৫৬৪ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর!!

 ৫৬৪ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার ৫৬৪ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যায় গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়ে বিধানসভায় বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে জানান। বিধানসভায় জিরো আওয়ারে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। তার প্রেক্ষিতেই সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি এদিন এনএলএফটি এটিটিএফএর সাথে শান্তি চুক্তির পর গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়েও অবহিত করেন। ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে ৫৬৪ কোটি টাকার এই প্যাকেজ রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে পূরণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যকে এই ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক
মাস সময় লাগবে।এই প্যাকেজ বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ আনতে এবং সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক দিশা দেখাবে। বিধানসভার শেষদিনের অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যায় রাস্তাঘাট, সেতু,বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, কৃষি ও উদ্যান, চাষযোগ্য কৃষিজমি, মৎস্য জলাশয়, পুকুর, বাঁধ, প্রাণী সম্পদ, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহাসড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গ্রামীণ রাস্তাগুলি বন্যায় ভেসে গেছে এবং পুকুর, জলাশয় ও কৃষি জমিগুলি পলি ও জলে প্লাবিত হয়েছে।বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রাথমিক অনুমান প্রায় ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি এ টাকা। জেলাশাসক এবং লাইন ডিপার্টমেন্টের জেলা আধিকারিকগণ ক্ষেত্রপর্যায়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করেছেন।প্রকৃত ক্ষতির মূল্যায়নের পর রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের অনুরোধসহ একটি স্মারকলিপি জমা দেবে।
সাম্প্রতিক বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতাকে মাথায় রেখে রাজ্যের বিভিন্ন সেক্টর জুড়ে অবিলম্বে ত্রাণ ও পুনরুদ্ধারের কাজের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
ত্রাণ এবং পুনরুদ্ধার প্যাকেজের আওতায় খাদ্য ও জন সংভরণ দপ্তরকে দেওয়া হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।ওই অর্থে পরবর্তী দুই মাসের জন্য প্রতি মাসে রেশনকার্ড প্রতি ১০ কেজি অতিরিক্ত চাল প্রদান করা হবে।এতে রাজ্যের প্রায় ৯.৮ লক্ষ রেশনকার্ডধারী জনগণ উপকৃত হবে।
কৃষি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫ কোটি।ওই অর্থে খরিফ ও রবি শস্য উৎপাদনের জন্য বীজ এবং সার প্রদান এবং অন্যান্য কৃষি সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। হটিলাকচার খাতে বরাদ্দ হয়েছে পাঁচ কোটি।এই অর্থে শীতকালীন শাক-সবজি ও ফুল চাষ, পান বরজ মেরামত, সার জাতীয় উপকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে পলি অপসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
মৎস্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছে দশ কোটি।যার মাধ্যমে মাছের উৎপাদনের জন্য মাছের পোনা ক্রয় করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।এছাড়াও এআরডিডি খাতে পাঁচ কোটি বরাদ্দ হয়েছে।যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান, পশু খামারগুলিতে জল, ওষুধ সরবরাহ সহ অন পশু খাদ্যের ব্যবস্থা, পুনর্গঠন, ইনপুট ভর্তুকি এবং অন্যান্য কার্যক্রম চালানো হবে।শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১২ কোটি।যার মাধ্যমে যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বই সরবরাহ করা হবে এবং স্কুল/কলেজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ হবে।
পিডব্লিউ/ডিডব্লিউএস খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৫০ কোটি।যা দিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং পরিবারগুলিকে পানীয়জল সরবরাহ এবং পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্য খাদে বরাদ্দ হয়েছে দশ কোটি।যা দিয়ে জীবাণুমুক্ত ও ডায়ারিয়া প্রতিরোধে ২০০০ ব্যাগ ব্লিচিং পাউডার, দুই লক্ষ ওআরএস প্যাকেট, কুড়ি লক্ষ হ্যালোজেন ট্যাবলেট, দশ লক্ষ জিঙ্ক ট্যাবলেট, জ্বলের ওষুধ এবং চর্মরোগের ওষুধ ক্রয় করা হবে।পিডব্লিউ ডব্লিউ আর খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৩৫ কোটি।যা দিয়ে বাঁধ, চ্যানেল, প্রধান প্রকল্পগুলির সংস্কার, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ একশ কোটি।ওই অর্থে বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, ট্রান্সফরমার, কন্ডাক্টর, তার এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রীর দ্রুত পুনরুদ্ধার, সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ গ্রহণ করা হবে।সবচেয়ে বেশি অর্থ ২০০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে পিডব্লিউডি/আর অ্যান্ড বি ক্ষেত্রে। যা দিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ড্রেনের পুনর্নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হবে। এছাড়া নগর উন্নয়ন এবং গ্রামোন্নয়ন খাতে যথাক্রমে বারো এবং চল্লিশ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দিল্লীতে গিয়ে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে দুই গোষ্ঠীর সাথে চুক্তি হয়েছে।যার প্রেক্ষিতে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আড়াইশো কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।এনএলএফটি এটিটিএফ দোলয় গোষ্ঠীই সমস্ত অস্ত্র সমর্পণ করবে, চুক্তি স্বাক্ষরের পরে অস্ত্র রাখা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। একটি স্ক্রিনিং কমিটি দলগুলির জমা দেওয়া ক্যাডারদের তালিকা যাচাই করবে যাতে শুধুমাত্র যাচাইকৃত সদস্যরা পুনর্বাসনের সুবিধা পান। যাচাইকৃত ক্যাডাররা তিন বছর পর্যন্ত পুনর্বাসন শিবিরে থাকবে,ছুতোরের কাজ, সেলাই এবভ কৃষিকাজের মতো দক্ষতার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।প্রতিটি যাচাইকৃত ক্যাডার প্রাথমিকভাবে চার লক্ষ টাকা পাবেন। যা তারা তিন বছর পর উঠিয়ে নিতে পরবেন যদি তারা ভালো আচরণ প্রদর্শণ করতে সক্ষম হন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.