প্রত্যাশা ও ভাঙা হৃদয়!!

 প্রত্যাশা ও ভাঙা হৃদয়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভালোবাসার শহর থেকে ভগ্নহৃদয় নিয়েই ফিরতের হল ভারতকে।সর্বকালের বৃহত্তম দল নিয়ে উচ্চাশার পারদকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন দেখা শুরু করলেও একটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ জিতেই এবারের মতো অলিম্পিক অভিযান সম্পন্ন করলো ভারত।চার বছর আগে অলিম্পিক ইতিহাসে দেশের জন্য সর্বকালের সেরা সাতটি পদক জিতে টোকিওতে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরকে ছুঁয়েছিল দেশ।কিন্তু চার বছর বাদে টোকিও অলিম্পিকের সাফল্যকে ধরে রেখে সাতটি পদক সংখ্যার সঙ্গে নিজেকে প্যারিস অলিম্পিকে এক আসনে বসাতে পারেনি ভারত।১১৭ জন ক্রীড়াবিদ নিয়ে ভারত প্রথমবারের মতো পদকের নিরিখে দুই সংখ্যার অঙ্ক স্পর্শ করার প্রত্যাশা নিয়ে প্যারিসের অলিম্পিক মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছিল।কিন্তু সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল।
গত ২৬ জুলাই ফ্রান্সের শ্যেন নদীতে অলিম্পিকে উদ্বোধন হয়েছিল।অলিম্পিকের এবারকার উদ্বোধন ছিল চমকের মোড়কে মোড়া। কারণ অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে প্রকাশ্যে কোন খোলামেলা জায়গায়। গোটা বিশ্ব মুগ্ধ হয়ে দেখেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা। গোটা অনুষ্ঠানটিতে ছিলো ফ্রান্সের স্থাপত্য ও ঐতিহ্যকে মেলে ধরার চেষ্টা।তারপর দীর্ঘ সতের দিনের বর্ণময় প্রতিযোগিতা এবং মনোমুগ্ধকর ইতিহাস সৃষ্টিকারী রেকর্ড ও অনেক অতৃপ্তির স্মৃতি নিয়ে রবিবার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্ববাসী দেখল দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থের সমাপ্তি অনুষ্ঠান।’স্তাদ দ্য ফ্রান্স’-এই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হল প্যারিস অলিম্পিকের সমাপ্তিপর্ব।সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্যারিস থেকে অলিম্পিক পতাকা ২০২৮-এর অলিম্পিকের সংগঠক লস অ্যাঞ্জেলেসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।রবিবার প্যারিস অলিম্পিকের আসরের উপর পর্দা পড়ে যাওয়ার পর প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে, ভারতের এবারকার অলিম্পিক অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নিশ্চয় পর্যালোচনা রসুযোগ থাকবে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি জাতির জন্য একটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ অর্জন কোনভাবেই গৌরবের বার্তা বহন করে না।বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর থেকে এই পারফরম্যান্স ভারতের মতো দেশের জন্য খুবই নগণ্য।বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ একটি ক্রীড়া আসর থেকে একটি স্বর্ণপদক অর্জন করতে না পারার বিষয়টা কোনভাবেই হজম করার মতো নয়।একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ভারত ১টি সোনা এবং ২টি ব্রোঞ্জ সহ ৩ টি পদক পেয়েছিল। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারতের পদক সংখ্যা ৬। রিওতে ২০১৬ অলিম্পিক্সে ১টি সিলভার ও ১টি ব্রোঞ্জ নিয়ে ভারতের পদক ছিল ২টি।গত ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ১টি স্বর্ণসহ মোট মেডেল ছিল সাত।এবার প্যারিসে ১টি রুপো এবং ৫টি ব্রোঞ্জ সহ মোট পদক ছয়। অর্থাৎ ১৪ বছর আগে ভারতের যা পারফরম্যান্স, ২০২৪ সালে ঠিক সেই জায়াগাতেই আটকে আছে দেশ। এ বছর প্যারিস অলিম্পিকে ৮৪টি দেশ পদক জিতেছে।অথচ ক্রমতালিকায় ভারতের স্থান ৭১ নম্বরে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দেখাতে গিয়ে বলা হবে কেন্দ্রীয় সরকার গত তিন বছরে প্যারিস অলিম্পিকের জন্য দল প্রস্তুত করতে ৪৭০ কোটি টাকা খরচ করেছে। একথাও বলার চেষ্টা হবে ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, তিরন্দাজিতে হতাশাজনক পারফরম্যান্স সত্ত্বেও অন্তত ৬ জন প্রতিযোগী চতুর্থ স্থানে তাদের খেলা শেষ করেছেন। কিংবা ভিনেশ ফোগাটের অযোগ্যতা মানের জন্য ভারত একটি সোনা বা রুপো হারিয়েছে।আসলে এ সব যুক্তি মানসিক দৈন্যতার প্রকাশ কিন্তু প্রশ্ন এখানে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা নিজেদের যতটা উন্নত করছি, যতটা নিজে উপযুক্ত মনে করে তৈরি হচ্ছি, তখন বিশ্ব এরচেয়ে অনেকবেশি দ্রুততায় নিজেকে উন্নত করছে, আমাদের থেকে অনেক বেশি দক্ষতায় নিজেরা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে পাওয়ার হাউস দেশগুলো আরও বেশি ভালো হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকী ছোটখাটো অনুন্নত দেশগুলোও অবাক করা চ্যাম্পিয়ন তৈরি করছে।এই স্তরে প্রতিযোগিতাটা হয় সবসময় নিরলসভাবে উচ্চমানের একথা মনে রাখতে হবে। ফলে চ্যালেঞ্জটাও বিশাল।কিন্তু দেশের সামনে সেই মাত্রায়, সেই মানদণ্ডে, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেই। অলিম্পিকে পদক জয়ের লক্ষ্যে কিছু ক্রীড়াবিদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হলেই দেশের পদকের খরা কাটবে না।এর জন্য চাই তৃণমূলস্তরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।রাজনীতির বাহুবলীরা এই দৃষ্টিভঙ্গির ধারে কাছেও নেই।তাই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বমানের থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে।আমাদের ভারতে যথেষ্ট প্রতিভা আছে। কিন্তু সেখানে খুব বেশি ফোকাস নেই। পরবর্তী উন্নতস্তরে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার তাদের লালন পালন করা। প্রতিভা সনাক্তকরণ এবং সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিভা লালনপালনের ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর পিছিয়ে আছি।এই সত্যটা উপলব্ধি করেই দেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.