রাজ্যের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ চাইলো কংগ্রেস!!

 রাজ্যের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ চাইলো কংগ্রেস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-পূর্বাভাস ছাড়াই কি ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো রাজ্যবাসীকে?নাকি ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট কিংবা আইএমডি আগে থেকেই এই ভারী বর্ষণের সতর্কতা জানিয়েছিলো?যদি জানিয়ে থাকে, তবে কেনইবা সরকার আগে থেকে কোনও ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উদ্যোগ নিলো না?কর্তব্যে যদি অবহেলা থেকে থাকে, তবে যারা এই অবহেলা করে রাজ্যবাসীকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি ফেলেছে তাদের বিরুদ্ধে যাতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সর্বদলীয় বৈঠকের পর রবিবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এমন আরও যেসব দোষ ত্রুটি রয়েছে আপাতত সেগুলিকে একপাশে রেখে গঠনমূলক আলোচনা করতে সব অংশের রাজনৈতিক দলগুলিকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ এদিন বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক ব্যক্ত করার পাশাপাশি তাদের পরিবার-পরিজনদের সাথে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী এবং আরও অনেকেই।অথচ অন্য কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা দলের নেতৃত্বদেরই সামান্য শোক ব্যক্ত করতে পর্যন্ত দেখা যায়নি।এমনকী প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির আলোচনায় রবিবার স্থান পেলো না রাজ্যের বন্যা প্রসঙ্গ। তবে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শাসক দলের উদ্দেশে রাজ্যের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।একই সাথে বলেন,অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যেভাবে কেন্দ্রীয় নেতারা আকাশপথে ঘুরে বেড়ান, ঠিক সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও তা দেখে যেতেন তবে বঞ্চিত হতো না এ রাজ্যের জনগণ।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা কিংবা এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে গিয়ে শনিবার রাজ্য অতিথিশালায় এক সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।এই বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত তথ্য তুলে ধরে কংগ্রেস জানায়, তার কথা অনুযায়ী রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পনেরো হাজার কোটি টাকার মতো।অথচ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণই সঠিকভাবে নিরুপণ করা হয়নি এখনও।দলের পক্ষে বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ মনে করেন, সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হলে এই অঙ্ক আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে।এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি এদিন বলেন, সরকার কি পরিকাঠামোগত কিংবা অন্যান্য দিক থেকে প্রাথমিকভাবে সমীক্ষা করে দেখেছে যে কোথায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? যদি করে থাকে তবে কোথায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলো তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার কথাও বলেন তিনি। সংবাদ সূত্রে তিনি জানতে পারেন, বিদ্যুৎ এবং কৃষি দপ্তরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছয়শ কোটি টাকার অধিক।দুটি ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরুপণ করা হলো কিনা এ নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরুপণ করে তিনি দিল্লীতে গিয়ে সব অংশের রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে রাজ্যবাসীর স্বার্থে একযোগে টাকা চাওয়ার ব্যাপারেও শনিবার আয়োজিত বৈঠকে প্রস্তাব দেয় কংগ্রেস।আপাতত মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এদিক থেকে কী বলেন, সেই অপেক্ষায়ই রয়েছেন বলে তিনি জানান।
কংগ্রেস বিধায়কের প্রশ্ন,বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে মানুষের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র থেকে শুরু করে গরু, ছাগল, শূকর এবং অন্য গৃহপালিত পশু, মাছ সহ বিভিন্ন সবজি খেতগুলি বহুলাংশেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পনেরো হাজার কোটি টাকার হিসাবে কি এগুলিও স্থান পেয়েছে? বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ তাই দপ্তরভিত্তিক হিসাব তুলে ধরা হলে প্রকৃত অর্থে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হতো বলে মনে করেন।
তার আক্ষেপ ছিলো, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীরা বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় তা জানা সম্ভব হয়নি।যেমন সর্বদলীয় বৈঠকে কৃষি, বিদ্যুৎ সহ অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন দপ্তর যেমন মৎস্য, পশুপালন, খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রীরা অনুপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে।বিগতদিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি বলেন, বিধানসভা কিংবা জেলা,এমনকী মহকুমাভিত্তিক সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তোলা হোক। এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা যেমন সহজতর হবে, তেমনি রাজনীতির শিকারও হতে হতো না কাউকেই।সর্বদলীয় বৈঠকে শনিবারই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে একথা জানিয়েছেন বলে জানান।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহাকে সাথে নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে এমন আরও বহু বিষয় উত্থাপন করেছিলেন বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ।রবিবার তার পাশে বসেই আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে আরও একবার বললেন, জলমগ্নতার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে এখন অনেকেই বাড়ি ঘরে ফিরছেন।তবে সর্বস্বান্ত মানুষজন ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে অর্থের অভাবে কিছুই করতে পারছেন না।এদিক থেকে সরকার যাতে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে সেই দাবির কথাও তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি কালবিলম্ব না করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, মৎস্যজীবী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে দাবি জানিয়েছেন সরকারকে।ঋণ নিয়ে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন, তাদের জন্য অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কিস্তি প্রদানে সাময়িক সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান সরকারকে। অন্যদিকে বলন, রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়াতে সব অংশের রাজনৈতিক দলগুলিকেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.