রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি: মুখ্যমন্ত্রী!!

 রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি: মুখ্যমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:-রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক করেছে রাজ্য সরকার।রাজ্য অতিথিশালায় মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে আয়োজিত বৈঠকে প্রায় প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরাই উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে রাজ্য সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল পদক্ষেপগুলির বিষয়ে অবহিত করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলির রাখা প্রস্তাবগুলিও এ দিন গুরুত্বসহ শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।
এ দিন সর্বদলীয় বৈঠকশেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেছেন, সার্বিক আলোচনায় সবাই সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন।বৈঠকে রাজনৈতিক কথাবার্তা হয়নি। সংকটের মুহূর্তে সবাই সরকারের সাথে একযোগে কাজ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন।মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেছেন, বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সব কয়টিই ভালো সাজেশন দিয়েছেন।
তারা মহকুমাস্তরেও এ ধরনের বৈঠক করা যায় কিনা তা দেখতে বলেছেন।রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয়
প্রতিনিধিদেরও এই রাজ্যে আসতে অনুরোধ জানাতে বলেছেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে তিনি দিল্লীতে গিয়েও রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন।
বন্যার বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেন, করবুক সহ রাজ্যের বিভিন্ন জনপদে এখনও পৌছানো যায়নি।উদয়পুরে এখনও বিপদসীমায় জল বইছে। সেখানে জলমগ্ন অবস্থা এখনও চলছে।এই ভীষণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী সবকয়টি দলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে এখনও ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে। এরপর শুরু হবে পুনরুদ্ধারের কাজ।যা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ বিষয়।মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির বহর মূল্যায়ন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর ক্ষতির বহর আরও অনেকটাই বাড়তে পারে।রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরাও এমনটাই বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে বলেন, দুর্যোগের প্রথম দিন থেকেই রাত জেগে কাজ করছে প্রশাসন।এখনও টানা কাজ চলছে।যতক্ষণ দিনের আলো থাকছে উদ্ধারকারী দল এয়ারলিফটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ৫৫৭টি রিলিফ ক্যাম্পে এখনও ১ লক্ষ ২৮ হাজার আশ্রিত মানুষ রয়েছেন।ভয়াবহ এই বন্যায় ১৭ লক্ষের উপর মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন।১৬০৩টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। ৫০১টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে।দুটি সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এবারের বন্যায় ২৫৮৮টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।যার মধ্যে ২৩২৪টি স্থানে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ডায়ারিয়া, ডিসেন্ট্রি পরিস্থিতি যেন না হয় এর কাজও চলছে।ইতিমধ্যেই ৭০০ মেডিকেল ক্যাম্প হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরগুলিতে স্থানীয় মেডিকেল কর্মীরা ক্যাম্প করেছেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজটা জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবারের বন্যায় ইতিমধ্যে ২৪ জনের প্রাণ গেছে।দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। আহত হয়েছেন দুজন। ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।
বাড়ি ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।মৃতদের পরিজনদের এককালীন ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আহতদের দেওয়া হবে আড়াই লক্ষ টাকা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ এই অঙ্কটা বাড়িয়ে দিতে আবেদন রেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত গোমতী এবং দক্ষিণ জেলায় ২০ হাজারের উপর খাদ্যের প্যাকেট এয়ার লিফট করে বিতরণ করা হয়েছে।
এ দিনের সর্বদলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব পি কে চক্রবর্তী এবং রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পান্ডে ছিলেন। সর্বদলীয় বৈঠকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস সাহা, কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা।
বন্যার ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা ও সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার আবেদনের পর ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন এবং আরও অনেকে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসছে।এ দিন ত্রিপুরা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ১০ লক্ষ টাকা এবং জি গ্রুপ মুখ্যমন্ত্রীর
ত্রাণ তহবিলে ২ লক্ষ দান করেছে।
এছাড়া ত্রিপুরা ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন, ইউনিটি গ্যাস্ট্রো অ্যান্ড লিভার হাসপাতাল এবং এএস সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেড যথাক্রমে ৫ লক্ষ, ৫১ হাজার এবং ২৫ হাজার ১ টাকা দান করেছে।এ দিন সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার হাতে ওই অর্থরাশির চেক তুলে দেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.