বেসরকারী সংস্থায় ডায়ালিসিস নিয়ে বহু অভিযোগ, মৃত্যুর তদন্ত হবেঃ সুপার!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবিতে কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিস চিকিৎসা পরিষেবা রাজ্য সরকার অনেক আপত্তি সত্ত্বেও একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বহি:রাজ্যের একটি বেসরকারী সংস্থার হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়।তাতে রোগীর ডায়ালিসিস করানো নিয়ে যে চরম অবহেলা ও বেহাল দশা কায়েম হয়েছে এর প্রতিবাদে এবং সুব্যবস্থা ও সুস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ক্ষুব্ধ রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের ক্ষোভ বিক্ষোভ আরও তুঙ্গে উঠেছে। মঙ্গলবারও বেহাল ডায়ালিসিস চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা দল বেঁধে অভিযোগ জানাতে হাসপাতাল সুপারের অফিসে গিয়ে ধর্না দেন।সোমবার সকালেও ক্ষুব্ধ কিছু সংখ্যক রোগী ও রোগীর আত্মীয় হাসপাতাল থেকে ছুটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রী ডা.ড মানিক সাহার কাছে অভিযোগ জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে গিয়ে ওঠেন।কিন্তু সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও ব্যস্ত আছেন বলে তাদের অভিযোগ জানতে তাদের সঙ্গে দেখা করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে থাকা এক অফিসারকে পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে অভিযোগপত্রটি মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে নেন।তারা জানান, অফিসারটি তাদের ফোন নম্বর নিয়ে বলে দেন বুধবার বেলা এগারোটায় মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালে ফোন করে ডাকা হবে।তারপর মঙ্গলবার আবার আরও কিছু সংখ্যক ক্ষুব্ধ রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন বেহাল ডায়ালিসিস নিয়ে অভিযোগ জানাতে আচমকাই দুপুরে ছুটে যান হাসপাতাল মেডিকেল সুপারের অফিসে। সুপার ডা. শংকর চক্রবর্তী তাদের দীর্ঘ অভিযোগ শোনেন।লিখিত অভিযোগপত্রও সুপারের হাতে দেওয়া হয়।সুপার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দেন। সঞ্জীবনী নামক যে বেসরকারী সংস্থাটি গত ১ আগষ্ট থেকে কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিস করানোর দায়িত্ব পায় তারপর গত বারো আগষ্ট পর্যন্ত বারো দিনের মধ্যে আটজন রোগীর মৃত্যু হওয়ার বিষয়টিও হাসপাতাল সুপারকে জানিয়েছেন।বেহাল ডায়ালিসিস ও রোগীর প্রতি অবহেলা, অযত্ন, উদাসীনতা ইত্যাদি কারণে গুরুতর অসুস্থ আটজন কিডনি রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে সুপারের কাছে তারা এই অভিযোগও করেন।এই বিষয়ে সন্ধ্যায় হাসপাতাল সুপার ডা. চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, কেন ১ আগষ্ট থেকে ১২ আগষ্ট পর্যন্ত আটজন রোগীর মৃত্যু হলো সেই বিষয়ে তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত করানো হবে।বুধবারই এই তদন্ত টিম গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।প্রসঙ্গত, গত ১ আগষ্ট থেকে বেসরকারী সংস্থাটি জিবির কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিস চিকিৎসা পরিষেবা করানোর দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজ শুরু করে। তারপরই অভিযোগ উঠেছে বারো আগষ্ট পর্যন্ত আটজন কিডনি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কারোর মৃত্যু হয়েছে ডায়ালিসিস ইউনিটেই। আবার কারোর মৃত্যু হয়েছে ডায়ালিসিস নপাতাল করিয়ে নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ওয়ার্ডে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায়।হাসপাতাল সুপার জানান, অভিযোগ যেহেতু এসেছে গুরুত্ব দিয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করানো হবে।এদিকে অভিযোগ, হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ দুজন চিকিৎসক থাকার পরও এই ভাবে রোগীর মৃত্যু নিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।যদিও হাসপাতাল চিকিৎসকের দাবি, গুরুতর অসুস্থতার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়। যদিও মৃত রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনরা আটজন রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রেই গুরুতর অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের দাবি মানতে রাজি নন।তারা এরজন্য বেহাল ডায়ালিসিস পরিষেবাকে দায়ী করছেন। এদিকে, একজন রোগীকে ডায়ালিসিস করার পর সেই ডায়ালাইজার বাতিল না করায় ও সেই একই ডায়ালাইজার দিয়ে অন্তত পাঁচ-ছয়জন রোগীকে ডায়ালিসিস করানোর কারণেও রোগীর সঠিক উপায়ে ডায়াসিসিস হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। এছাড়া রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা বেসরকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ডায়ালিসিস করানো নিয়ে ও অদক্ষ ম্যানপাওয়ার সহ নানা গুরুতর অভিযোগ করেন হাসপাতাল সুপারের কাছে।হাসপাতাল সুপার জানান, বেসরকারী সংস্থাকে এইসব বিষয় নিয়ে কারণ দর্শানোর জন্য মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই শোকজ করা হবে। ডায়ালিসিস নিয়ে নানা বিষয়েও তদন্ত ও নজরদারি করা হবে বলে জানান।এদিকে জানা গেছে, আইজিএম হাসপাতালেও এই বেসরকারী সংস্থা কিডনি রোগীর ডায়ালিসিস করানোর দায়িত্বে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরেই। আইজিএম হাসপাতালে এই সংস্থার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বহুবার রোগীরা ডায়ালিসিস করানো নিয়ে বেহাল পরিষেবার অভিযোগ তোলেন।