ফের সুদীপের নিশানায় মন্ত্রী বিকাশ, মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা অধিবেশনের পর মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি এবং জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও অভিযোগ তুলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা।সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবুর অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ও তোলপাড় শুরু হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবু সরাসরি বর্তমান সরকারকে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যায়িত করেন।শুধু তাই নয়, সুদীপবাবু বলেন,এর পরও কি মুখ্যমন্ত্রীকে ভালো মানুষ, সৎ এবং ভদ্রলোক বলতে হবে?
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস বিধায়ক বেশ কয়েকটি বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেন।তিনি বলেন,জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা এবং মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডির একাধিক দুর্নীতির বিষয় বিধানসভায় তুলে ধরেছিলাম।বলেছিলাম এসবের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীরব!প্রশ্ন হচ্ছে,এইসব কি মুখ্যমন্ত্রীর অগোচরে হচ্ছে? জানতে চান কংগ্রেস বিধায়ক শ্রীবর্মণ।তিনি রাজ্যের জনজাতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবি’র দেওয়া ১৪০০ কোটি টাকা নজিরবিহীনভাবে লুট হয়েছে বলে মন্ত্রী বিকাশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন বিধানসভায়। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবু রাজধানীর এডভাইজার চৌমুহনীস্থিত রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রয়াত ইলালোধের বাড়িটি ৭ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করা নিয়েও বড় ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।
শুধু বিকাশ দেববর্মাই নয়, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি’র বিরুদ্ধেও নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শ্রীবর্মণ। তিনি বলেন, ওএসডি এখন ঘন ঘন কলকাতা,গুয়াহাটি সফর করছেন।এই সফরের পিছনে কি কারণ, সেটাও তুলে ধরেন কংগ্রেস বিধায়ক।তিনি বলেন, আগরতলা জিবি হাসপাতালের ২০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে।এই কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৯২ কোটি টাকা। এছাড়াও জিবি হাসপাতালে গড়ে উঠবে ডেন্টাল কলেজ।বর্তমানে আইজিএম হাসাপাতালো
যে ডেন্টাল কলেজটি রয়েছে।পরিকাঠামো নির্মাণের পর সেখানেই স্থানান্তরিত হবে ডেন্টাল কলেজ।এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা।এই দুটি কাজের জন্য টেন্ডার জমা দিয়েছে দুটি মাত্র সংস্থা।একটি কলকাতার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি গ্রুপ।এই সংস্থাটির মালিক হচ্ছে কলকাতার নাইটেঙ্গল হাসপাতাল গ্রুপ। অপরটি গুয়াহাটির সংস্থা ত্রিবিণী কনস্ট্রাকশন।সুদীপবাবু বলেন,এই দুটি নির্মাণ কাজে ওই দুইটি সংস্থা একে অপরকে সার্পোট করেছে। ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল বিজ্ঞ খোলা হয়েছে।ফাইনান্সিয়াল বিড এখনো খোলা হয়নি। সুদীপবাবু বলেন, আমার কথা লিখে রাখুন। ওই দুটি সংস্থাই কাজ করবে হাই রেইটে।ফলে ওএসডিবাবু কেন ঘন ঘন কলকাতা, গুয়াহাটি দৌড়াচ্ছেন তা বুঝতে কারোর বাকি নেই। বিধানসভাতেই আমি ফোর টু সিক্স পার্সেন্ট কমিশনের কথা বলেছিলাম।এছাড়াও সোনামুড়া থেকে বিলোনীয়া বড় পাথরী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রাস্তার জন ২১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডার হয়ে গেছে। সেখান থেকেও কমিশন হাতানোর অভিযোগ তুলেছেন সুদীপবাবু।
এদিকে,জিবি হাসপাতালে দুটি বড় নির্মাণ কাজের টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেছে,এই দুটি কাজের জন্য আগেও একবার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল।কিন্তু ওই সময় টেন্ডার নিয়ে নিগো মাফিয়াদের মধে বিরোধ বাঁধে এবং পুলিশে মামলা হওয়ায় উপক্রম হয়।শেষ পর্যন্ত ঝামেলা এড়াতে আগের টেন্ডার বাতিল করে, নতুন করে আবার টেন্ডার ডাকা হয়। তনে অভিযোগ, এবার টেন্ডার ডাকার আগেই সব কিছু নির্ধারণ করে নেওয়া হয়, কার টেন্ডার জমা দেবে, আর কারা কোন্ কাজ করবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি কাজের জন্য, ওই দুটি সংস্থাই সমঝোতার মাধ্যমে একে অপরকে সার্পোট করে টেন্ডার জমা দিয়েছে।দুইটি সংস্থাই সমঝোতার মাধ্যমে একটিতে কম অপরটিতে বেশি দর উল্লেখ করে দরপত্র জমা দিয়েছে।অভিযোগ, মানিক জামানায় এখন এই ভাবেই নিগো বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।টেন্ডারের আগেই নির্ধারণ হয়ে যাচ্ছে কে কাজ পাবে।এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবু শুধু আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে নয়। আরও একাধিক অভিযোগ তুলেন।তিনি বলেন, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার শেষ দিন মুখ্যমন্ত্রী বন্যার জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজেন্ন ঘোষণা দিয়েছেন।মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা সম্পূর্ণ বে-আইনি বলে দাবি করেন শ্রীবর্মণ। কেননা,এতবড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হলে মন্ত্রিসভা- অনুমোদন অত্যন্ত জরুরি।মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে এড়িয়ে, মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াই এই ঘোষণা দিয়েছেন।যা সম্পূর্ণ বেআইনি।এমন কাজ মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেন না বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও এ দিন আরও একাধিক বিষে অভিযোগের আঙুল তুলেন সুদীপবাবু। সুদীপ বর্মণের এই সাংবাদিক সম্মেলনের পর রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও। শুধু তাই নয়, নানা দুর্নীতি ইস্যুতে এবার বিধানসভাতেও মুখ্যমন্ত্রীর
পাশে কাউকে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। যা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল।