একশ দিনে বড় সিদ্ধান্ত!!

 একশ দিনে বড় সিদ্ধান্ত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন তৃতীয় এনডিএ সরকারের একশ দিন পূর্ণ হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর।তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো,ওই একশ দিনের মাথাতেই বহু চর্চিত ‘ওয়ান ন্যাশন ওয়ান ইলেকশন’-এর অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।এবার আর বছর বছর নির্বাচন নয়।একসঙ্গে হবে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন।এই নির্বাচনের একশ দিনের মধ্যে হবে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের ভোট।প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি এমনই প্রস্তাব দিয়েছে।আর সেই প্রস্তাবেই বুধবার সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। খবরে প্রকাশ,সংসদের আগামী শীতকালীন অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত বিল পেশ করা হবে।
এক দেশ এক ভোট কার্যকরের দিশা নির্দেশিকা খুঁজতে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল মোদি সরকার।বিভিন্ন বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগেই গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সব ক’টি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আটখন্ডে বিভক্ত আঠারো হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল কোবিন্দ কমিটি।বুধবার তৃতীয় মোদি সরকারের একশ দিন পূর্ণ হওয়ার দিনে কোবিন্দ কমিটির সুপারিশে সিলমোহর দিয়ে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অভিমত।খবরে প্রকাশ, শুধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই নয়,নীতি আয়োগ, আইন কমিশন,নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি।
তবে বুধবার ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের সুপারিশে কেন্দ্রীয় সরকারের সিলমোহর পড়তেই জাতীয় রাজনীতি ফের তপ্ত হয়ে উঠেছে।বিরোধী দলগুলি এই নিয়ে বড় ধরনের আপত্তি তুলেছে।কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর।তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদি সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধীদের অভিযোগ।শুধু তাই নয়, বর্তমান ব্যবস্থায় যেটুকু বৈচিত্র রয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় তা ভেঙে পড়বে বলে বিরোধীদের অভিমত। তাছাড়াও বিরোধীরা মনে করে, এটি বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল। বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতেই এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।যদিও বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ এবং আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে মোদি সরকার।সরকারের যুক্তি এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণবিধির জন্য বারবার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না।একটি ভোটার তালিকাতেই দুটি নির্বাচন করা যাবে।এতে সরকারী কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজের চাপ কমবে।এমন আরও বেশ কিছু যুক্তি এবং ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে,’এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাস হলেও এখনও অনেক জটিলতা রয়ে গেছে।সেগুলি কাটিয়ে উঠতে হবে।এই মুহূর্তে সংসদে মোদি সরকারের যা সংখ্যাবল তাতে এই প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে জোট শরিকদের তো বটেই, এনডিএ জোটের বাইরেও একাধিক দলের সমর্থন জোগাড় করতে হবে। তাছাড়া, ভারত বিশাল দেশ। ২৯ টি রাজ্য, ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।প্রচুর রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর যখন দেশে প্রথম নির্বাচন চালু হয়, তখন দেশে এত রাজ্য এবং এত রাজনৈতিক দল ছিল না।সেসময় ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করাটা যতটা সহজ ছিল, এখন ততটাই কঠিন।এখন প্রতিবছর দেশের কোনও না কোনও রাজ্যে ভোট হচ্ছে। বিধানসভার মেয়াদও পৃথক পৃথক।তার আগে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। একসাথে বিশাল পরিকাঠামো এবং সরকারী কর্মীর প্রয়োজন হবে।লাগবে একসাথে প্রচুর নিরাপত্তা রক্ষী।ফলে বিষয়টি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের।মোদি সরকার সেই চ্যালেঞ্জ কতটা মোকাবিলা করতে পারবে সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। তবে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরে মোদি সরকার কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে-এই দাবি করাই যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.