মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
বিরোধী অভিযোগে নিরুত্তর মুখ্যমন্ত্রী!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে
বেসরকারী শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং ওই মেডিকেল কলেজকে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল রেফারেল হাসপাতাল ব্যবহারের অনুমতি প্রদান ইস্যুতে শুক্রবার উত্তাল হলো বিধানসভা।ব্যাপক বাকবিতণ্ডা,বিরোধীদের ওয়েলে নেমে স্লোগান এবং ওয়াকআউট সবই হয়েছে শান্তিনিকেতন ইস্যুকে কেন্দ্র করে।সবথেকে বিস্ময়ের ঘটনা হলো,এই ইস্যুতে বিরোধীদের উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলির একটিও জবাব দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা দাবি তুলেছেন একটি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের।এই কমিটি শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপনে কোনও অনিয়ম হয়েছে কিনা? রাজ্যের এবং রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে কিনা?ইত্যাদি নানা বিষয়ে তদন্ত করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি রিপোর্ট জমা করবে।যাতে এই বেসরকারী মেডিকেল কলেজ স্থাপন নিয়ে চরম দুর্নীতি হয়েছে বলে রাজ্যবাসীর মধ্যে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা যাতে দূর করা যায়।এই দাবিতে বিরোধীরা বিধানসভায় দুই দফা সরব হলেও, মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি মানেননি।এ নিয়ে বিরোধীরা অধিবেশনের প্রথম পর্বে সরব হওয়ার পর অধ্যক্ষ সভা মুলতবি ঘোষণা করে দেন।বেলা আড়াইটায় দ্বিতীয় পর্বে অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীরা একই দাবিতে পুনরায় সরব হয়।এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা চলে।অধ্যক্ষ বার বার বাধা দেওয়ায় এবং পরবর্তী কর্মসূচিতে চলে যাওয়ায় বিরোধীরা ওয়েলে নেমে দাবি জানাতে থাকে।সেখানে দাঁড়িয়েই বেশ কিছুক্ষণ স্লোগান দিতে থাকে।শেষে ২.৪৫ মিনিটে বিরোধীরা ওয়াকআউট করে এবং ২.৫৫ মিনিটে আবার সভায় প্রবেশ করে।তবে সব থেকে অবাক করার ঘটনা হলো, শান্তিনিকেতন কাণ্ডে বিরোধীরা যখন একের পর এক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করছিল,ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে আজকেও কাউকে দেখা গেল না মুখ্যমন্ত্রীর সপক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে। এদিন বিধানসভায় ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের শিক্ষণ হাসপাতাল হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল ব্যবহারের অনুমতি সম্পর্কিত দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশটি উত্থাপন করেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। এই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিবৃতি দিয়েছেন।বিবৃতি প্রদানকালে মুখ্যমন্ত্রী বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান,স্বাধীন ট্রাস্ট যা কলকাতার অ্যাডিশনাল রেজিস্টার অফ অ্যাসিওয়েন্স।এর অধীনে নিবন্ধিত এবং বোলপুর, পশ্চিমবঙ্গে একটি মেডিকেল কলেজ চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে,তারা ১২ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ত্রিপুরার মেডিকেল এডুকেশন ডিরেক্টরের কাছে আবেদন জমা দেয়,যাতে ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের কিছু অংশ, একটি গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং একটি নগর স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়।ট্রাস্ট উল্লেখ করেছে যে তারা পশ্চিম ত্রিপুরার রাণীরখামার,মধুবন এলাকায় ২০.৪০ একর জমি কিনেছে, যেখানে তারা ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ নামক একটি মেডিকেল কলেজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
একটি সিনিয়র অফিসারদের দল ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে রাণীরখামার, মধুবন, আগরতলাতে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন এবং দেখেন যে স্বাধীন ট্রাস্ট ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজ, হোস্টেল এবং তাদের নিজস্ব ৫০০ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু করেছে,যা আগামী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১,০০০ শয্যার একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল সম্পূর্ণকরার পরিকল্পনা করেছে।সম্প্রতি তারা ২০২৪ সালের আগষ্ট থেকে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে (টিএসএমসি)-এ বহির্বিভাগীয় পরিষেবা (ওপিডি) শুরু করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ স্বাধীন ট্রাস্টের নিবন্ধন সম্পর্কিত সমস্ত নথি এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের মান অনুযায়ী একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের যোগ্যতা যাচাই করেছে এবং আইন বিভাগের মতামতও সংগ্রহ করেছে।
ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন ২৯ জুন ২০২৪ তারিখে প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ এবং শিক্ষণ হাসপাতালের সুবিধা পরিদর্শন করার পর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১৫০টি এমবিবিএস আসনে ভর্তি করার ‘অনুমতি’ (Letter of Permission)প্রদান করেছে।ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় (একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজকে ‘সম্মতি’ (Consent of Affiliation) দিয়েছে।
তাহলে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, ত্রিপুরা সরকার, স্বাধীন ট্রাস্টের আবেদনের বিষয়টি ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতি অনুযায়ী বিবেচনা করে এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন দ্বারা নির্ধারিত ‘প্রয়োজনীয় শংসাপত্র’ (Essentiality Certificate)২৭ জুন,২০২৪ তারিখে স্বাধীন ট্রাস্টকে শর্ত সাপেক্ষে জারি করা হয়েছে। শর্তগুলি কী কী সেগুলিও মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বিবৃতির পর বিধায়ক শ্রী বর্মণ বলেন, মেডিকেল কলেজ হোক, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।আপত্তি থাকার কথাও নয়।কিন্তু এই মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাব তো মুখ্যমন্ত্রীকেই দিতে হবে।স্বাধীন ট্রাস্টের মালিককে সিবিআই বেশ কয়েকবার জেরা করেছে ৫. গরু পাচার বাণিজ্য সহ আরও একাধিক অভিযোগে। যদি ভবিষ্যতে এই ট্রাস্ট এ বন্ধ হয়ে যায়, তখন কী হবে? কেননা, মলয় পিট-এর গুরুদেব হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডল। যিনি এখন তিহার জেলে আছেন।সকলেই জানেন। এই ব্যাপারে সরকারের কোনও পরিকল্পনা আছে কি?সুদীপবাবু বলেন, এতবড় একটি সিদ্ধান্ত রাজ্য কেবিনেট থেকে হবে না? কেবিনেটে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে কি?জানতে চান সুদীপবাবু। ইউনিভার্সিটি রিপোর্ট দিয়েছে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মতো এখনও কোনও পরিকাঠামোই নেই।অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিকে জোর করা হয়েছে রিপোর্ট বদল করে অনুমতি দেওয়ার জন্য। কেন এসব হচ্ছে? কারা এসব করছে।মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেবেন না।
২০ থেকে ২৫ বছর ধরে মেডিকেল কলেজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে,এমন কোনও বেসরকারী সংস্থাকে আমরা আমন্ত্রণ জানাতে পারতাম। অথচ সরকার যে সংস্থাকে সুযোগ করে দিল, বোলপুর শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ৮ থেকে এখনও প্রথম ব্যাচই পাস আউট হয়নি।অনুব্রত মণ্ডলের মতো মলয় পিঠও গুড় বাতাসা খাইয়েছে কিনা জানি না। সুদীপবাবু বলেন, ত্রিপুরা – শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের ওয়েবসাইটে অধ্যাপক,সহকারী অধ্যাপকের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে,তার থেকে আটটি ডিপার্টমেন্টের তালিকা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপকের ঘাটতি রয়েছে।
তাছাড়া এই তালিকার কতটা বাস্তবতা রয়েছে, সেটা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত এবং নো অবজেকশন পাওয়ার আগেই জায়গা ক্রয় করে নেওয়া হয়েেেছ এবং বিল্ডিং নির্মাণ শুরু এ হয়েছে।এটা কীভাবে এবং কোন জাদুবলে?জমি ক্রয় করা নিয়েও বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে।কী এমন পরিস্থিতি হলো যে, সবকিছু এতটা দ্রুত হয়ে গেল এবং গোপনে?জানতে চান সুদীপবাবু। তিনি বিধানসভার যৌথ কমিটি গড়ার দাবি জানান।
বিরোধী দলনেতা জিতেন চৌধুরীও একই সুরে একাধিক অভিযোগ তুলে সরকারকে বিদ্ধ করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চান। বিরোধী নেতা বলেন,মলয় পিটের গুরুদেব তিহার জেলে বন্দি।মলয় পিটও সিবিআই স্ক্যানারে রয়েছে। রাজ্যে মেডিকেল কলেজ হচ্ছে সেটা তো সকলের জন্য সুখবর। অথচ সরকারের পক্ষে কোনও ঘোষণা নেই। নীরবে জায়গা ক্রয় থেকে সব কিছু হয়ে গেল। গত বিধানসভা অধিবেশনেও আমি এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী লিখিত জবাব দিয়ে জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজ করার প্রশ্নই ওঠে না। এই জবাব দিয়েছিলেন মার্চ মাসে। তিন-চার মাসের মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটে গেল যে রকেট গতিতে সবকিছু হয়ে গেল।এখানে শুধু আমাদের রাজ্যেরই নয়,বহি:রাজ্যের ছেলেমেয়েরাও আসবে। কোটি কোটি টাকা নেবে। ফলে সবকিছু সঠিক পথে হওয়া উচিত ছিল।তাই সকলের সন্দেহ হতে বাধ্য। বঙ্গের বিরোধী দলনেতাও এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন। জিতেনবাবুও অনিয়মের তদন্তে যৌথ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে সরব হন।
বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, রেফারেল হাসপাতালকে বেসরকারী মেডিকেল কলেজ সংস্থার হাতে দেওয়ার নজির বহি:রাজ্যে আছে কিনা • জানতে চান।তার বক্তব্য, বহি:রাজ্যে কোথাও সরকারী স্টেট রেফারেল হাসপাতালকে বেসরকারী মেডিকেল কলেজ সংস্থার হাতে দেওয়ার নজির নেই। জেলা হাসপাতাল দেওয়া যেতে পারে।তাছাড়া শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া কি নীট-এর মাধ্যমে হবে?যদি নীট-এর মাধ্যমে হয় তাহলে রাজ্যের ৫০ শতাংশ ছাত্র কী করে ভর্তি হবে? জানতে চান গোপালবাবু।এরপর বিরোধীরা যৌথ কমিটির দাবিতে সরব হলেও – মুখ্যমন্ত্রী নীরব থাকেন। কোনও অভিযোগেরই স্পষ্টীকরণ দেননি এবং খণ্ডন করেননি।শেষে বিরোধী নেতা বলেন, অসম্মতি হওয়া মানেই তো গলদ রয়েছে। এরপর বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। অধ্যক্ষ অনড় থাকায় ২.৪৫ মিনিটে ওয়াকআউট করে বিরোধীরা।