিন্তু সেখানে নতুন কোনও বিপদ দেখা দিলে সুনীতাদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা বাড়বে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.