মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
জিবির ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসা পরিকাঠামোর চরম অব্যবস্থা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলা
সরকারী মেডিকেল কলেজ জিবি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের চিকিৎসা পরিকাঠামো সংকটে ধুঁকছে। ট্রমা কেয়ারে আনা নানা দুর্ঘটনাজনিত গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে তৎক্ষণাৎ আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্যই চালু করা হয়েছে। ২০১৫ সালে জিবির ট্রমা কেয়ারের উদ্বোধন হয়। তারপর অনেক বছর কেটে গেছে।কিন্তু বিস্ময় ও পরিতাপের ব্যাপার হলো ট্রমা কেয়ার সেন্টার যখন চালু হয় তখন যে ধরনের চিকিৎসা পরিকাঠামো ছিল তাই বহাল রয়েছে।চিকিৎসা পরিকাঠামোর কোনও উন্নয়নই গত কয়েক বছরে করা হয়নি বলে হাসপাতালের চিকিৎসক সূত্রের খবর।আধুনিক চিকিৎসার সব ধরনের সুবিধা থাকবে বলে যে প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে জিবির ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি কেন বাস্তবায়ন হয়নি তা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক মহলেই বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।আর সেই কারণে নানা দুর্ঘটনাজনিত গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে নিয়ে আসার পর সেই ধরনের চিকিৎসা পরিষেবার অপ্রতুলতায় সেই চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ। তাতে গুরুতর ও সঙ্কটাপন্ন রোগীর শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে মোড় নেয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।ট্রমা কেয়ার চালুর প্রথম দিন যে ২৭টি শয্যা নিয়ে চালু হয় বর্তমানে তাই বহাল রয়েছে।গত নয়-দশ বছরের মধ্যে ট্রমা কেয়ারে রোগীর জন্য আর কোনও শয্যা বৃদ্ধি করা হয়নি।ট্রমা কেয়ারের চিকিৎসা পরিকাঠামোয়ও উন্নতি সম্প্রসারণ করা হয়নি।অথচ অন্য পদুর্ঘটনার কথা না বললেও ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় মোটর যান দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন উদ্বেগজনকভাবেই বাড়ছে। তাতে নিহত ও আহতের সংখ্যাও উদ্বেগজনক।যদিও রাজ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাজ্য সরকারের বাস্তবভিত্তিক কোনও উদ্যোগ নেই বলে বিভিন্ন মহলই এই অভিযোগ করছে। আর সেই কারণে জিবির ট্রমা কেয়ার সেন্টারে তৎক্ষণাৎ সব ধরনের আধুনিক সুচিকিৎসা ব্যবস্থা যাতে রোগীরা পান সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকার ও তার স্বাস্থ্য দপ্তরের।ট্রমা কেয়ারে রোগী আনা হলে রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে তিন ধরনের অর্থাৎ তিন ভাগে রোগী রাখা হয়।তার জন্য তিনটি ব্লক আছে।খুব সংকটাপন্ন বা গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগী হলে রেড ব্লকে রাখা হয়।তারপর সামান্য কম বা খুব গুরুতর নয় এমন রোগীদের রাখা হয় ইয়োলো ব্লকে ও কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে রাখা হয় গ্রিন ব্লকে।তাজ্জব ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সংকটাপন্ন ও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে আইসিইউ নেই।রেড ব্লকে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাকে আইসিইউ বলা যায় না বলে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। রেড ব্লকে ভেন্টিলেটর থাকলেও তা পুরো মাত্রায় আইসিইউ নয়।ফলে প্রশ্ন উঠেছে আইসিইউর পরিকাঠামো যুক্ত আইসিইউ কেন ট্রমা কেয়ারে নেই।ট্রমা কেয়ারে আইসিইউ ছাড়া কীভাবে চিকিৎসা পরিষেবা চলছে তা নিয়ে হাসপাতালেই অনেকে ক্ষুব্ধ।ট্রমা কেয়ার সেন্টারের জন্য ট্রমা কেয়ার সেন্টারের ভেতর পৃথকভাবে এক্সরে মেশিন,আল্ট্রা সোনোগ্রাফি মেশিন রোগ পরীক্ষার এইসব মেশিনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।সিটি স্ক্যান, এমআরআই- এইসব মেশিন ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে চালু রাখা প্রয়োজন। এমআরআই বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়।সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এমআরআই চালু থাকে।ছুটির দিন বন্ধ থাকে। দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর রোগ পরীক্ষা তৎক্ষণাৎ প্রয়োজন পড়লেও এমআরআই মেশিনে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না।সিটি স্ক্যান নিয়ে রোগীকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।খুব দ্রুত রোগীর রোগ পরীক্ষা না হলে চিকিৎসকরা সঠিক চিকিৎসা পরিষেবাও শুরু করতে পারছেন না।ট্রমা কেয়ার সেন্টারের সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য একজন নোডাল অফিসার থাকা দরকার।এজিএমসিতে ডা. ভাস্কর মজুমদার নামে একজন নোডাল অফিসার থাকলেও ট্রমা কেয়ার সেন্টারে পা দেন না বলে অভিযোগ।ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আঘাতপ্রাপ্ত রোগী আসলে ট্রমা কেয়ার সেন্টার থেকেই বিনামূল্যে তৎক্ষণাৎ সব ধরনের ওষুধপত্র দেওয়ার নিয়ম থাকলেও রোগীরা সেই সুবিধাও পাচ্ছেন না।প্রেসক্রিপশনের সিংহভাগ ওষুধপত্র রোগীর আত্মীয়কে কিনে এনে দিতে হচ্ছে বলে রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ। দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর শরীরে সেলাই করার প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসককেই সেলাই করতে হবে- এই নিয়ম।কিন্তু রাত ১০টার পর রোগী আসলে রোগীর আঘাতের জায়গায় কোনও কোনও সময় চিকিৎসকরা সেলাই করছেন না বলেও অভিযোগ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রেসার দিয়ে ক্ষতস্থানও কাটাস্থানে ড্রেসিং করানোর নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না এখানে।রাত ১০টার পর প্রতিদিন হাসপাতালের সুলভের সুইপার দিয়ে ড্রেসিং করা হয় বলেও ট্রমা কেয়ার সেন্টার সূত্রের খবর।প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে রাত ১০টার পর সুইপার তথা হাসপাতালের বেসরকারী সাফাইকর্মী দিয়ে রোগীকে ড্রেসিং করা হচ্ছে।
ট্রমা সেন্টারে ২৪ ঘন্টা অর্থোপেডিক্স, সার্জিক্যাল, চক্ষু, দাঁত,নিউরোসার্জন- এসব বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। কোনও কোনও বিভাগের চিকিৎসককে ফোন করে কল দিয়ে ট্রমা কেয়ারে রোগীর চিকিৎসার জন্য আনা হচ্ছে। রাত ১০টার পর কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ট্রমাতে না এসে বাড়ি থেকে ফোনে ট্রমায় সংশ্লিষ্ট জুনিয়র চিকিৎসককে রোগীর কীভাবে চিকিৎসা চলবে তার পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ।প্রতি শিফটে ৫ জন করে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ট্রমাতে থাকার কথা থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না।মাত্র দুজন করে প্রতি শিফটে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক থাকছেন। ইনটার্নসের দিয়ে ট্রমা চিকিৎসা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সিনিয়র চিকিৎসকদের ট্রমাতে এসে রোগী দেখার দাবি উঠেছে।